Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
CBI

শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে গরু সিন্ডিকেটের যোগ, বিএসএফ কর্তার নালিশেও কাজ হয়নি

গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের চিহ্নিত করার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছেন সিবিআই আধিকারিকরা।

সিবিআই জানতে পেরেছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কার্যত বিনা বাধায় কয়েক লাখ গবাদি পশুকে সীমান্ত পার করিয়েছে বিশু শেখের সিন্ডিকেট। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সিবিআই জানতে পেরেছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কার্যত বিনা বাধায় কয়েক লাখ গবাদি পশুকে সীমান্ত পার করিয়েছে বিশু শেখের সিন্ডিকেট। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সিজার মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:১০
Share: Save:

গরুপাচার নিয়ে নিজের বাহিনীরই এক শ্রেণির আধিকারিকের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়েছিলেন শীর্ষ এক বিএসএফ-কর্তা। ২০১৬ সালে ওই আধিকারিক বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারে কর্মরত ছিলেন। নিজের বাহিনীর শীর্ষকর্তা থেকে শুরু করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেও নালিশ জানিয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, ওই নালিশের ভিত্তিতে কেউ কোনও পদক্ষেপ করেনি। উল্টে অভিযোগকারী ওই আধিকারিকেরই বদলি হয়ে গিয়েছিল। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গরুপাচার এবং পাচারকারী চক্রের সঙ্গে বিএসফের যোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে এ রকমই এক তথ্য।

২০১৮ সালের প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানের সময়ে জানা যায় ওই আধিকারিকের পাঠানো চিঠির কথা। সিবিআই সূত্রে খবর, ওই চিঠিতে সবিস্তার বিবরণ দেওয়া ছিল, দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন সেক্টরে, বিশেষ করে মালদহে (মালদহ সেক্টরের মধ্যেই রয়েছে মুর্শিদাবাদে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের একটা বড় অংশ যা গরুপাচারের করিডর হিসাবে কুখ্যাত ছিল) কী ভাবে দিনে-রাতে হাজার হাজার গরু পাচার করা হচ্ছে। সিবিআই সূত্রের খবর, ওই চিঠিতে বেশ কিছু তথ্যপ্রমাণ দিয়ে জানানো হয়েছিল কী ভাবে বিএসএফের-কর্তাদের একটা বড় অংশ সরাসরি মদত দিচ্ছেন ওই পাচার সিন্ডিকেটকে।

সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের দাবি, শীর্ষ বিএসএফ-কর্তারা ওই চিঠিকে কোনও গুরুত্ব দেননি। এমনকি ভিজিল্যান্স শাখা (যে শাখা বাহিনীর কর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত করে) কোনও ধরনের তদন্তও করেনি ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি পাঠানো ওই অভিযোগের। বিএসএফের তখনকার অধিকর্তা (ডিজি)-র উদ্দেশে লেখা ওই্ চিঠিতে বিএসএফ আধিকারিক অভিযোগ করেন, তিনি প্রথম দিকে পাচার রোখার চেষ্টা করলে তাঁকে সরাসরি ‘ফ্রন্টিয়ার হেড কোয়ার্টার’ অর্থাৎ আঞ্চলিক সদর দফতর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়, গবাদি পশু পাচার রোখার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে।

আরও পড়ুন: বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি হলেন মুকুল রায়, পদ হারিয়ে ক্রুদ্ধ রাহুল

সিবিআই সূত্রের খবর, ওই চিঠিতে সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছিল, এনামুল হক ওরফে বিশু শেখের সিন্ডিকেট কী ভাবে গবাদি পশু পাচারের কোটি কোটি টাকার ব্যাবসা চালায়। সূত্রের খবর, সিবিআই আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই কথা বলেছেন ওই বিএসএফ আধিকারিকের সঙ্গে। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত কার্যত বিনা বাধায় কয়েক লাখ গবাদি পশুকে সীমান্ত পার করিয়েছে বিশু শেখের সিন্ডিকেট। প্রাথমিক তদন্তে সিবিআই আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, গবাদি পশু প্রতি লাভের অঙ্ক ছিল বিশাল।

আরও পড়ুন: দেশবিরোধী কোনও সংগঠনের ফাঁদ এড়ান, বললেন ইমামরা

প্রমাণ মাপের একটি গবাদি পশু সীমান্ত পার করতে পারলেই সমস্ত খরচখরচা বাদ দিয়েও বিশুর সিন্ডিকেটের মুনাফা হত ৪০ হাজার টাকা। এক সিবিআই আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রথমে আমাদেরও অস্বাভাবিক লেগেছিল মুনাফার অঙ্কটা। কিন্তু পরে বিশু ওরফে এনামুলকে জেরা করে সিবিআই কর্তারা নিশ্চিত হন, মুনাফার অঙ্ক ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকার কম ছিল না প্রতি গবাদি পশুতে।” আর সেই বিশাল অঙ্কের মুনাফা দিয়েই মাত্র তিন বছরেই কয়েকশো কোটি টাকার মালিক হয় এনামুল।

সিবিআই সূত্রে খবর, ওই বছরই মেসার্স হক ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি কোম্পানি খুলে পাচারের টাকা অন্য ব্যবসায় খাটিয়ে ‘সাদা’ করা শুরু করে এনামুল। ওই কোম্পানিতেই চাকরি করতেন পাচারে অভিযুক্ত এক বিএসএফ কমান্ডান্ট-এর ছেলে। পরের বছরই তৈরি হয় জেএইচএম এক্সপোর্ট নামে অন্য একটি কোম্পানি। তৈরি হয় জেএইচএম গ্রুপ অফ কোম্পানিজ। শাখা খোলা হয় বাংলাদেশ এবং দুবাইতে। সিবিআই আধিকারিকদের দাবি, ওই কোম্পানিগুলো সবটাই ‘আই ওয়াশ’। গরু পাচারের কালো টাকা ভারতের বাইরে পাঠাতে ব্যবহার করা হয়েছে ওই কোম্পানিগুলিকে। যদিও এনামুল ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির দাবি, জেএইচএম গ্রুপে এনামুল যুক্ত নন। ওই কোম্পানি তাঁর ভাইয়ের। কলকাতার বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের এমকে পয়েন্টে জেএইচএম গ্রুপ অফ কোম্পানিজের কর্পোরেট দফতর। ওই ঠিকানাতেই রয়েছে হক ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড এবং এ বছর তৈরি এনামুলের নয়া কোম্পানি ইএম ট্রেডার্স প্রাইভেট লিমিটেড। শেষের দু’টি কোম্পানিরই ডিরেক্টর হিসেবে রয়েছে মহম্মদ এনামুল হকের নাম।

সিবিআই আধিকারিকদের একাংশের ইঙ্গিত, বিএসএফের কমান্ডান্ট পদমর্যাদা থেকে শুরু করে আরও উপর তলায় সরাসরি যোগ ছিল এনামুলের। আর সেই কারণেই কমান্ডান্ট পদমর্যাদার আধিকারিকের নালিশও অগ্রাহ্য করা হয়েছে। আর সেই সূত্র ধরেই গরু পাচারের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের চিহ্নিত করার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করেছেন সিবিআই আধিকারিকরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CBI BSF Cattle Smuggling Enamul Haque
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE