Advertisement
E-Paper

প্রভাবশালী বধের অস্ত্র চার জবানবন্দি

একটা নয়। সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে চার-চারটে নতুন অস্ত্র হাতে পেয়েছে সিবিআই। যা দিয়ে এ বার অনেক ‘প্রভাবশালী’কে জালে ফেলা যাবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। আর্থিক অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে সাধারণত সরাসরি প্রমাণ মেলে না। সারদা-তদন্তে সমস্যাটা আরও প্রকট। যে কারণে তদন্তের অগ্রগতির স্বার্থে আদালতে অন্য ধরনের প্রমাণ দাখিলে সিবিআই জোর দিয়েছিল।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৫১

একটা নয়। সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে চার-চারটে নতুন অস্ত্র হাতে পেয়েছে সিবিআই। যা দিয়ে এ বার অনেক ‘প্রভাবশালী’কে জালে ফেলা যাবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

আর্থিক অপরাধের তদন্তের ক্ষেত্রে সাধারণত সরাসরি প্রমাণ মেলে না। সারদা-তদন্তে সমস্যাটা আরও প্রকট। যে কারণে তদন্তের অগ্রগতির স্বার্থে আদালতে অন্য ধরনের প্রমাণ দাখিলে সিবিআই জোর দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর খবর, সারদার দুই হিসাবরক্ষক ও দুই গাড়িচালক বিচারকের কাছে যে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন, সেগুলোই কাঙ্ক্ষিত প্রমাণ হয়ে উঠতে পারে।

তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, বেশ কয়েক জন ‘প্রভাবশালী’ কী ভাবে কেলেঙ্কারিতে যুক্ত ছিলেন, ওই চার জনের গোপন জবানবন্দিতে তার উল্লেখ রয়েছে। ফলে সেগুলি সারদা-তদন্তে নতুন দিশা দিতে পারবে বলে ওঁদের আশা। প্রসঙ্গত, সারদা-মামলায় সিবিআই এ পর্যন্ত যে দু’টো চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে । তার একটিতেও ‘প্রভাবশালী’ কারও নাম নেই। তাই প্রশ্ন, সারদার টাকা নয়ছয়ের সঙ্গে যে ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তিদের জড়িত থাকার কথা সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল, সিবিআই আদৌ ব্যবস্থা নিতে পারবে কি তাঁদের বিরুদ্ধে? এই প্রেক্ষাপটে সারদার চার কর্মীর গোপন জবানবন্দি সিবিআইয়ের বড় অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে বলে আইনজীবীদের একাংশও মনে করছেন। কেন?

আইনজীবীদের ব্যাখ্যা: তদন্তকারী সংস্থার কাছে দেওয়া সাক্ষ্য (ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬১ নম্বর ধারায়) বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আদালতে গ্রাহ্য হয় না। অভিযুক্তের কৌঁসুলিরা প্রায়ই দাবি করেন, তদন্তকারীদের জবরদস্তির মুখে তাঁদের মক্কেল এমন সাক্ষ্য দিতে বাধ্য হয়েছেন। সে যুক্তি খণ্ডন করা অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়। কিন্তু বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি (ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৬৪ নম্বর ধারায়) দিলে ‘জোর খাটানোর’ দাবি তোলার সুযোগ থাকে না। আদালতের কাছেও তা সহজে গ্রাহ্য হয়। আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের কথায়, “সাক্ষীরা নিজেরাই বিচারকের কাছে সাক্ষ্যদান (গোপন জবানবন্দি) করলে মনে করা হয়, চাপের মুখে নয়, নিজের ইচ্ছেতেই সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁরা।” এ ধরনের জবানবন্দি তাই প্রামাণ্য নথি হিসেবে গণ্য হয় বলে জানান অরুণাভবাবু।

সিবিআই-সূত্রের খবর: সারদার যে চারটি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে, তার মধ্যে সারদা রিয়েলটি-তে আর্থিক প্রতারণার অঙ্ক সব চেয়ে বেশি। সংস্থাটির মাধ্যমে বাজার থেকে প্রায় ৭৭৪ কোটি টাকা তোলা হয়েছে, যার একটা বড় অংশ ‘প্রভাবশালী’দের পকেটে গিয়েছে বলে তদন্তে প্রকাশ। এবং সব টাকাই দেওয়া হয়েছে নগদে, যার কোনও রসিদ নেই। বিস্তর নথিও নষ্ট করা হয়েছে বলে অভিযোগ।

এমতাবস্থায় তদন্তকারীরা হন্যে হয়ে এমন কিছু তথ্য-প্রমাণ খুঁজছিলেন, যার জোরে সংশ্লিষ্ট ‘প্রভাবশালী’দের মুখোশ খোলা যায়। সারদারই চার কর্মীর গোপন জবানবন্দি তাঁদের আশা জোগাচ্ছে। ওই জবানবন্দির ভিত্তিতে তদন্তও নতুন দিশা পাবে বলে মনে করা হচ্ছে। সিবিআইয়ের একাংশের কথায়, “সারদার ওই দুই অ্যাকাউন্ট্যান্ট জানেন, কোন কোন প্রভাবশালীকে টাকা দেওয়া হয়েছে। আর ড্রাইভারেরা কবুল করেছেন, তাঁরাই টাকা পৌঁছে দিয়েছেন প্রভাবশালীদের কাছে।”

সিবিআইয়ের একটি সূত্র বলছে, হিসাবরক্ষকদের এক জন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। তাই হিসেবে অসঙ্গতির ব্যাপারে গোয়েন্দাদের সাহায্য করেছেন তিনি। পাশাপাশি, অন্য হিসাবরক্ষকও দীর্ঘদিন সারদার সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা দু’জনেই তদন্তকারীদের অনেক তথ্য দিয়েছেন। সারদা থেকে প্রভাবশালীদের যে টাকা দেওয়া হয়েছিল, তা তাঁরা জানানোর পরে সেই তথ্যের সমর্থন মিলেছে দুই গাড়িচালকের বক্তব্যেও। ওই দুই চালকেরই দাবি, বিভিন্ন সময়ে ওই টাকা প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন তাঁরা। সিবিআই বিভিন্ন প্রভাবশালীর টেলিফোনের যে কল রেকর্ড সংগ্রহ করেছে, তা-ও এই চার জনের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়েছে বলে তদন্তকারীরা জানান।

সারদা-মামলায় ধৃত, তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ ইতিমধ্যে এক বার বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দিতে চেয়েছিলেন। কোর্টে কুণাল জানিয়েছিলেন, তিনি মারা গেলে কিংবা কখনও অন্য কথা বললে ওই জবানবন্দিই যেন প্রামাণ্য নথি হিসেবে ধরা হয়। সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার (আইও)-এর কাছে বিচারক জানতে চেয়েছিলেন, এর দরকার হবে কি না। আইও আদালতকে জানান, কুণালের গোপন জবানবন্দির দরকার নেই। সিবিআইয়ের ব্যাখ্যা: কুণাল অন্যতম অভিযুক্ত। তাঁর গোপন জবানবন্দি সারদার চার কর্মীর জবানবন্দির মতো গুরুত্বপূর্ণ নয়।

আপাতত চার সারদা-কর্মীর জবানবন্দির দিকেই নজর সিবিআইয়ের।

shubhashis ghatak saradha case saradha scam state news online state news CBI weapons CBI investigation saradha scam issue found weapons
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy