দীর্ঘ আট বছরের প্রতীক্ষার অবসান। আগামী ৬ নভেম্বর থেকে স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি উচ্চ প্রাথমিকের কাউন্সেলিং শুরু করতে চলেছে। সেই কাউন্সেলিয়ে অংশ নিতে মুখিয়ে থাকা চাকরিপ্রার্থীরা শুধু এ রাজ্য থেকে নয়, ভিন্ রাজ্য এমনকি বিদেশ থেকেও আসবেন বলে এসএসসি সূত্রে জানা গিয়েছে।
বিবাহ সূত্রে ইউরোপের দু’টি দেশে থাকা দুই চাকরিপ্রার্থী বুধবার ফোনে জানিয়েছেন, বন্ধুদের মারফত কাউন্সেলিংয়ের তারিখ জানতে পেরে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরাও কাউন্সেলিংয়ে অংশগ্রহণ করবেন। ভিন্ন রাজ্যে থাকা উচ্চ প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরাও জানাচ্ছেন, দীর্ঘ আট বছর পরে শেষ পর্যন্ত কাউন্সেলিংয়ের তারিখ জানতে পেরে তাঁরাও নিশ্চিন্ত।
ইটালির ভেনিসের পশ্চিমে ছোট শহর পাডুয়া। সেখান থেকে স্বাতী দে জানান, তাঁর স্বামী ইটালির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কাজ করছেন। গবেষণার সেই কাজ শেষ হয়ে গেলে তাঁরা দেশে ফিরতে পারবেন। তাই কাউন্সেলিংয়ের সুযোগ যখন এসেছে, সেই সুযোগ হাতছাড়া করতে রাজি নন তিনি। বাঁকুড়ার ইন্দাসের বাসিন্দা স্বাতী জানাচ্ছেন, ২০১৫ সালে বিজ্ঞপ্তি দেখে যখন উচ্চ প্রাথমিকের জন্য আবেদন করেছিলেন তখন তাঁর বিয়ে হয়নি। তার পরে আট বছর ধরে প্রতীক্ষার মধ্যে বিয়ে। স্বাতী বলেন, “ইটালিতে থাকলেও ধর্মতলার মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির পাদদেশে থাকা আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগোযোগ রয়েছে। রাজপথে ওঁদের প্রতিটি আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছি।” স্বাতী জানান, তিনি অপেক্ষমান তালিকায় থাকা চাকরিপ্রার্থী। স্বাতীর কথায়, “গত আট বছরে দু’বার ইন্টারভিউ দিলেও চাকরি পাইনি।’’
নাম জানাতে অনিচ্ছুক বিবাহ সূত্রে ইংল্যান্ডে থাকা উচ্চ প্রাথমিকের আর এক চাকরিপ্রার্থী জানিয়েছেন, মেধা তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। কাউন্সেলিং শুরু হচ্ছে জানতে পেরে তিনি কলকাতার টিকিট কাটছেন। কলকাতার বাসিন্দা ওই চাকরিপ্রার্থী ফোনে বলেন, “জীববিদ্যায় এমএসসি-র পরে বিএড করেছি। স্বামী আইটি-তে চাকরি করেন। বদলি হয়ে তাঁর আবার দেশে ফেরার সম্ভবনা রয়েছে। আমরা দেশে ফেরার সুযোগ পেলে আমি কেন চাকরি করব না? তাই কাউন্সেলিয়ের সুযোগ যখন এসেছে তখন সেই সুযোগ নিতেই হবে।”
বেঙ্গালুরুতে আইটি-তে চাকরিরত স্বামীর সঙ্গে থাকেন উচ্চ প্রাথমিকের আর এক চাকরিপ্রার্থী সর্মিতা ঘড়ুই। হুগলির খানাকুলের বাসিন্দা সর্মিতা বলেন, “আমার নাম মেধা তালিকায় রয়েছে। যখন উচ্চ প্রাথমিকের লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলাম তখন আমার বিয়ে হয়নি। দীর্ঘ আট বছরে অনেক কিছু বদলে গেলেও চাকরিটা হল না। এত দিন পরে কাউন্সেলিং হবে। আমাকে অংশ নিতেই হবে। চাকরি পেলে আমি ফিরে আসব।” পশ্চিমবঙ্গ আপার প্রাইমারী চাকরিপ্রার্থী মঞ্চের নেতা সুশান্ত ঘোষও জানিয়েছেন, মেধা তালিকায় নাম থাকা যোগ্য প্রার্থী, যাঁরা দেশের অন্য প্রান্ত বা বিদেশে থাকেন, তাঁরা নিয়মিত মঞ্চের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। কাউন্সেলিংয়ের তারিখ ঘোষণার কথা শুনে তাঁরা অনেকেই রাজ্যে আসতে চাইছেন।
এসএসসি অবশ্য জানিয়েছে কাউন্সেলিং হওয়া মানেই কিন্তু চাকরি নয়। কাউন্সেলিংয়ের দিন সুপারিশপত্র দেওয়া হবে না। প্রার্থীরা শুধু তাঁদের স্কুল নির্বাচন করতে পারবেন। এ নিয়ে মামলা চলছে। ফলে আদালতের নির্দেশে সুপারিশপত্র দেওয়া হবে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)