বাঁকা পথে স্কুল শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মী নিয়োগে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে আসা সুপারিশপত্রের একটি সাঙ্কেতিক নাম আমলা মহলে চাউর হয়েছিল বলে আদালতে জানিয়েছে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে দাবি, ২০২২এর অগস্টে স্কুল সার্ভিস কমিশনের এক আধিকারিকের বয়ান লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সেই লিখিত বয়ান মারফত উঠে আসা নিয়োগ দুর্নীতির নানা খুঁটিনাটি সম্প্রতি আলিপুর সিবিআই বিশেষ আদালতে জমা দিয়েছেন তদন্তকারীরা।
বয়ানে প্রকাশ, এসএসসির উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহের থেকে ধার নেওয়া একটি লব্জ দফতরের কর্মচারী, আধিকারিক মহলে জনপ্রিয় হয়। সিবিআইয়ের দাবি, খোদ পার্থর নাকতলার বাড়ি থেকে আসা সুপারিশপত্রকে ‘বাবার থান’ ডাকনাম দিয়েছিলেন শান্তিপ্রসাদ। সেই নাম নিয়োগ সংক্রান্ত আধিকারিকদেরমধ্যে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। তদন্তকারী এক অফিসারের কথায়, “প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়ি থেকে আসা সুপারিশপত্রের এই সাঙ্কেতিক নামের বিশেষ কার্যকারিতা ছিল। বাবার থান বললে মন্ত্রীমশাইকে আড়াল করা যেত। আবার একই সঙ্গে ওই সুপারিশের গুরুত্বও বোঝানো যেত।” এসএসসি দফতরে মন্ত্রীর বাড়ির অফিসের নাম ‘বাবার থান’ হয়ে গিয়েছিল বলেই তাঁর বয়ানে দাবি করেছেন ওই আধিকারিক।
ওই অধিকারিকের লিখিত বয়ানে আরও জানা গিয়েছে, দিল্লির সংস্থা নাইসার সঙ্গে ওএমআর শিট মূল্যায়নে এসএসসির একটি চুক্তি হয়েছিল। ওই সংস্থার কর্মী নীলাদ্রি দাস নিয়মিত দিল্লি থেকে কলকাতায় যাতায়াত করতেন। ২০১৯ সালের পরে নীলাদ্রি নিজেও আর একটি ওএম আর শিট মূল্যায়নকারী সংস্থা খুলে ছিলেন বলে দাবি। নীলাদ্রির নিজের সংস্থা থেকেও পার্থর নির্দেশে শান্তিপ্রসাদ এবং তৎকালীন এসএসসি সচিব অশোক সাহা বেশ কিছু ওএমআর শিট মূল্যায়ন করান বলে সিবিআই আদালতে তদন্ত সূত্র পেশ করেছে।
এসএসসির অধিকারিকের লিখিত বয়ান বলছে, নীলাদ্রি শান্তিপ্রসাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মাঝেমধ্যেই অযোগ্য প্রার্থীদের নম্বর বাড়ানো নিয়ে শান্তিপ্রসাদ এবং এসএসসির আর এক জন সচিব সুবীরেশ ভট্টাচার্যের সঙ্গে নাইসার মতবিরোধ ঘটত বলে দাবি। নীলাদ্রির ওই সংস্থা তখন ওএমআর শিটে কারচুপির বড় ভরসা হয়ে ওঠে বলেও তদন্ত সূত্র আদালতে তুলে দিয়েছে সিবিআই। তদন্তকারীদের দাবি, পরে ওএমআর শিটের বেশির ভাগই নষ্ট করে ফেলে এসএসসি। ফলে অযোগ্যদের বৃহত্তর অংশের পরীক্ষা সংক্রান্ত নথি এসএসসির কাছে পাননি তদন্তকারীরা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)