Advertisement
E-Paper

খুনের আগে কথা নিকল ও মোর্চা নেতার

একটি মোবাইল ফোন এবং তার দীর্ঘ কল-লিস্ট। আপাতত এই সূত্রেই মদন তামাঙ্গ খুনের কিনারা করতে চাইছে সিবিআই। গোয়েন্দাদের দাবি, খুনের ঘটনায় যে মোর্চা নেতারা জড়িয়ে, তার প্রমাণ মিলেছে ওই কল-লিস্টেই। কী সেই যোগসূত্র? কেন্দ্রীয় ওই গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের দাবি—মদন তামাঙ্গ খুনের মিনিট কয়েক আগেও ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত নিকল তামাঙ্গের সঙ্গে এক মোর্চা নেতার দীর্ঘ কথোপকথনের প্রামাণ্য তথ্য রয়েছে ওই মোবাইলে।

সুনন্দ ঘোষ ও কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৫ ০৩:৫৯
গ্রেফতার হওয়ার পরে দার্জিলিং আদালতে নিকল তামাঙ্গ। —ফাইল চিত্র।

গ্রেফতার হওয়ার পরে দার্জিলিং আদালতে নিকল তামাঙ্গ। —ফাইল চিত্র।

একটি মোবাইল ফোন এবং তার দীর্ঘ কল-লিস্ট। আপাতত এই সূত্রেই মদন তামাঙ্গ খুনের কিনারা করতে চাইছে সিবিআই। গোয়েন্দাদের দাবি, খুনের ঘটনায় যে মোর্চা নেতারা জড়িয়ে, তার প্রমাণ মিলেছে ওই কল-লিস্টেই।

কী সেই যোগসূত্র? কেন্দ্রীয় ওই গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রের দাবি—মদন তামাঙ্গ খুনের মিনিট কয়েক আগেও ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত নিকল তামাঙ্গের সঙ্গে এক মোর্চা নেতার দীর্ঘ কথোপকথনের প্রামাণ্য তথ্য রয়েছে ওই মোবাইলে। যার সূত্র ধরেই পাঁচ বছর আগের এই খুনে প্রথম সারির মোর্চা নেতাদের সন্দেহের বাইরে রাখতে পারছেন না গোয়েন্দারা।

ঠিক কী ঘটেছিল সে দিন? দার্জিলিঙের ক্লাবসাইড রোডে প্ল্যান্টার্স ক্লাবের সামনে পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেই সে দিন সভা শুরুর মুখে একটি চেয়ারে একাই বসেছিলেন গোর্খা লিগ নেতা মদন তামাঙ্গ। হামলাটা হয় সেই সময়েই।

অভিযোগ, দীনেশ রাই এবং নিকলই ছিলেন হামলার পুরোভাগে। সিবিআইয়ের দাবি, ধস্তাধস্তির সময়ে পকেট থেকে পড়ে গিয়েছিল নিকলের সেই ফোন। আর তা হাতে আসার পরেই অনেক কিছুই ‘পরিষ্কার’ হয়ে গিয়েছিল বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। দার্জিলিঙের কোথায়, কী ভাবে মদন তামাঙ্গকে খুন করা হবে— সেই ছকও নাকি অনেক আগেই তৈরি হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি সিবিআই-এর।

তামাঙ্গ-খুনে সম্প্রতি সিবিআই যে ফাইনাল সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দিয়েছে তাতে নাম জড়িয়েছে মোর্চা নেতা তথা গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর প্রধান বিমল গুরুঙ্গ-সহ ২৩ জনের নাম। যাঁদের অনেকেই মোর্চার প্রথম সারির নেতা। অথচ মদন তামাঙ্গ খুনের দিন বিমল গুরুঙ্গ নাকি দার্জিলিঙেই ছিলেন না।

তা হলে কোথায় ছিলেন তিনি? গোয়েন্দাদের দাবি, নিজেদের সন্দেহের বাইরে রাখতে পূর্বপরিকল্পিত ভাবেই কয়েক জন ঘনিষ্ঠ নেতাকে নিয়ে খুনের দিন তিনেক আগেই কালিম্পঙে নেমে গিয়েছিলেন গুরুঙ্গ।

চার্জশিটেও এর স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, গুরুঙ্গরা আবার দার্জিলিঙে ফিরে আসেন খুনের তিন দিন পরে। অর্থাৎ দিন সাতেক দার্জিলিঙ-ছাড়া ছিলেন গুরুঙ্গরা। এখানেও ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছে সিবিআই।

তবে গোয়েন্দারা বলছেন, মোর্চা নেতাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশে নিকলের ওই খোয়া যাওয়া মোবাইলই তাঁদের আসল হাতিয়ার। উদ্ধার হওয়া ওই মোবাইল, তার ‘কল-রেকর্ড’, কয়েক জনের সাক্ষ্য এবং একটি ‘অডিও টেপ’—বিমল গুরুঙ্গ, রোশন গিরিদের মতো প্রভাবশালী নেতাদের সেই ‘ষড়যন্ত্র’ ‘অনেকটাই স্পষ্ট’ করে দিয়েছিল বলে জানাচ্ছেন সিবিআই কর্তারা।

মোর্চার তরফে রোশন গিরি, থেকে হরকাবাহাদুর ছেত্রী— শীর্ষ নেতাদের অধিকাংশই অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রেই আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এ সব মিথ্যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে সে জন্যই।’’

পাল্টা দাবি করে সিবিআইয়ের কর্তারা বলছেন, ‘‘মনে রাখবেন আমরা কখনও চাপের মুখে কাজ করি না কিন্তু।’’

কল-লিস্ট খতিয়ে দেখে সিবিআইয়ের দাবি, ওই দিন, ঘটনার খানিক আগেও নিকলের সঙ্গে এক মোর্চা নেতার মোবাইলে কথা হয়। তাঁদের পেশ করা চার্জশিটে সিবিআই জানাচ্ছে— মোর্চার মাঝারি মাপের সেই নেতা মারফতই নিকলের কাছে নির্দেশ পাঠানো হয়েছিল।

মদন-হত্যা তদন্তের শুরুটা করেছিল সিআইডি। সরকারি সূত্রের খবর, সিআইডি বেশ কিছু তথ্য, কথোপকথনের অডিও টেপও সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু, রহস্যজনক ভাবে পিনটেল ভিলেজে সিআইডি-র হেফাজত থেকেই পালিয়ে গিয়েছিল নিকল। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এর পরেই তদন্ত শুরু করে সিবিআই।

সিবিআইয়ের দাবি, নিকলের ফোনের কল লিস্ট ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, খুনের দিন সকাল পর্যন্ত একটি বিশেষ নম্বর থেকে ক্রমাগত কথা বলা হয়েছে তার সঙ্গে।

কিন্তু, সুবাস ঘিসিঙ্গকে হটিয়ে গুরুঙ্গ যখন পাহাড়ে ‘রাজ’ কায়েম করতে চলেছেন, সেই সময়ে কেন মদন তামাঙ্গের মতো ব্যক্তিত্বকে খুন করার প্রয়োজন হল তাঁদের?

তদন্তকারী সংস্থার দাবি, বিমল গুরুঙ্গ ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠ অনুগামীর ‘হাটে হাঁড়ি ভাঙা’ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিচ্ছিলেন অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের সভাপতি মদন তামাঙ্গ।

দার্জিলিঙের অভিজাত ব্যবসায়ী তথা পাহাড়ি এলাকায় একাধিক হোটেল, চা বাগান ও প্রচূর সম্পত্তি থাকার সুবাদে পাহাড়ের অর্থনীতিতে যে চোরা টাকার স্রোত বইছে, তা নিয়েও ওয়াকিবহাল ছিলেন এই প্রবীণ গোর্খা লিগ নেতা। দলের তেমন প্রভাব না থাকলেও গুরুঙ্গের ‘মুখের উপরে’ সত্যি কথা বলতে তিনিই যে পাহাড়ে সেরা বাজি, তা জানতেন সকলেই। গোয়েন্দাদের অনুমান, হাটে হাঁড়ি ভাঙার জন্য ২০১০ সালের ২১ মে দিনটিকেই বেছে নিয়েছিলেন মদন। সিবিআইয়ের দাবি, মুখোশ খুলে যাওয়ার সেই ‘ভয়’ থেকেই খুন করা হতে পারে মদন তামাঙ্গকে।

Kishore Saha CBI Nikal Tamang GTA GJM police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy