E-Paper

নববর্ষে বঙ্গসম্মেলন পটনায়, তবে চাকরিপ্রার্থী শিক্ষকদের

বছরের পর বছর পশ্চিমবঙ্গে স্কুল শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার চাকরিহারা শিক্ষকদের দুর্গতির খবর ইতিমধ্যে দেশে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে।

সমীরণ পাণ্ডে, ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:৩৪

— প্রতীকী চিত্র।

এমন পয়লা বৈশাখ জীবনে আসবে সচরাচর কে আর ভেবে থাকেন! বছরের প্রথম দিন পড়শি রাজ্যে কাঠফাটা রোদে ঠায় দাঁড়িয়ে পরীক্ষা পাশের শংসাপত্রের জন্য প্রতীক্ষায় শামিল এক ঝাঁক তরুণ-তরুণী। ভিড় দেখে মনে হতেই পারে ছোটখাটো বঙ্গসম্মেলন। পটনার তিনটি স্কুলের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হল ওঁদের।

বছরের পর বছর পশ্চিমবঙ্গে স্কুল শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাজ্যের প্রায় ২৬ হাজার চাকরিহারা শিক্ষকদের দুর্গতির খবর ইতিমধ্যে দেশে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। এই আবহে বিহার বিদ্যালয় পরীক্ষা সমিতির অধীনে স্কুল শিক্ষক নিয়োগ বা স্টেট পরীক্ষার আশাটুকু খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরেছেন ওই পরীক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার, পয়লা বৈশাখের সকালে পটনার রাজেন্দ্রনগরে রাজকীয়কৃত বালক উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে রোদে হাঁপাচ্ছিলেন পূর্ব বর্ধমানের রায়নার বাসিন্দা পারমিতা ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার মিলন কর, পুরুলিয়ার বলরামপুরের রঞ্জিত মণ্ডল, বীরভূমের নুসরত সুলতানারা। পরীক্ষার প্রথম ধাপে উত্তীর্ণ হওয়ার পরে চিঠি পেয়ে সরকারি নির্দেশমাফিক এসেছেন শংসাপত্র হাতে নিতে। অনেকেই পাঁচ-ছ’বছর আগে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় পাশ করে বসে আছেন। কেউ তার পরে বিএড, এমএডও পাশ করেছেন। কেউ কেউ আবার পিএইচ ডি-ও করছেন। কিন্তু একটি নিশ্চিন্ত চাকরি পাওয়ার ম্লান আশাটুকু তাঁদের পটনায় টেনে এনেছে। পারমিতা, মিলনেরা বললেন, ‘‘এটা তো আমাদের ভবিষ্যতের প্ল্যান বি-র মধ্যেও ছিল না। কিন্তু নিজের রাজ্যে স্কুল শিক্ষকের চাকরির পরীক্ষা প্রায় বন্ধ হয়ে গেলে তো এমনই ঘটবে।’’এ দিন স্টেটের পরীক্ষার্থীরা উচ্চ প্রাথমিক পর্যায়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল শিক্ষকতার শংসাপত্র নিয়ে যান। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল শিক্ষকদের শংসাপত্র নিতে অনেকেই আজ, বুধবারও লাইনে দাঁড়াবেন।

বিহারের পটনা জেলার শিক্ষা প্রশাসন একটি নির্দেশে জানিয়েছে, ১৫, ১৬,১৭,১৯, ২১, ২২ এবং ২৪ এপ্রিল ১১টি স্কুলে পরীক্ষার্থীরা শংসাপত্র নেবেন। এ যাত্রা মোট এক লক্ষ ৭১ হাজার ৩০৩ জন শিক্ষক এসেছেন। তবে চাকরি পেতে দ্বিতীয় পর্যায়ের লিখিত পরীক্ষায়ও বসতে হবে। তবে প্রথম পর্যায়ের পরীক্ষায় উতরোলে নির্দিষ্ট বয়সসীমা পর্যন্ত বার বার ওই পরীক্ষায় বসা যাবে।

এ দিন প্রধানত বাংলা এবং উর্দুর শিক্ষকতায় পাশ করা পরীক্ষার্থীরা ছিলেন। এর পরে বিজ্ঞান, ইংরেজি, অঙ্ক, সমাজ বিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের শিক্ষকেরাও থাকার কথা। অনেকেই দিনভর রোদে মাথায় গামছা জড়িয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। এর আগে স্টেট পরীক্ষা দেওয়ার সময়েও বিহারের বিভিন্ন কেন্দ্র বাংলার পরীক্ষার্থীতে ছয়লাপ হয়েছিল। ভাগ্য বা রুটিরুজির সন্ধানে বাঙালির প্রবাস যাত্রা এমনিতে নতুন কিছু বলে অবশ্য মানতে চান না সমাজ-অর্থনীতির পণ্ডিতেরা। তবু এ বার পড়শি রাজ্যে সরকারি স্কুল শিক্ষকের চাকরি পেতে বঙ্গসন্তানদের ভিড় অনেকেরই অন্য রকম লাগছে। ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ় কলকাতার অধ্যাপক অচিন চক্রবর্তী বলছিলেন, ‘‘বিহার, রাজস্থান নানা জায়গায় আগে বাঙালি স্কুল, কলেজে পড়িয়েছে বা অন্য প্রশাসনিক চাকরি করেছে। নিজের দেশের মধ্যে অন্য রাজ্যে চাকরি করা বা চাকরি খোঁজাটা এমনিতে অস্বাভাবিক বলব না। কিন্তু এখন নিজেদের রাজ্যে স্কুল শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ বছরের পর বছর। এটা একটা সঙ্কটের পরিস্থিতিই বলব।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bihar West Bengal SSC Scam Bengal SSC Recruitment Case candidates

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy