নিহত ছাত্র কৃষ্ণপ্রসাদ জানার মা যমুনাদেবীর সঙ্গে কথা বলছেন সেভ ডেমোক্র্যাসি ফোরামের সদস্য আব্দুল মান্নান। বুধবার সবংয়ের দাঁকড়দা-বাটিটাকি গ্রামে (বাঁ দিকে)। মেদিনীপুর শহরে এ দিন ফোরামের এক মিছিলও হয় ( ডান দিকে)।
সবংয়ে নিহত ছাত্র কৃষ্ণপ্রসাদ জানার বাড়ি গিয়ে তাঁর পরিজনেদের সঙ্গে দেখা করলেন ‘সেভ ডেমোক্র্যাসি ফোরাম’-এর সদস্যরা। প্রতিনিধিদলে ছিলেন ফোরামের কোর কমিটির সদস্য আব্দুল মান্নান, রাজ্য সাধারণ সম্পাদক চঞ্চল চক্রবর্তী, মেদিনীপুর কলেজের প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুধীন বাগ, কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী আবু আব্বাসউদ্দিন-সহ পাঁচজন। বাড়ি থেকে সবংয়ের সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ে যান প্রতিনিধিরা। কলেজের অধ্যক্ষ কালাইলাল পড়িয়ার সঙ্গে দেখা করেন তাঁরা। সকলের সামনেই অধ্যক্ষ সংবাদমাধ্যমের সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব হন। মন্তব্যের প্রতিবাদে অধ্যক্ষের ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন ফোরামের প্রতিনিধিরা। আব্দুল মান্নান জানান, কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তথ্য লোপাটের চেষ্টার অভিযোগে আইনি লড়াই শুরু করা যায় কি না, সে বিষয়েও আলোচনা করা হবে। সবংয়ের তেমাথানিতে সেভ ডেমোক্র্যাসি ফোরামের এক সভাও হয়।
এ দিন সবংয়ের দাকড়দা-বাটিটাকি গ্রামে কৃষ্ণপ্রসাদের বাবা ভানুভূষণ জানা ও মা যমুনাদেবীর সঙ্গে কথা বলেন ফোরামের সদস্যরা। আব্দুল মান্নানের কাছে নিহত ছাত্রের পরিজনেরা ঘটনার সিবিআই তদন্ত করার দাবি জানান। ঘটনার তদন্ত নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন তাঁরা। আব্দুল মান্নান এ বিষয়ে হাইকোর্টে আবেদন করার আশ্বাস দেন। পরে আব্দুল মান্নান বলেন, “এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী যে কথা বলেছেন ও পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ যে আচরণ করছেন তাতে সিবিআই তদন্ত না হলে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন হবে না। এ বিষয়ে কৃষ্ণপ্রসাদের পরিবারের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। তাঁরা আমাদের পাশে থাকবেন বলেছেন।’’ স্থানীয় বাসিন্দা কবিতা সামন্ত, প্রতিমা গাঁতাইত, পূর্ণচন্দ্র মাইতিরাও বলছিলেন, “একটা ছেলে অকালে মারা গেল, অথচ ঘটনায় জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের পুলিশ আড়াল করার চেষ্টা করছে। ভারতী ঘোষ পুলিশ হয়ে মিথ্যে কথা বলে চলেছেন। আমরা চাই, ঘটনার সিবিআই তদন্ত হোক।” মৃতের দাদা নারায়ণ জানাও বলেন, ‘‘আগেই তদন্ত নিয়ে অসন্তোষের কথা জানিয়েছিলাম। সব দেখে মনে হচ্ছে, পুলিশ ধৃতদের ছেড়ে দিতে চাইছে। আসলে তদন্তের নামে প্রহসন চলছে।’’
সবং কলেজে পুলিশের টহল।
মৃতের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফোরামের সদস্যরা যান সবং কলেজে। কলেজ অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলতে তাঁর ঘরে যান প্রতিনিধিরা। যদিও ঘটনার বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি কানাইলালবাবু। ঘরে সাংবাদিকদের দেখে বেজায় চটে যান অধ্যক্ষ। আব্দুল মান্নানদের সামনেই ‘সংবাদমাধ্যম সন্ত্রাস চালাচ্ছে’ বলে দাবি করেন অধ্যক্ষ। মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন আব্দুল মান্নান-সহ বাকিরা।
পরে তেমাথানির সভায় আব্দুল মান্নান অভিযোগ করেন, ‘‘অধ্যক্ষের কথা শুনে মনে হচ্ছে সিসিটিভি ফুটেজ-সহ তথ্য গোপনের চেষ্টা চলছে।’’ অধ্যক্ষ প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করতে চাইছেন না বলেও অভিযোগ করেন চঞ্চল চক্রবর্তী। পরে আব্দুল মান্নান বলেন, “অধ্যক্ষ একজন ছাত্রের মৃত্যুতে বিন্দুমাত্র বিচলতি নন বলেই মনে হচ্ছে। বরং তিনি পুলিশের মতো কথা বলছেন।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, অধ্যক্ষ তথ্য লোপাটের চেষ্টা করছেন। ওঁনার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ শুরু করা যায় কি না, সে বিষয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করব।’’
ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল ও রামপ্রসাদ সাউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy