তাদের দেওয়া খাবারের মান নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কয়েক দফায় তাদের জরিমানাও হয়েছে ৪৫ লক্ষ টাকা। তার পরেও শিয়ালদহ রাজধানী, পূর্বা এক্সপ্রেস, পঞ্জাব মেল-সহ পূর্ব রেলের ১০টি দূরপাল্লার ট্রেনে খাবার সরবরাহের বরাত পেতে কোনও অসুবিধা হয়নি ওই কেটারিং সংস্থার।
শিয়ালদহ রাজধানী এক্সপ্রেসে খাবার-বিভ্রাটের পরে শাস্তির মুখে পড়েছে আর কে অ্যাসোসিয়েটস নামে ওই সংস্থা। বুধবার লোকসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু জানান, ওই ট্রেনে নষ্ট খাবার দেওয়ায় ঠিকাদার সংস্থাকে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হচ্ছে তাদের।
সোমবার রাতে শিয়ালদহমুখী রাজধানীর বেশ কয়েকটি কামরায় নষ্ট খাবার দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান যাত্রীরা। তাঁরা জানান, নষ্ট খাবার খেয়ে অনেকে বমি করতে থাকেন। বুধবার এই বিষয়ে প্রভুর সঙ্গে কথা বলেন আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়।
লোকসভায় বিষয়টি তোলেন তৃণমূল সাংসদ তাপস মণ্ডল। ট্রেনের নষ্ট খাবার খেয়ে যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়া সত্ত্বেও রেলকর্তারা এটাকে ‘ছোট ঘটনা’র তকমা দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। গলা মেলান তৃণমূলের অন্যেরাও। রেল পরিষেবার সার্বিক দুরবস্থা নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়ে যায়।
প্রভু পরে জানান, সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি জেনেই আর কে অ্যাসোসিয়েটসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাদের বরাত বাতিল করা হবে না কেন, ১৫ দিনের মধ্যে তার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে ওই সংস্থাকে। রেল সূত্রের খবর, ওই সংস্থার বরাত বাতিলের প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে।
রেলেরই একটি অংশের প্রশ্ন, দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ওঠা এবং জরিমানা করা সত্ত্বেও ওই সংস্থা প্রায় দু’দশক ধরে বরাত পাচ্ছিল কী ভাবে? জবাব মিলছে না। তবে রেল মন্ত্রকেরই অনেকে জানাচ্ছেন, বরাত পেতে আর কে অ্যাসোসিয়েটস বরাবরই রেল বোর্ডের একাংশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখছিল। রেলমন্ত্রী তাদের বরাত বাতিলের নির্দেশ দেওয়ার পরেও রেল বোর্ড ওই সংস্থার বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কড়া ব্যবস্থা নিতে পারবে কি না, সেই বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন রেলের প্রাক্তন ও বর্তমান অনেক কর্তাই।
অনেক রেলকর্তার বক্তব্য, রেল পরিষেবার অন্যতম অঙ্গ ট্রেনে খাবার সরবরাহ। সেই ব্যাপারে পূর্ব রেলও যে সচেতন নয়, সেটা ফের প্রমাণিত। শিয়ালদহ স্টেশনেই ডিভিশনাল ম্যানেজারের দফতর। রাজধানীর অভুক্ত যাত্রীরা মঙ্গলবার শিয়ালদহে স্টেশন ম্যানেজারের ঘরে যখন অভিযোগ জানাচ্ছিলেন, পূর্ব রেলের সদর বা ডিভিশনাল ম্যানেজারের দফতর থেকেও কোনও কর্তা সেখানে যাননি। রেলকর্তাদের একাংশের অভিযোগ, আসলে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল পূর্ব রেল। কিন্তু যাত্রী-দুর্ভোগের কথা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় তারা আর সেটা করার সাহস পায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy