Advertisement
E-Paper

গাঁধীগিরির রাস্তা নিলেন ডাক্তাররা

তাঁদের বুকে লাগানো কালো ব্যাজে কয়েকটি জ্বলজ্বলে বাক্য। • আমাকে মারতে পারেন। মেরেও ফেলতে পারেন। মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছে, আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন! • আমরা শয়তানও নই, ভগবানও নই, আমরাও সাধারণ মানুষ। ওঁরা চিকিৎসক এবং কলকাতার বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রী অর্থাৎ হবু চিকিৎসক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৩৩
মোম-মিছিল: বুধবার এনআরএস হাসপাতাল থেকে মৌলালি পর্যন্ত হাঁটলেন ডাক্তার এবং হবু ডাক্তারেরা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

মোম-মিছিল: বুধবার এনআরএস হাসপাতাল থেকে মৌলালি পর্যন্ত হাঁটলেন ডাক্তার এবং হবু ডাক্তারেরা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

তাঁদের বুকে লাগানো কালো ব্যাজে কয়েকটি জ্বলজ্বলে বাক্য।

• আমাকে মারতে পারেন। মেরেও ফেলতে পারেন। মৃত্যুর আগে শেষ ইচ্ছে, আপনি সুস্থ হয়ে উঠুন!

• আমরা শয়তানও নই, ভগবানও নই, আমরাও সাধারণ মানুষ।

ওঁরা চিকিৎসক এবং কলকাতার বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রী অর্থাৎ হবু চিকিৎসক।

কেন লাগিয়েছেন এই সব ব্যাজ?

‘‘রোগীকে পরিষেবা দিতে গেলে এখন আমাদের ভয় করে। না জানি কখন মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়,’’ প্রকাশ্যেই জানাচ্ছেন ওঁরা। ওঁদের ভয় রোগীর আত্মীয় বা রোগীর সঙ্গে আসা অন্যদের।

চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে বাড়তে থাকা অবিশ্বাস, ভয় আর অশ্রদ্ধার পরিবেশ পাল্টে দিতে চিকিৎসকেরা এখন মরিয়া। রোগী-চিকিৎসক যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে বড় ত্রুটি থেকে যাচ্ছে, তা স্বীকার করেই সেই ত্রুটি শোধরাতে চাইছেন তাঁরা। এক প্রবীণ চিকিৎসকের কথায়, ‘‘আমরা ভয় পেয়ে সিঁটিয়ে থাকলে আদতে রোগীদেরই ক্ষতি। আমরা সেই ভয়টাই কাটিয়ে উঠতে চাইছি।’’

আরও পড়ুন: রামনবমী বিজেপির নাকি, পাল্টা আক্রমণে মুখ্যমন্ত্রী

এবং ভয়টা তাঁরা জয় করতে চাইছেন গাঁধীগিরির পথেই। গাঁধীগিরি যদি ভয় জয় করার রাস্তা হয়, প্রতিবাদ জানানোরও প্রশস্ত রাস্তা সেটাই। হাসপাতাল-নার্সিংহোমে চিকিৎসকদর উপরে হামলার প্রতিবাদে জোটবদ্ধ হতে ওঁরা তৈরি করেছেন ‘মেডিকোস এগেনস্ট ভায়োলেন্স’ নামে একটি মঞ্চ। বুধবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের প্রেক্ষাগৃহে সভা করল ওই সংগঠন। পরে মোমবাতি মিছিলে হাঁটলেন ডাক্তার, হবু ডাক্তারেরা।

সভা-মিছিল হল এমন দিনে, যার আগের দিনই রানাঘাটে এক স্ত্রীরোগ চিকিৎসকের বাড়িতে হামলা হয়েছে। এ দিনের সভায় সেই প্রসঙ্গও এসেছে একাধিক বার। সাম্প্রতিক কালে চিকিৎসকদের উপরে রোগীর বাড়ির লোকেদের হামলার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। কখনও তা আর জি করে, কখনও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে, কখনও বা এসএসকেএমে।

এ দিনের আলোচনায় চিকিৎসক সৌরভ দত্ত বলেন, ‘‘এখন আর জি করে কেউ আক্রান্ত হলে নীলরতন বা ন্যাশনালের ডাক্তারদের প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায় না। কিন্তু এটাই তো এককাট্টা হওয়ার সময়।’’

হামলার প্রতিবাদে তাঁরা আর কর্মবিরতি বা হিংসাত্মক কোনও আন্দোলনে যাবেন না বলে এ দিন ঘোষণা করেছেন ডাক্তারেরা। তাঁদের কথায়, ‘‘অনশনে বসাটাও তো একটা প্রতিবাদ। চার-পাঁচটি কলেজের ডাক্তারেরা একসঙ্গে সেটা করলেও চাপ তৈরি হয় প্রশাসনের উপরে।’’

রোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য ডাক্তারি পড়ুয়াদের আলাদা প্রশিক্ষণের প্রয়োজনের কথা আলোচনাসভায় মনে করিয়ে দেওয়া হয় বারবার। বলা হয়েছে: কোন সুরে রোগীর সঙ্গে কথা বলতে হবে, কত সন্তর্পণে তাঁকে পরীক্ষা করতে হবে, কোন ভাষায় মৃত্যুসংবাদ জানাতে হবে রোগীর আত্মীয়দের, কেমন হবে সমবেদনা জানানোর ভঙ্গি— এই সবই যোগাযোগের অঙ্গ, এবং সব ক’টিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Candle March Doctors
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy