Advertisement
E-Paper

বিভেদ কেন, প্রশ্ন কোর্টের

দুর্গাপুজোর বিসর্জন নিয়ে মামলার শুনানি চলাকালীন বুধবার সরকারের উদ্দেশে তাদের প্রস্তাব, শান্তি-সম্প্রীতির বাতাবরণে দুই সম্প্রদায়কে নিজের নিজের ধর্ম পালন করতে দেওয়া হোক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:২৬
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

যে সরকার রাজ্যে নজরকাড়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে বলে দাবি করে, তাদের পক্ষে নিষেধাজ্ঞা জারি করে কোনও বিভেদ রেখা টানা উচিত হবে না বলে মন্তব্য করল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতের মতে, তাতে সম্প্রীতির বাতাবরণ নষ্ট হবে। দুর্গাপুজোর বিসর্জন নিয়ে মামলার শুনানি চলাকালীন বুধবার সরকারের উদ্দেশে তাদের প্রস্তাব, শান্তি-সম্প্রীতির বাতাবরণে দুই সম্প্রদায়কে নিজের নিজের ধর্ম পালন করতে দেওয়া হোক। আজ, বৃহস্পতিবার এই মামলার রায় ঘোষণার কথা।

এ বার বিজয়াদশমীর পরের দিন, ১ অক্টোবর, মহরম। সরকার প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, দশমীর দিন সন্ধে ৬টা পর্যন্ত বিসর্জন দেওয়া যাবে। আর একাদশীর দিন বন্ধ থাকবে প্রতিমা নিরঞ্জন। এর প্রতিবাদে হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে তিনটি জনস্বার্থ মামলা চলছে। শুনানি চলাকালীন রাজ্য সরকারের এজি কিশোর দত্ত জানান, দশমীর দিন রাত ১০টা পর্যন্ত বিসর্জন দেওয়া যাবে। মামলার আবেদনকারীদের বক্তব্য, পঞ্জিকা অনুযায়ী ৩০ তারিখ রাত ১টা ২৬ মিনিট পর্যন্ত দশমী। সেই সময় পর্যন্ত বিসর্জন দেওয়া যাবে না কেন? পাশাপাশি, অন্য একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মিছিলের জন্য কেন একাদশীর দিন বিসর্জন বন্ধ থাকবে, এই প্রশ্নও তোলেন তাঁরা।

নবান্নের খবর, সরকার মহরমের দিন বিসর্জন বন্ধ রাখার নির্দেশিকা জারি করলেও তা এখনও জেলা প্রশাসনকে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানায়নি। সরকারের এক কর্তা জানান, হাইকোর্টের মামলার ফলাফল দেখেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।

এ দিন মামলার চতুর্থ দিনের শুনানিতে এজি বলেন, সংবিধানে ধর্ম পালনের অধিকার মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। কিন্তু সংবিধানই বলছে, আইনশৃঙ্খলাকে অগ্রাধিকার দিয়ে মৌলিক অধিকার ভোগ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা রাজ্যের দায়িত্ব। তাই ধর্মীয় মিছিলের উপর প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে। পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল আইন বা কলকাতা পুলিশ আইনেও এই নিয়ন্ত্রণের কথা বলা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টও আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি রাজ্যের বলেই জানিয়েছে। তাই এতে আদালতের হস্তক্ষেপের দরকার নেই। সম্প্রীতি বজায় রাখতেই রাজ্য সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এজি-র বক্তব্য শোনার পরেই সরকারকে কার্যত ভর্ৎসনা করে অস্থায়ী প্রধান বিচারপতি রাকেশ তিওয়ারি এবং বিচারপতি হরিশ টন্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি তিওয়ারি বলেন, ‘‘নিয়ন্ত্রণ আর নিষেধাজ্ঞা এক নয়। ১ অক্টোবর বিসর্জনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে রাজ্য। নিয়ন্ত্রণ করা যায়, নিষেধাজ্ঞা জারি করা যায় কি?’’ এর পরেই তিনি বলেন, বিসর্জন বা ধর্মীয় মিছিল কোন পথে যাবে, সেটা নিয়ন্ত্রণ করাই প্রশাসনের কাজ। তা ছাড়া, অন্য ধর্মীয় মিছিল বেরনোর সঙ্গে চাঁদ ওঠার যোগ রয়েছে। বিসর্জন তো পঞ্জিকা মতে আগেই ঠিক হয়ে থাকে। একই দিনে বিসর্জন ও অন্য ধর্মের মিছিল বেরনো বিরলতম ঘটনা কিনা, এজি-র কাছে তা জানতে চান বিচারপতি তিওয়ারি।

বিচারপতি টন্ডন বলেন, ‘‘যে কোনও আশঙ্কার একটা ভিত্তি থাকে। বিসর্জন নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারির পিছনে কোনও আশঙ্কার ভিত্তি রয়েছে কি? তা না থাকলে অহেতুক কোনও আশঙ্কার কথা ভেবে খেয়ালখুশি মতো কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না!’’ বিচারপতি তিওয়ারিও বলেন, ‘‘কোনও ভাবনার বশে রাজ্য তার মত চাপিয়ে দিতে পারে না।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যখন বার বার বলেন, এ রাজ্যে সব ধর্মের মানুষ শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রেখে একসঙ্গে বসবাস করে, তখন এই বিজ্ঞপ্তির মানে কী?’’

Festival High court Kolkata high coury হাইকোর্ট সম্প্রীতি কলকাতা
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy