আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক-পড়ুয়া খুন ও ধর্ষণের ঘটনার পিছনে হাসপাতালের কোনও দুর্নীতি বা কারও প্রতিহিংসার যোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখার কথা আদালতে রিপোর্টে জানাল সিবিআই। এই বিষয়টিতে নিশ্চিত হতে তদন্তকারীরা নিহত ডাক্তার ছাত্রীর মোবাইল, ল্যাপটপের কিছু চ্যাট, ইমেলের তথ্য বিশ্লেষণ করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, নিহত মেয়েটির মোবাইল, ল্যাপটপের কিছু তথ্য চিহ্নিত করে তা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
সেই ফরেন্সিক রিপোর্ট হাতে এলেই হাসপাতালের আধিকারিক ও চিকিৎসকদের একাংশকে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন হতে পারে বলে তদন্তকারী অফিসারের দাবি। তদন্তকারীদের ব্যাখ্যা, ফরেন্সিক রিপোর্টের সূত্রে হাতে জোরালো রিপোর্ট এলে তদন্তের নতুন পর্বশুরু হবে।
পাশাপাশি, সিবিআই সূত্রে দাবি, ঘটনার রাতে হাসপাতাল চত্বরে হস্টেলের কিছু পড়ুয়ার বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। ওই রাতে কোনও বহিরাগত হাসপাতালে হস্টেলে এসেছিলেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হয়েছে। নিহত চিকিৎসক-পড়ুয়ার মা ও বাবার কাছে তাঁদের মেয়ের মৃত্যুর খবর কী ভাবে পৌঁছল, তা-ও গুরুত্বপূর্ণ বলে আদালতে তদন্ত সংক্রান্ত রিপোর্টে বুঝিয়েছে সিবিআই।
২০২৪ এর ৯ অগস্ট সকাল সাড়ে দশটার পরে নিহত ডাক্তার ছাত্রীর বাবাকে প্রথম ফোন করে আর জি করের অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার বলেন, “আপনার মেয়ে অসুস্থ, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে আসুন।” এর পরের ফোনে তাঁর অসুস্থ মেয়েকে চিকিৎসার জন্য জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং এরও পরে তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ওই কন্যাহারা দম্পতিকে জানানো হয় বলে সিবিআইয়ের দাবি। তিনটি ফোনে তিন রকম তথ্য দিয়ে নিহত ডাক্তার ছাত্রীর বাবাকে দ্রুত হাসপাতালে চলে আসার জন্য ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার চাপ দিয়েছিলেন বলে আদালতে জানিয়েছে সিবিআই।
আদালতে মামলার তদন্তকারী অফিসার তাঁর রিপোর্টে জানিয়েছেন, ওই অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারকে দফায় দফায় তলব করে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাঁর সমস্ত বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে। কার নির্দেশে এবং কী উদ্দেশ্যে তিনি ওই ফোন করেছিলেন, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়েছে বলেও জানায় সিবিআই। তবে জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসা তথ্য রিপোর্টে পেশ করেননি মামলারতদন্তকারী অফিসার।
সিবিআই সূত্রের দাবি, নিহত চিকিৎসক-পড়ুয়ার মোবাইল ফোন সিবিআই হেফাজতে থাকার পরেও তা থেকে ওয়টস্যাপ চ্যাট করা হয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল। ওই অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোবাইল ফোনের সার্ভিস প্রোভাইডার এবং গুগল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বিস্তারিত তথ্য সিবিআইকে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন মামলার তদন্তকারী অফিসার।
শুক্রবার শিয়ালদহ অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সিবিআইয়ের তরফে ছ’পাতার ওই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্তকারী অফিসার রিপোর্টে তদন্তের গতিপ্রকৃতি নির্দেশ করেছেন। কিন্তু তদন্তের বিষয়ে সবিস্তার তথ্য পেশ করেননি।
সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন,"ওই ঘটনা ঘিরে বিভিন্ন মহল থেকে ১০০রও বেশি অভিযোগ আসে বা প্রশ্ন ওঠে। তা খতিয়ে দেখতে সময় লাগছে। পাশাপাশি তদন্তের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ফরেন্সিক রিপোর্টের উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে। ওই সব রিপোর্ট আসার দেরিতে তদন্ত প্রক্রিয়াও সময়সাপেক্ষ হয়ে উঠেছে। তবে আদালতেপেশ করা রিপোর্টে তদন্তের গতিপ্রকৃতি বোঝানো হয়েছে।"
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)