Advertisement
২৭ মার্চ ২০২৩

আজ আরও বৈঠক আস্থানার, গর্জন না বর্ষণ

পাশাপাশিই প্রশ্ন উঠেছে, এই ‘সময় লাগা’ কি স্বাভাবিক? নাকি এর পিছনে অন্য কোনও গভীর অঙ্ক রয়েছে।

সল্টলেকের সিবিআই দফতরে রাকেশ আস্থানা। মঙ্গলবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

সল্টলেকের সিবিআই দফতরে রাকেশ আস্থানা। মঙ্গলবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৮ ০৩:৫৫
Share: Save:

দেড় বছর কেটে গিয়েছে। সারদা, রোজ ভ্যালি ও নারদ মামলায় সে অর্থে কোনও অগ্রগতি নেই। কেন, তা নিয়ে নানা জল্পনা।

Advertisement

২০১৭ সালের জানুয়ারির গোড়ায় রোজ ভ্যালি মামলায় তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রেফতার হন। তার দিন কয়েক আগে গ্রেফতার হন আরেক সাংসদ তাপস পাল। যে গতিতে সেই সময়ে তদন্ত চলছিল, যে গতিতে ধরপাকড় চলছিল, ধীরে ধীরে তা স্তিমিত হয়ে পড়ে। তদন্তকারীদের জিজ্ঞাসা করলে তাঁরা অবশ্য বলছেন, তদন্ত চলছে। প্রচুর কাগজপত্র খতিয়ে দেখতে হচ্ছে। তাই, সময় লাগছে। পাশাপাশিই প্রশ্ন উঠেছে, এই ‘সময় লাগা’ কি স্বাভাবিক? নাকি এর পিছনে অন্য কোনও গভীর অঙ্ক রয়েছে।

এমনই এক পরিস্থিতিতে সিবিআইয়ের বিশেষ অধিকর্তা রাকেশ আস্থানার কলকাতা সফর বিষয়টিতে নতুন মাত্রা যোগ করল। মঙ্গলবার ভুবনেশ্বর থেকে কলকাতায় আসেন তিনি। ভুবনেশ্বরে ‘সি শোর’ এবং ‘অর্থ তত্ত্ব’ — এই দুই বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থা নিয়ে খোঁজ নিয়েছেন রাকেশ। খোঁজ নিয়েছেন রোজ ভ্যালি নিয়েও। সেখানে যে সিবিআই অফিসারেরা এক একটি মামলার তদন্ত করছেন, তাঁদের আলাদা আলাদা করে ডেকে বৈঠক
করেছেন তিনি। তাঁদের কাছে আদালতগ্রাহ্য কী কী তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, তা-ও বিস্তারিত ভাবে জানতে চেয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন: দেওধরের মতো ঘাঁটি গাড়বেন রাহুলের দূত

Advertisement

আজ, বুধবার কলকাতায় মূলত সারদা, রোজ ভ্যালি ও নারদ তদন্তের অগ্রগতি এবং সেই তিন মামলার ক্ষেত্রে আদালতগ্রাহ্য তথ্যপ্রমাণ নিয়ে খোঁজখবর নেবেন তিনি। মঙ্গলবার বিকেলেই কলকাতায় নেমে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে গিয়ে এ নিয়ে প্রাথমিক বৈঠকও করেন মামলার অফিসারদের সঙ্গে।

বিভিন্ন মহলের সংশয়, সিবিআই কর্তা কি শুধুই মামলাগুলির অগ্রগতি সম্পর্কে অনুসন্ধান করবেন, নাকি তদন্তকারীদের অন্য কোনও বার্তাও দেবেন? অনেকের মতে, নরেন্দ্র মোদী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পারস্পরিক সম্পর্কে ইদানীং কিছুটা ‘উন্নতি’ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ডাকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা পর পর দু’বার দু’টি বৈঠকে যোগ দিলেন। নীতি আয়োগের সাম্প্রতিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে সহাস্য কথা বলতেও দেখা গিয়েছে। দিন কয়েক আগেই দীর্ঘদিন ঝুলে থাকা ডেউচা-পাচামি খনির অধিকার এবং বিশ্ব বাংলা-র লোগো ব্যবহারের স্বত্ত্ব পশ্চিমবঙ্গকে দিয়েছে কেন্দ্র। মমতার পক্ষে যা একটি বড় দাবি পূরণ। এছাড়াও নীতি আয়োগের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপসমিতিতে এবার সদস্য করা হয়েছে মমতাকে।

সব মিলিয়ে লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতা যখন বিরোধী জোট গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তখন কেন্দ্রের এই সব পদক্ষেপ রাজনৈতিক ভাবে অর্থবহ বলে অনেকের ধারণা। তাই, সারদা, রোজ ভ্যালি, নারদের মতো মামলাগুলি আবার জিইয়ে তোলা হচ্ছে, নাকি ‘ধীরে চলো’ নীতিই বহাল রেখে আস্থানার মাধ্যমে তদন্তকারীদের কাছে কোনও বার্তা পাঠানো হচ্ছে, সেই জল্পনাই এখন তুঙ্গে। সিবিআই সূত্রে ইঙ্গিত, গর্জন হলেও বর্ষণ হওয়ার তেমন লক্ষণ এখনও নেই। ভোটের আগে উপরমহলের ‘নির্দেশে সক্রিয়’ হতে হলে তার প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে।

যদিও শাসক তৃণমূল এই ধরনের জল্পনাকে ‘পরিকল্পিত কুৎসা’ বলে মনে করছে। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সোমবারেই বলে দিয়েছেন, সিবিআই কর্তার এই সফর আসলে বিজেপির নির্বাচনী কৌশল। তাঁর কথায়, ‘‘ভোট এলেই ওরা এ ভাবে চাপ তৈরির চেষ্টা করে। এ সব করে কোনও লাভ হবে না। বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে হটাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই চলবে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘ওইসব ভোটের অঙ্ক তৃণমূল কষে। দোষীদের শাস্তির জন্য আমরাই সিবিআইয়ের কাছে দাবি জানিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.