অনুব্রত মণ্ডল। ফাইল চিত্র।
তিনি ‘আপাত সুস্থ’। সম্প্রতি এসএসকেএম (পিজি) হাসপাতালের চিকিৎসকদের সেই রিপোর্ট নিয়ে বাড়ি ফিরে বোলপুরের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের উপরে চাপ দিয়ে সাদা কাগজে দু’সপ্তাহের বিশ্রামে লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে।
শাসক দলের ওই দাপুটে নেতার বিরুদ্ধে এ বার বেআইনি পথে আর্থিক লেনদেনের জন্য বোলপুরের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এক কর্তার উপরে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ তুলল সিবিআই।
বুধবার সকালে বোলপুরের একটি অতিথিশালায় অনুব্রতের হিসাবরক্ষক এবং স্থানীয় একটি ব্যাঙ্কের দুই অফিসারকে মুখোমুখি বসিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে ১৭ কোটি টাকার স্থায়ী আমানত ছাড়াও আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি। অনুব্রতের স্ত্রী ছবি মণ্ডল ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর প্রয়াত হন। তদন্তকারীদের দাবি, ছবির নামে বোলপুরের ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে একটি ‘কারেন্ট অ্যাকাউন্টে’ ৫৫ লক্ষ টাকা জমা ছিল। অভিযোগ, ওই আমানতের কোনও নমিনি ছিল না। তাই ছবির মৃত্যুর পরে ওই টাকা স্থানান্তরের ক্ষেত্রে নানা আইনি জটিলতা দেখা দিয়েছিল।
তদন্তকারীদের দাবি, ব্যাঙ্ক অফিসারদের বয়ান অনুযায়ী অনুব্রত একাধিক বার ফোন করে ওই ৫৫ লক্ষ টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে সরানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করছিলেন। আইনি পদ্ধতি ছাড়া টাকা স্থানান্তরিত করা যাবে না বলে ব্যাঙ্কের তরফে বার বার জানানো হয় ওই দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতাকে। সিবিআইয়ের দাবি, নাছোড়বান্দা অনুব্রত অফিসারদের ফোন করে বলতেন, ‘আপনারা চাইলে সব পারেন। এটা কিন্তু করে দিতে হবে। কোনও আইনি জটিলতায় যেতে চাই না। যা করার আপনারাই করবেন।’
সিবিআই-কর্তাদের দাবি, এখন ব্যাঙ্কের সব নথিই কম্পিউটারাইজ়ড। কোনও বিকৃতি ঘটানো সম্ভব নয়। আইনি পথে স্ত্রীর সমস্ত সম্পত্তির হিসাব আদালতে জমা দেওয়ার পরে বিচারকের নির্দেশে ওই টাকা স্থানান্তরিত করতে হত। তদন্তকারীদের দাবি, স্ত্রীর নামে থাকা বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি আড়াল করতেই ব্যাঙ্ক অফিসারদের চাপ দিয়ে ওই টাকা বার করতে চেয়েছিলেন অনুব্রত। যদিও চাপের মুখেও সংশ্লিষ্ট অফিসার সেই আমানতের টাকা স্থানান্তরিত করেননি। তিনি পরে বদলি নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন। তাই এখনও ৫৫ লক্ষ টাকা ছবির অ্যাকাউন্টেই রয়েছে বলে ওই ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর।
সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, ‘‘ছবি সাধারণ গৃহবধূ ছিলেন। সাধারণত ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেনের জন্যই ব্যাঙ্কে ‘কারেন্ট অ্যাকাউন্ট’ খোলা হয়।’’ তদন্তকারীদের দাবি, শুধু ৫৫ লক্ষ টাকার আমানত নয়, ছবির নামে বেশ কয়েক কোটি টাকার স্থায়ী আমানতও পাওয়া গিয়েছে ওই ব্যাঙ্কে। তা ছাড়া একাধিক সংস্থায় অনুব্রত, তাঁর মেয়ে সুকন্যা এবং স্ত্রী ছবি ডিরেক্টর হিসেবে রয়েছেন।
সিবিআইয়ের দাবি, বছর কুড়ি আগে অনুব্রত ছিলেন এক জন সাধারণ মাছ ব্যবসায়ী। সুকন্যা ২০১২ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষিকার কাজ করছেন। আর ছবি সাধারণ গৃহবধূ। এই অবস্থায় তাঁদের এত বিপুল বিষয়সম্পত্তির উৎস কোথায়, সেটাই খুঁজে বেড়াচ্ছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy