Advertisement
১১ মে ২০২৪
SSC recruitment scam

পার্থ, কল্যাণময় ও শান্তিপ্রসাদকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা, বিভ্রান্ত করছেন তিন মূর্তি, দাবি সিবিআই সূত্রে

কলকাতা হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বাধীন কমিটি শান্তিপ্রসাদ ও কল্যাণময়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে তদন্তের সুপারিশ করেছিল।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় এবং শান্তিপ্রসাদ সিংহ (বাঁ দিক থেকে ডান দিকে)

পার্থ চট্টোপাধ্যায়, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায় এবং শান্তিপ্রসাদ সিংহ (বাঁ দিক থেকে ডান দিকে) ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:২৯
Share: Save:

সিবিআইয়ের চোখে তিন জনেই দুর্নীতির ময়দানের ‘পাকা খেলোয়াড়’। ওই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার দাবি, স্কুলে স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির বিষয়টিও তাদের কাছে স্পষ্ট। কিন্তু দুর্নীতির ছকটা বুঝেও চক্রের ত্রয়ীর ‘ডিফেন্স’ বা রক্ষণব্যূহের ত্রিভুজ এতটাই পোক্ত যে, রবিবার পর্যন্ত তাঁরা সেটা ভেঙে উঠতে পারেননি বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা।

স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের মধ্যে যোগসূত্র কারা? এটা যাচাই করার বিষয়টিকেই তদন্তের এই পর্যায়ে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে সিবিআই। কিন্তু পাশপাশি বসে ইশারা-ইঙ্গিতে তিন হেভিওয়েট অভিযুক্তই তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে সিবিআই সূত্রের খবর।

শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে পার্থ, শান্তিপ্রসাদ ও কল্যাণময়কে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা শুরুর পরে মোটামুটি এমনটাই উপলব্ধি সিবিআইয়ের। রবিবারেও তিন মূর্তিকে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টা জেরা করা হয়। মাঝখানে চিকিৎসকেরা প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে তিন জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। তিন জনের কারও গুরুতর সমস্যা না-থাকায় ডাক্তারেরা নিজাম প্যালেসে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক দফতরে গিয়ে অভিযুক্তদের দেখেন।

এই পর্বে এসএসসি-র শিক্ষাকর্মী (‘গ্রুপ সি’ বা তৃতীয় শ্রেণির কর্মী) নিয়োগের একটি মামলায় তিন জনকে একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করা চলছে। এ বিষয়ে আগে তাঁরা আলাদা ভাবে যা বলেছেন, তার সঙ্গে বয়ান মিলিয়ে দেখাই উদ্দেশ্য। কিন্তু তিন অভিযুক্তই দুর্নীতির দায় স্পষ্ট ভাবে স্বীকারের রাস্তা সুকৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে মনে করছেন সিবিআই-কর্তারা। এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “তিন অভিযুক্তই বুদ্ধিমান। এবং তিন জনেই বুঝেছেন, তাঁদের ভাগ্য এখন এক সূত্রে জড়িয়ে। তাই তিন জনই কার্যত ‘আমি কিছু জানি না’ বা ‘আমি কী করব’ নীতি নিয়েছেন। আপাত ভাবে মনে হচ্ছে, এঁরা পরস্পরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু আসলে নিঃশব্দে পরস্পরের ইঙ্গিতটা বুঝে নিয়ে সাবধানে পা ফেলছেন। এর থেকে এটা বোঝা যাচ্ছে যে, এই তিন জনের বোঝাপড়া পুরনো এবং মজবুত।”

জেরার মুখে এ দিন পর্যন্ত তিন অভিযুক্তের পৃথক পৃথক অবস্থান এই রকম: প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থের দাবি, তাঁকে অন্ধকারে রেখে আমলারা যা করার করে থাকতে পারেন। শান্তিপ্রসাদের বক্তব্য, যাবতীয় বেআইনি নিয়োগের সুপারিশ তিনি উচ্চ মহলের নির্দেশ অনুযায়ী করেছিলেন। এই ‘উচ্চ মহল’ কারা? স্পষ্ট করে বলেননি তিনি। কল্যাণময়ের বক্তব্য, বেআইনি নিয়োগে তাঁর ডিজিটাল স্বাক্ষর রয়েছে। তিনি নিজে তো সই করেননি।

তবে পার্থ যা-ই দাবি করুন, এই দুর্নীতি মামলায় ‘মিডলম্যান’ সন্দেহে ধৃত কয়েক জনের সঙ্গে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠতা’ টের পেয়েছে সিবিআই। শান্তিপ্রসাদের মোবাইলের সূত্র ধরে প্রদীপ সিংহ ও প্রসন্ন রায় নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। সিবিআইয়ের দাবি, ওই দু’জনেই নিয়োগ দুর্নীতির ‘মিডলম্যান’ বা দালাল। প্রসন্ন বিশেষ ভাবে ‘পার্থ-ঘনিষ্ঠ’ বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। এই মামলায় আগে থেকেই সিবিআইয়ের হেফাজতে ছিলেন শান্তিপ্রসাদ। শুক্রবার আদালতের নির্দেশে কল্যাণময় ও পার্থকে হেফাজতে পায় সিবিআই। শান্তিপ্রসাদকে শনিবার ফের সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে পেশ করে হেফাজতে রাখার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তার পর থেকেই চলছে ম্যারাথন জেরা। শান্তিপ্রসাদের ফোন ঘেঁটে দেখা হয়েছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে কল্যাণময়ের মোবাইল। কিন্তু পার্থের ফোন আছে ইডি-র হেফাজতে। এসএসসি দুর্নীতি কাণ্ডে গত ২৩ জুলাই নাকতলার বাড়ি থেকে পার্থকে গ্রেফতার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। তদন্তকারীরা জানান, আদালতে আবেদন জানিয়ে ইডি-র হেফাজত থেকে প্রাক্তন মন্ত্রীর মোবাইল ফোন নেওয়া হবে।

কলকাতা হাই কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বাধীন কমিটি শান্তিপ্রসাদ ও কল্যাণময়ের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে তদন্তের সুপারিশ করেছিল। পার্থকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ও। মূলত বাগ কমিটির তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতেই তিন অভিযুক্তকে জেরা করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE