Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
CBI

যুব তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদকের বাড়ি সিবিআই তল্লাশি

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, অভিযানের সময় বিনয়বাবু বাড়িতে ছিলেন না। তারা কিছু ইলেকট্রনিক নথি, ফোন-ল্যাপটপ ইত্যাদি বাজেয়াপ্ত করেছে।

বিনয় মিশ্রের (ইনসেটে) বাড়িতে তল্লাশির সময় বাড়ির বাইরে সিআরপি-র পাহারা। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

বিনয় মিশ্রের (ইনসেটে) বাড়িতে তল্লাশির সময় বাড়ির বাইরে সিআরপি-র পাহারা। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৩৮
Share: Save:

গরু পাচার কাণ্ডে ব্যবসায়ী বিনয় মিশ্রের বাড়ি ও অফিসে বৃহস্পতিবার তল্লাশি চালানোর কথা জানিয়েছে সিবিআই। বিনয় যুব তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, এ দিন সকাল থেকে কলকাতার চেতলা, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ এবং কালীঘাট মন্দির সংলগ্ন তিনটি বাড়ি ও অফিসে সিআরপিকে সঙ্গে নিয়ে তল্লাশি চালায় তারা। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বিনয়বাবু বাড়িতে ছিলেন না। তারা কিছু ইলেকট্রনিক নথি, ফোন-ল্যাপটপ ইত্যাদি বাজেয়াপ্ত করেছে।

সেপ্টেম্বরের শেষে গরু পাচার সংক্রান্ত একটি মামলা রুজু করেছে সিবিআই। সেই তদন্তে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়ে জেলে রয়েছেন মূল পাচারকারী এনামুল হক। অন্য এক বিএসএফ অফিসার সতীশ কুমার সদ্য জামিন পেয়েছেন। এই মামলাতেই আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালত থেকে সমন নিয়ে তারা তল্লাশিতে গিয়েছিল বলে সিবিআইয়ের দাবি। এ দিন বিনয়ের বাড়িতে তল্লাশি চলাকালীন কলকাতা পুলিশের এক অফিসার কয়েক জন পুলিশ কর্মীকে নিয়ে সেখানে খোঁজখবর করতে এসেছিলেন। সিবিআই তাঁদের আদালতের নির্দেশ দেখানোর পর পুলিশের সেই দলটি অবশ্য ফিরে গিয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। তল্লাশি নিয়ে বিনয়ের প্রতিক্রিয়া জানতে বার বার ফোন করা হয়। তবে তাঁর ফোন বন্ধ ছিল।

সিবিআইয়ের দাবি, এনামুলের হয়ে গরু পাচারের টাকা ‘প্রভাবশালীদের’ কাছে পৌঁছে দিতেন, এমন এক ব্যক্তির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিনয়ের যোগসূত্র মিলেছে। তাদের আরও দাবি, ছ’কোটি টাকা ওই তৃণমূল নেতার কাছে পৌঁছেছিল, এমন নথি এবং তল্লাশির সময়ে মুর্শিদাবাদে কর্মরত রাজ্য পুলিশের এক ডিআইজি’র কাছে টাকা পৌঁছনোর নথিও তারা হাতে পেয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, গত পাঁচ বছরে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দুই বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন বেআইনি কারবারে এক ‘অত্যন্ত প্রভাবশালীর মুখোশ’ হিসেবে কাজ করেছেন বিনয় এবং তাঁর সঙ্গে রাজ্যের বেশ কিছু আইএএস-আইপিএস অফিসারের যোগসূত্রও মিলেছে। তদন্তকারী সংস্থার দাবি, ধীরে ধীরে গরু পাচারে ‘জড়িত’ পুলিশ কর্তাদেরও তদন্তে ‘যুক্ত’ করা হবে।

কে এই বিনয় মিশ্র

দক্ষিণ কলকাতার চেতলা এলাকার বাসিন্দা। বছর ছ’য়েক আগে ছিলেন মার্বল ব্যবসায়ী। পাশাপাশি বিনয় মিশ্র একটি অফিসে হিসেবরক্ষকের কাজ করতেন বলে ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে খবর। বিনয় ঘনিষ্ঠদের কথায়, ২০১৫ সালের পর থেকে এক যুব সাংসদের নজরে আসার পর থেকেই বিনয়ের উত্থান। ওই সাংসদের হাত ধরেই ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে উঠতে থাকেন তিনি। গত জুলাইয়ে রাজ্য যুব তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক করা হয় বিনয়কে। তাঁকে পুলিশি নিরাপত্তাও দিয়েছে রাজ্য সরকার। গত কয়েক বছরে ছা-পোষা বিনয় এখন কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক বলে দাবি করেছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। তদন্তকারীদের দাবি, গরু ও কয়লা পাচার চক্র নিয়ন্ত্রণ করতেন বিনয়। বিনয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

সিবিআই তল্লাশি প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন,‘‘রাজ্যে গরু, কয়লা, বালি পাচারে অভিযুক্ত তৃণমূলের একাংশ। বিনয় মিশ্রের মাধ্যমে সেই টাকা ভাইপোর বাড়িতে গিয়েছে। আইপিএস অফিসার, গুরুত্বপূর্ণ থানার ওসিদের এই যুব নেতা বদলি করতেন। কানে টান পড়েছে, এ বার মাথাও আসবে।’’ সদ্য তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী এ দিন টুইট করেছেন,‘এটাই হল ভাইপোর যোগ্য নেতৃত্ব এবং তার যোগ্য টিমের পরিচয়। সত্যি ভাইপো পার্টিকে একটা অন্য পর্যায়ে নিয়ে যাবে। তোলাবাজ ভাইপো হটাও।’’

আরও পড়ুন: বর্ষবরণে শুভেন্দুর জোড়া সভা নন্দীগ্রাম-কাঁথিতে, চড়ছে উত্তেজনার পারদ

তৃণমূলের হয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন কুণাল ঘোষ। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘নারদে এফআইআরে নাম রয়েছে এমন লোকেদের বিজেপির মঞ্চে দেখা যাচ্ছে। যাঁরা আত্মসমর্পণ করছেন না, তাঁদের হেনস্থা করা হচ্ছে।’’ কুণাল আরও বলেন, ‘‘বাবুল আগেও প্রমাণহীন অভিযোগ করেছিলেন। অভিষেককে ইঙ্গিত করে এই অপপ্রচার করা হচ্ছে। আদালত তাঁকে নিষেধ করেছিল। কিন্তু তিনি তা না মানায় আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’

শাসক দলের শীর্ষ স্তরে অবাধ প্রভাব থাকা বিনয়ের রাসবিহারী, চেতলা ও কালীঘাটের বাড়িতে এ দিন সকালেই পৌঁছে যান তদন্তকারীরা। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে তাঁরা তল্লাশি চালান। কালীঘাটের একটি হোটেলে ওই যুব নেতা নথিপত্র লুকিয়ে রাখতেন বলে সিবিআইয়ের দাবি। সেই হোটেলেও তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছে বলে সিবিআই জানিয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘পুত্র’ শুভেন্দুর সঙ্গে বিধানসভায় লড়তে তৈরি হচ্ছেন ‘নন্দীগ্রামের মা’

সিবিআই জানাচ্ছে, কয়লা পাচার কাণ্ডে গণেশ বাগারিয়ার বাড়িতে তল্লাশির পরেই কলকাতা ছাড়েন বিনয়। গণেশ বাগারিয়া তল্লাশির সময় দুবাই চলে গিয়েছিলেন। বুধবার তিনি কলকাতায় ফিরেছেন। কিন্তু বিনয় এখনও কলকাতার বাইরে। তাঁর নামে লুক আউট নোটিস জারি করেছে সিবিআই। তদন্তকারীদের আশঙ্কা, নেপাল বা বাংলাদেশ হয়ে তিনি বিদেশ চলে যেতে পারেন। তবে সিবিআআইয়ের আশা, বিনয় মিশ্র তদন্তে সহযোগিতা করবেন। কোন কোন প্রভাবশালীর হয়ে তিনি এনামুলের কাছ থেকে গরু পাচারের টাকা নিয়েছিলেন, তা তদন্তকারীদের তিনি জানাবেন বলেই মনে করছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা।

এ দিন হুগলির কোন্নগর এলাকায় লালার হিসাবরক্ষক নীরজ সিংহের বাড়িতে সকালে হানা দেওয়া হয়েছে বলে সিবিআই জানিয়েছে। নীরজও বেপাত্তা বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। এ দিন নীরজের বাড়ির অফিস থেকে বহু নথি উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। নীরজ ও তাঁর ভাই অমিত কয়লা পাচার কাণ্ডে রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতা ও পুলিশ-প্রশাসনের অফিসারদের কাছে টাকা পৌঁছে দিতেন বলে দাবি করেছেন তদন্তকারীরা।

সম্প্রতি কলকাতার সিবিআইয়ের সদর দফতরে নীরজকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সিবিআইয়ের এক কর্তার দাবি, কয়লা ও গরু পাচার — দু’টি মামলাতেই বিনয় মিশ্রের যোগ রয়েছে। সিবিআই সূত্রের খবর, এ দিন বিনয় ও নীরজের পরিবারের হাতে নোটিস দিয়ে তাঁদের দু’জনকে ৪ জানুয়ারি কলকাতার নিজাম প্যালেসে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CBI tmc Cattle Smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE