সময় পেরোচ্ছে। কলকাতা হাই কোর্টের রায়ের পরে প্রায় দু’সপ্তাহ অতিক্রান্ত হলেও, দেখা নেই একশো দিনের কাজের প্রকল্পে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের। তবে এর মধ্যেই ফের এক বার একশো দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে রাজ্যে দল পাঠাচ্ছে কেন্দ্র। তারা একশো দিনের প্রকল্প-সহ গ্রামোন্নয়নের একাধিক কাজ খতিয়ে দেখবে। ফলে বরাদ্দের আশা ছাড়তে নারাজ রাজ্য। তাই জল কোন দিকে গড়ায়, তা বুঝে নিয়ে তবে কেন্দ্রকে এ ব্যাপারে লিখিত বার্তা পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু হবে বলে দাবি প্রশাসনিক সূত্রের। যদিও স্বচ্ছতার স্বার্থে শর্তারোপের যে ছাড় কেন্দ্রকে কোর্ট দিয়েছে, তা রাজ্যের উপর অতিরিক্ত চাপ তৈরি করবে কি না, তা নিয়ে চর্চা রয়েছে আধিকারিক মহলে।
কয়েকটি জেলা প্রশাসনকে রাজ্য জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় দল এসে জেলাশাসক, জেলা পরিষদের সিইও-সহ বাকি পদাধিকারীদের সঙ্গে বৈঠক করবে। ফলে বাতিল হওয়া জব কার্ডের তালিকা, রেজিস্টার, কেস-রেকর্ড, মাস্টার রোল (যোগ্য শ্রমিকদের), প্রোকিয়োরমেন্ট ফাইল— প্রকল্পের এমন সব কিছু হাতের কাছে রাখতে হবে। যাতে কেন্দ্রীয় দলের প্রতিনিধিরা চাইলেই তা দেখানো যায়। আলিপুরদুয়ার, বাঁকুড়া, বীরভূম, নদিয়া, পূর্ব বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা এবং পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে। অবশ্য, শুধু এ রাজ্যেই নয়, মোট ৩০টি রাজ্যে গ্রামোন্নয়নের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে কেন্দ্রীয় দল। এর আগে অনেকগুলি কেন্দ্রীয় দল ঘুরে গিয়েছে এই রাজ্যে। তার পরেও বরাদ্দ বাধামুক্ত হয়নি। তবে হাই কোর্টের রায়ের পরে এই সফরের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে বলে মনে করছেন আধিকারিকদের একাংশ।
রাজ্য প্রশাসন দাবি করেছে, এ পর্যন্ত দেড়শোরও বেশি কেন্দ্রীয় দল রাজ্যে পাঠিয়েছে কেন্দ্র। তারা যা চেয়েছে, সেই সব তথ্যই তাদের দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের সুপারিশ অনুযায়ী, সব ধরনের সংশোধনমূলক পদক্ষেপও করেছে রাজ্য। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, “এই কেন্দ্রীয় দলের আসা নিয়ে আমরা অভ্যস্ত। ওরা কিছু খুঁজে না পেলেও দল পাঠায়। কিন্তু কাজের কাজ হয় না। এখন যে হেতু আদালতের রায় আছে বরাদ্দ ছাড়ার ব্যাপারে, তাই এ বারে ওরা কী করে দেখা যাক।”
গত ১৮ জুন একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বরাদ্দ ছাড়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। তাতে ১ অগস্ট থেকে সেই বরাদ্দ চালু করার কথা কেন্দ্রের। কিন্তু এখনও কেন্দ্রের তরফে এ ব্যাপারে কোনও ইঙ্গিত বা বার্তা রাজ্যের কাছে আসেনি বলেই প্রশাসনের একাংশের দাবি।
হাই কোর্টের রায়ের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, যে দিন থেকে কেন্দ্র টাকা বন্ধ করেছে, তবে থেকে বকেয়া হিসাবে বরাদ্দ দিতে হবে। ২০২২ সালের মার্চ মাস থেকে এই প্রকল্পে বরাদ্দ বন্ধ হওয়ার পর থেকে জবকার্ড থাকা শ্রমিকদের স্বার্থে ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্প চালু করেছিল রাজ্য। তাতে এখনও পর্যন্ত প্রায় ১৬,৯১৯ কোটি টাকা নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ করেছে রাজ্য। অন্য দিকে, একশো দিনের কাজে মোট বকেয়া রয়েছে প্রায় ৬৯১৯ কোটি টাকা। তার মধ্যে শ্রম-খাতে বকেয়া প্রায় ৩৭৩২ কোটি টাকা। রাজ্যের অভিযোগ ছিল, সব ধরনের পদক্ষেপ করার পরেও পশ্চিমবঙ্গের বরাদ্দ অন্য রাজ্যকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের এক কর্তার দাবি, “কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের সঙ্গে বৈঠকের জন্য একাধিক বার সময় চেয়েছিল রাজ্য। প্রতিশ্রুতি দিলেও, বৈঠকের সেই সময় এখনও মেলেনি। বৈঠকটি হলে রাজ্যের সব পদক্ষেপ ও অবস্থান বুঝিয়ে বলা সম্ভব হত নতুন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)