Advertisement
E-Paper

নারদ কাণ্ডে গ্রেফতার আইপিএস অফিসার মির্জা, মুকুল রায়কেও ডাকল সিবিআই

তৎকালীন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন মির্জা। নারদ কাণ্ডের ভিডিয়ো ফুটেজে এই প্রসঙ্গ এসেছে। বৃহস্পতিবার তাঁর গ্রেফতারের পরে শুক্রবার মুকুলকেও ডেকেছে সিবিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা 

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:০০
এস এম এইচ মির্জাকে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার নগর দায়রা আদালত চত্বরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

এস এম এইচ মির্জাকে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার নগর দায়রা আদালত চত্বরে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নারদ কাণ্ডে গ্রেফতার হলেন রাজ্যের আইপিএস অফিসার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা। ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতি দমন আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে সিবিআই। নারদ মামলায় এটাই প্রথম গ্রেফতার।

তৎকালীন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন মির্জা। নারদ কাণ্ডের ভিডিয়ো ফুটেজে এই প্রসঙ্গ এসেছে। বৃহস্পতিবার তাঁর গ্রেফতারের পরে শুক্রবার মুকুলকেও ডেকেছে সিবিআই। পর্যবেক্ষকদের মতে যা তাৎপর্যপূর্ণ। মুকুলের অবশ্য দাবি, ‘‘আমার সমস্যার প্রশ্ন নেই।’’

২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটের মুখে ১৪ মার্চ স্টিং অপারেশনের ভিডিয়ো ফুটেজ প্রকাশ করে ওয়েব পোর্টাল ‘নারদ নিউজ’। তাতে দেখা যায় তৃণমূলের এক ঝাঁক নেতা-নেত্রী এবং আইপিএস মির্জার সঙ্গে টাকার বিনিময়ে সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কথা বলছেন নারদ-এর ছদ্মবেশী সাংবাদিক। তাঁদের কেউ কেউ তাঁর কাছ থেকে টাকাও নিচ্ছেন। ২০১৪-র লোকসভা ভোটের আগে এই অপারেশন করা হয়েছিল বলে জানান নারদ-কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েল।

মির্জা বৃত্তান্ত

• নারদ-কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েলের সঙ্গে প্রথম আলাপ হয় কলকাতার তৎকালীন ডেপুটি মেয়র ইকবাল আহমেদের।

• পরে ম্যাথুর সঙ্গে যোগাযোগ হয় তৃণমূলের বিভিন্ন নেতা-নেত্রী এবং মির্জার।

• ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যায়, ম্যাথুকে মির্জার সঙ্গে দেখা করতে বলছেন মুকুল।

• ভিডিয়ো ফুটেজে টাকা নিতে দেখা যায় মির্জাকে। বলেন, ‘‘অনেক নেতা-মন্ত্রীর হয়ে টাকা নিয়ে থাকি।’’

• ১৭ জুন, ২০১৬, মামলা দায়ের হয় হাইকোর্টে।

• ১৭ এপ্রিল ২০১৭, তদন্তের ভার পায় সিবিআই।

সিবিআইয়ের দাবি, ওই ভিডিয়োয় বর্ধমানের তৎকালীন পুলিশ সুপার মির্জাকে সরকারি বাসভবনে বসে পাঁচ লক্ষ টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল। ম্যাথুর কথায় ইঙ্গিত ছিল, মুকুলের হয়েই টাকা নিচ্ছেন তিনি। নারদের অন্য একটি ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছিল, বেসরকারি সংস্থার কর্তা সেজে আসা সাংবাদিক ম্যাথুকে মির্জার কাছে পাঠাচ্ছেন মুকুল।

মির্জাকে এ দিন সকালে নিজাম প্যালেসে ডেকে পাঠায় সিবিআই। কিছু ক্ষণ পরে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এর পর ব্যাঙ্কশাল কোর্টে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

সিবিআই-কে দেওয়া ম্যাথুর বয়ান অনুযায়ী, তিনি যে দিন মির্জার কাছে যান, সে দিন একাধিক ব্যবসায়ী টাকা নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। মির্জা তাঁদের একের পর এক ডেকে টাকা নিচ্ছিলেন। মির্জার টেবিলে ছিল টাকার স্তূপ। তাঁর উপস্থিতিতে মির্জার কাছে ফোন এলে মির্জাকে বিভিন্ন টাকার অঙ্কের কথা বলতে শোনা যায়। ম্যাথু এ দিন বলেন, ‘‘মির্জা আমার থেকে শুধু টাকাই নেননি, একাধিক নেতা-মন্ত্রীর সঙ্গে পরিচয়ও করিয়ে দিয়েছিলেন।’’

সিবিআই তদন্তকারীদের দাবি, মির্জা ঘুষচক্রের অন্যতম পাণ্ডা ছিলেন। ম্যাথুর সঙ্গে মির্জার কথোপকথনে জানা যায়, মির্জা দু’জনের কাছ থেকে ১ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা নিয়ে কোনও এক প্রভাবশালীর হাতে তুলে দেন। কাদের কাছ থেকে ওই টাকা নিয়েছিলেন, তা পরে জিজ্ঞাসাবাদের সময় জানতে চাওয়া হলেও মির্জা তা জানাননি। তবে তৃণমূলের নানা অনুষ্ঠানের জন্য টাকা তুলে দিতেন, মির্জা এমন দাবি করেছেন বলে জানাচ্ছে সিবিআই সূত্র।

মির্জার আইনজীবীরা এ দিন আদালতে বলেন, গত দু’বছরে সিবিআই মির্জাকে আট-নয় বার ডেকেছে এবং তিনি সব সময় তদন্তে সহযোগিতা করেছেন। যে ভিডিয়ো ফুটেজে মির্জাকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা এখনও যাচাই হয়নি। তা ছাড়া, মির্জা আইপিএস অফিসার। তাঁর পালিয়ে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই।

সিবিআইয়ের আইনজীবী পাল্টা বলেন, টাকা নেওয়ার ফুটেজ মিলেছে। কোথা থেকে ওই টাকা মিলেছিল, তার সন্তোষজনক উত্তর মির্জা দেননি। অভিযুক্ত কয়েক জনের সঙ্গে তাঁকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরার প্রয়োজন।

নারদ মামলা শুরুর পরে মির্জা প্রথমে টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। পরে জানান, একটি অনাথ আশ্রমের জন্য তিনি ওই টাকা নেন। শুধু সিবিআই নয়, এই যুক্তি মনঃপুত হয়নি রাজ্য সরকারেরও। ২০১৭-র ৯ নভেম্বর সাসপেন্ড হন তিনি।

Narada Scam CBI IPS HMS Mirza Mukul Roy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy