মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চার দশকের সঙ্গী, সত্তরোর্ধ্ব মানিক মজুমদারের কালীঘাটের বাড়িতে বৃহস্পতিবার পৌঁছে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন সিবিআই অফিসারেরা। সিবিআই সূত্রের খবর, তাঁর কাছ থেকে তৃণমূলের মুখপাত্র ‘জাগো বাংলা’-র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছে। মানিকবাবু মমতার বাড়ির অফিস দেখভাল করেন।
নির্বিরোধ বলে পরিচিত মানিকবাবুর বাড়িতে আচমকা এই হানা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। দলের পক্ষ থেকে অবশ্য বিষয়টিকে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতির অন্যতম উদাহরণ’ বলে উপেক্ষা করা হয়েছে। বুধবারেই রামপুরহাটের জনসভায় দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি ছবি এঁকে এক পয়সাও নিজের অ্যাকাউন্টে নেননি। প্রয়োজনে তাঁর অ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা হোক।
এ দিনও কলকাতা বইমেলার উদ্বোধনে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমি সাত বারের সাংসদ, এক লক্ষ টাকার কাছাকাছি পেনশন পেতে পারি। তা ছাড়া বিধায়ক হিসেবেও কিছু প্রাপ্য হয়। কিন্তু আমি মাইনে নিই না। আমার চলে বইয়ের রয়্যালটি আর গানের সুর দেওয়া থেকে! কেউ কেউ আমাকে সতর্ক করে বলছেন, ‘এই যে ক্যালেন্ডার বেরোচ্ছে আবার ওরা বলবে না তো, এর থেকে কয়েক কোটি টাকা তুলছ!’ আমি বলেছি বললে বলুক, ওদের বাড়িতে ছবি, ক্যালেন্ডার পাঠিয়ে দেব।’’
সিবিআই জানিয়েছে, মানিকবাবু ‘জাগো বাংলা’-র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের অন্যতম স্বাক্ষরকারী। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি বিক্রির টাকার একটি বড় অংশ ‘জাগো বাংলা’-র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গিয়েছে। তারই বিস্তারিত হিসেব জানতে চাওয়ার জন্য মানিকবাবুকে এর আগে বার দু’য়েক চিঠি দিয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছিল বলে সিবিআইয়ের এক কর্তা জানিয়েছেন। কিন্তু, অসুস্থ বলে তিনি যাননি।
সূত্রের খবর, এ দিন ‘জাগো বাংলা’-র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য ছাড়াও চাওয়া হয়েছে মানিকবাবুর ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের হিসেবও। তৃণমূলের এক বর্তমান এবং প্রাক্তন এক সাংসদও ‘জাগো বাংলা’-র অ্যাকাউন্টের অন্যতম স্বাক্ষরকারী। সিবিআইয়ের দাবি, মানিকবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তিনি তৃণমূলের প্রাক্তন এক নেতার নাম উল্লেখ করে বলেন, মুখপত্রের যাবতীয় হিসেব রাখতেন ওই নেতা। তিনি যা করেছেন, তা ওই নেতার নির্দেশ মতোই করেছেন। সেই নেতা এখন বিজেপি-তে।
উল্লেখ্য, এর আগেও মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবি নিয়ে রাজ্যের বহু নেতা ও ব্যবসায়ীও প্রাক্তন ওই তৃণমূল নেতার নাম করেছেন। এই নেতাকেও ডেকে জেরা করা হতে পারে বলে সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে।
মুখপত্রের অন্য দুই স্বাক্ষরকারী বর্তমান ও প্রাক্তন দুই সাংসদকে এর আগে জেরা করেছে সিবিআই। আবার তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়েছে বলেও তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে।
এ দিন মানিকবাবুকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।