Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সিবিআইয়ের ডাক সিপিএমের রবীনকে, নোটিস শুভেন্দুকেও

সারদা-কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে এ বার সিপিএমের দরজায় সিবিআই। সিপিএম নেতা রবীন দেবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করল কেন্দ্রীয় এই গোয়েন্দা সংস্থা। পাশাপাশি তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে সিবিআই সূত্রের খবর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৪:৩৬
Share: Save:

সারদা-কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে এ বার সিপিএমের দরজায় সিবিআই।

সিপিএম নেতা রবীন দেবকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করল কেন্দ্রীয় এই গোয়েন্দা সংস্থা। পাশাপাশি তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে সিবিআই সূত্রের খবর।

সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে রবীন দেবকে ফোন করেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। বৃহস্পতিবারেই তাঁকে সল্টলেকে সিবিআই দফতরে হাজির হওয়ার জন্য নোটিস পাঠানো হয়। রবীনবাবু বলেন, “কাজে আটকে থাকায় এখন যেতে পারছি না। পরের সপ্তাহে যাব বলে সিবিআইকে জানিয়েছি। যা জানি তা সিবিআইকে জানিয়ে আসব।”

সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে বুধবার ফোন করেন সিবিআইয়ের এক অফিসার। তাঁকে বুধবারেই সল্টলেকে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু ওই দিন বিশ্বকর্মা পুজো থাকায় যেতে পারবেন না বলে শুভেন্দুবাবুও জানিয়ে দেন। ২৩ সেপ্টেম্বরের পরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে তিনি দেখা করবেন বলে সিবিআইকে জানিয়েছেন শুভেন্দুবাবু। সিবিআই সূত্রের দাবি সারদাকে যাঁরা বিভিন্ন ব্যাপারে সুবিধা করে দিয়েছেন, সেই তালিকায় এই তৃণমূল সাংসদের নামও রয়েছে।

শুভেন্দু বৃহস্পতিবার বলেন, “সিবিআইকে বলেছি সহযোগিতা করব। সারদার কোনও কারবারে আমার যোগ নেই। ফলে সিবিআইয়ের মুখোমুখি হতে আমার কোনও অসুবিধা নেই।” তা হলে ,সিবিআই তাঁকে ডাকল কেন? শুভেন্দুর জবাব, “কুণাল ঘোষ আমাকে জড়িয়ে কিছু অভিযোগ আগেই করেছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে আমিই একমাত্র মানহানি মামলা করেছি। আদালতের নির্দেশে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও হয় কুণালের। সিবিআই তা নিয়ে জানতে চেয়েছে। মামলার কাগজপত্র তাদের হাতে তুলে দেব।”

সারদা-কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত হিসেবে শাসক দলের অনেকের নাম উঠে এলেও সিপিএমের কাউকে এখনও পর্যন্ত ডাকেনি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তৃণমূল নেতারাও বার বার অভিযোগ জানিয়েছেন, সিপিএম আমলেই রাজ্যে সারদার উত্থান। সিপিএমের নেতাদের কেন ডাকা হচ্ছে না সেই দাবি তুলে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ তুলে সিজিও কমপ্লেক্সের সামনে ধর্নাও দিয়েছে মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস। সিবিআইয়ের এক অফিসার বলেন, “তদন্তে আমরা রাজনৈতিক রং দেখি না। শুধু রবীন দেব কেন, তদন্তে যাঁদের নাম উঠে আসবে তাঁদের সকলকেই ডেকে পাঠাব।”

সিবিআই সূত্রের খবর, ‘তারা টিভি’র সাবেক মালিক রতিকান্ত বসুকে জেরা করেই উঠে এসেছে রবীন দেবের নাম। অভিযোগ, তারা-র চারটি চ্যানেল সুদীপ্ত সেনকে বিক্রি করার সময়ে সিপিএম নেতা রবীন দেব মধ্যস্থের ভূমিকা পালন করেন। তদন্তকারীদের দাবি, রবীন দেব সেই সময়ে বেশ কয়েক বার মিডল্যান্ড পার্কে সারদার অফিসে গিয়ে সুদীপ্তর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৃহস্পতিবারও রতিকান্তবাবুকে জেরা করে সিবিআই। যদিও সিবিআই দফতর থেকে বেরিয়ে রতিকান্ত বলেন, “রবীন দেবকে চিনি না। আমি জ্যোতিবাবুকে চিনতাম। সিপিএমের আর কোনও নেতাকে চিনি না।” এ দিন সারদার অন্যতম ডিরেক্টর সোমনাথ দত্তকেও জেরা করেন তদন্তকারীরা।

সিবিআই সূত্র অবশ্য জানাচ্ছে, শুধু রবীন দেব নন। এক পুরকর্তা ও এক সাংবাদিক ওই দিনের বৈঠকে সুদীপ্ত সেন ও রতিকান্তবাবুর মধ্যস্থ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। রবীনবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি ওই দু’জনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সূত্রের খবর ওই চারটি চ্যানেলের মালিকানা হস্তান্তরে কী পরিমাণ অর্থ লেনদেন হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ব্যাঙ্কের মাধ্যমে লেনদেনের পাশাপাশি নগদ টাকায় কোনও লেনদেন হয়েছিল কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে তা-ও।

সিবিআই রবীন দেবকে ডাকায় স্পষ্টতই অস্বস্তিতে পড়েছে সিপিএম। দলের পক্ষ থেকে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এবং রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী দু’জনেই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, রবীনবাবুকে অভিযুক্ত হিসাবে

ডাকা হয়নি। ডাকা হয়েছে সাক্ষী হিসাবে। সূর্যবাবু এ দিন বলেন, “রবীন দেব অবশ্যই যাবেন। সিবিআইকে সহযোগিতাও করবেন।” অস্বস্তি এড়াতে সূর্যবাবুর দাবি, তাঁর কাছে অনেক তথ্য আছে। যেন তাঁকেও সিবিআই ডেকে পাঠায়। তাঁর কথায়, “আমাদের যে কাউকে সিবিআই ডাকতে পারে। কোনও অসুবিধা নেই।”

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, “সিবিআই কাউকে ডাকা মানেই সে দোষী নয়।” উল্টে সারদার পাশাপাশি অন্যান্য বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধেও তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

সারদা কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবিতে বৃহস্পতিবার তাঁর খাস তালুক হাজরা মোড় থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ শুরু করেছে বিজেপি। ওই দাবিতে তারা এক কোটি সই সংগ্রহ করবে। দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “হাজরা মোড় থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবর্তন যাত্রা শুরু হয়েছিল। এখানেই সেই পরিবর্তনের ধোঁকাবাজি শেষ হবে। সারদা কাণ্ডে যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর দলের নেতা-মন্ত্রীদের নাম জড়িয়ে যাচ্ছে, তাতে নৈতিক ভাবে তাঁর পদত্যাগ করা উচিত।”

এ দিন সারদা কমিশনে হাজির হতে বলা হয়েছিল প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহের প্রাক্তন স্ত্রী মনোরঞ্জনাকে। চ্যানেল বেচার জন্য সুদীপ্তর কাছ থেকে নেওয়া টাকা খরচ করে ফেলেছেন বলে তিনি কমিশনকে জানান।

কমিশন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই সুদীপ্ত কমিশনে জানিয়েছেন, চ্যানেল কেনার জন্য তিনি মনোরঞ্জনাকে ২৫ কোটি টাকা দিয়েছেন। যদিও তা অস্বীকার করেন মনোরঞ্জনা। এ দিন তিনি কমিশনে জানান, মোট সাড়ে ২১ কোটি টাকা পেয়েছেন তিনি। চুক্তি ছিল ৫০ কোটি টাকার। বাকি টাকা না মেটানোর জন্য চুক্তি বাতিল হয়েছে। তাঁর দাবি, অসমের কংগ্রেস নেতৃত্ব চাপ দেওয়ায় ওই চুক্তি সম্পাদন করা যায়নি বলে সুদীপ্ত তাঁকে জানান। মনোরঞ্জনা জানান, চুক্তি হয়নি। এ দিকে হাতে পাওয়া অর্থও খরচ হয়ে গিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE