Advertisement
E-Paper

জেরার মাঝে হাজির রোজ ভ্যালির কর্মী

তাপস পালের পরে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন দিনের তফাতে মঙ্গলবার সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে ঘণ্টা চারেক জেরার পরে গ্রেফতার করা হল লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতাকে। এ বারও সেই রোজ ভ্যালি কাণ্ডেই। তাপসের মতো সুদীপের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছে সিবিআই। সঙ্গে জালিয়াতি ও বিশ্বাসভঙ্গেরও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৬

তাপস পালের পরে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিন দিনের তফাতে মঙ্গলবার সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে ঘণ্টা চারেক জেরার পরে গ্রেফতার করা হল লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতাকে। এ বারও সেই রোজ ভ্যালি কাণ্ডেই। তাপসের মতো সুদীপের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছে সিবিআই। সঙ্গে জালিয়াতি ও বিশ্বাসভঙ্গেরও। কেন্দ্রীয় ওই তদন্তকারী সংস্থার দাবি, রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর অন্যতম মূখ্য পরামর্শদাতা ছিলেন তৃণমূলের এই প্রবীণ সাংসদ।

গত শুক্রবার একই ভাবে সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে দীর্ঘ ক্ষণ জেরার পরে গ্রেফতার করা হয়েছিল তাপস পালকে। এখনও তিনি সিবিআই হেফাজতেই। এর আগে সারদা-কাণ্ডে শাসক দলের আরও দুই সাংসদ সৃঞ্জয় বসু ও কুণাল ঘোষ এবং রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রকে সিবিআই গ্রেফতার করলেও কলকাতা এতটা উত্তাল হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক ধারে-ভারে সুদীপের মতো এক জন অভিজ্ঞ নেতাকে এ দিন গ্রেফতারের পরেই দলনেত্রীর নির্দেশে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকেরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ শুরু করেন। দলের তাবড় নেতা, সাংসদ ও মন্ত্রী ভিড় জমান সিজিও কমপ্লেক্সে।

সিবিআই সুদীপের বিরুদ্ধে জালিয়াতি (৪২০), বিশ্বাসভঙ্গ (৪০৬) এবং ষড়যন্ত্র (১২০বি)-র অভিযোগ এনেছে। তাপস পালকে এ দিনই আরও তিন দিনের জন্য সিবিআই হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে ভুবনেশ্বরের বিশেষ আদালত। সিবিআই জানাচ্ছে, আজ বুধবার থেকে দুই সাংসদ সুদীপ ও তাপসকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা হবে।

তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকালেই দিল্লি থেকে সিবিআইয়ের আট অফিসার কলকাতায় আসেন। তাঁরাই মূলত সুদীপকে জেরা করেন। সেই দলে পূর্বাঞ্চলের যুগ্ম অধিকর্তা নবীন কুমার ও এসপি উপেন্দ্র অগ্রবালের মতো পদস্থ অফিসারেরা ছিলেন। তদন্তকারীদের দাবি, এ দিন জিজ্ঞাসাবাদের শুরুতে সুদীপ বেশ মেজাজেই ছিলেন। আত্মবিশ্বাসী সুরে নিজেই জানান, রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। গৌতম তাঁর পারিবারিক বন্ধু। ফলে, খোলামেলা কথা বলতে তাঁর কোনও অসুবিধাই নেই। তদন্তকারী এক অফিসারের দাবি, গোড়ার দিকে একেবারে নেতা-সুলভ ভঙ্গিতে সমস্ত প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন সুদীপ। তদন্তকারীরাও তাঁর সঙ্গে খোশগল্প চালিয়ে যান। কথার ফাঁকে সুদীপের সম্পর্কে যে সব তথ্য প্রমাণ হাতে এসেছে, তা একে একে দেখানো হয় সাংসদকে। রোজ ভ্যালির এক প্রাক্তন কর্মীকেও সাংসদের সামনে হাজির করে সিবিআই। অফিসারদের দাবি, ওই কর্মী মুখ খুলতেই দুঁদে নেতা ঘাবড়ে যান। সাংসদের সামনে হিসেবের খাতা মেলে ধরেন ওই কর্মী। কবে কোথায় রোজ ভ্যালি থেকে সুদীপের জন্য নগদ টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে, তা খাতা দেখে বলতে শুরু করেন ওই কর্মী। এর পরই সুর বদলে যায় প্রবীণ সাংসদের।

এর পরে ঘণ্টা খানেক সুদীপকে বিশ্রাম দেওয়া হয়। বিকেল ৩টে নাগাদ তাঁকে গ্রেফতারের কথা জানানো হয়। সিবিআইয়ের একটি সূত্র বলছে, গ্রেফতারের খবর জেনে সুদীপ প্রথমেই বাড়িতে ফোন করেন। পরিবারের সঙ্গে মিনিট পাঁচেক কথা হয় তাঁর।

সিবিআই সূত্রের খবর, সুদীপের কাছে তাঁরা জানতে চেয়েছিলেন— সাংসদের দু’টো

গাড়ির ঋণের মাসিক কিস্তির টাকা কেন রোজ ভ্যালি সংস্থা ব্যাঙ্কে জমা দিত?

পারিবারিক বন্ধু হিসেবে সেই কিস্তি গৌতম কণ্ডু নিজে দিলে কিছু বলার ছিল না। কিন্তু কেন সংস্থার অ্যাকাউন্ট থেকে ওই টাকা জমা পড়ত? এ প্রশ্নও করা হয়— লোকসভার সাংসদ ও বিভিন্ন স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য হয়েও কী ভাবে রোজ ভ্যালির বিভিন্ন বৈঠকে যোগ দিতেন? এই অর্থলগ্নি সংস্থার সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রের একাধিক মন্ত্রকে কেন তিনি সওয়াল করেছিলেন? তাঁর বিদেশ ভ্রমণের টাকাই বা কেন রোজ ভ্যালি দিয়েছে?

সুদীপ পুরনো রাজনীতিক। কংগ্রেসের বিধায়ক ছিলেন। জন্মলগ্নে তৃণমূলে যোগ দিলেও ফের কংগ্রেসে ফিরে যান। পরে ফের যোগ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে। ১৯৯৮ থেকে তৃণমূলের টিকিটে চার বার সাংসদ নির্বাচিত হন। এখন তৃণমূলের সংসদীয় দলের প্রধান তো বটেই, রেলের স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান। সিবিআইয়ের এক কর্তার কথায়, রোজ ভ্যালি কাণ্ডে সুদীপকে নিয়ে গৌতম কুণ্ডু-সহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হল। সংস্থার কয়েক জন কমর্চারী ও গাড়ির চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রাতের বিমানেই ভুবনেশ্বরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সুদীপকে। কলকাতা বিমানবন্দরে বলেন, ‘‘লোকসভায় অনেক কাজ করেছি, এই পুরস্কার। এটা পারফেক্ট ডিমানিটাইজেশন!

Rose Valley Sudip Bandyopadhyay CBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy