E-Paper

বাহিনী এলেও রাশ কই সন্ত্রাসে, প্রশ্ন দিনহাটার

দিনহাটা-১, দিনহাটা-২ এবং সিতাই— দিনহাটা মহকুমার তিনটি ব্লকেই রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত, যার কিছুটা উন্মুক্ত। বিভিন্ন পাচার এখনও পুরো বন্ধ হয়নি।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০২৩ ০৭:৪৩
BSF

—প্রতীকী ছবি।

রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যোগ হয়েছে চার কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী। সকাল-বিকেল এলাকা ধরে চলছে ‘রুট-মার্চ’। কিন্তু থামছে না অশান্তি। এখনও রাজ্যেরও অন্যতম উত্তপ্ত এলাকা হয়ে রয়েছে দিনহাটা মহকুমা। মঙ্গলবার রাতেও বড় শৌলমারিতে সিপিএম প্রার্থীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। সিপিএম কর্মী মনোয়ার হোসেন তিরবিদ্ধ হয়েছেন। সেই রাতেই সাহেবগঞ্জে এক বিজেপি প্রার্থীর বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। দু’ক্ষেত্রেই অভিযুক্ত তৃণমূল। শাসক দল সেই অভিযোগ মানেনি। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এলাকায় শান্তি ফিরবে কি? সরাসরি জবাব না দিয়ে কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘কিছু ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই ব্যবস্থা নিয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি। গন্ডগোল আরও যাতে কমানো যায়, সেই বিষয়ে নজর রাখা হচ্ছে।’’

দিনহাটা-১, দিনহাটা-২ এবং সিতাই— দিনহাটা মহকুমার তিনটি ব্লকেই রয়েছে বাংলাদেশ সীমান্ত, যার কিছুটা উন্মুক্ত। বিভিন্ন পাচার এখনও পুরো বন্ধ হয়নি। তাই কাঁচা টাকা এবং তা দখলের লড়াই থাকছেই। গীতালদহে সম্প্রতি বাবু হক নামে যে তৃণমূল কর্মী খুন হন, তিনি পাচারে জড়িত বলে দাবি করেছিল বিজেপি। আবার ওই খুনে বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতী আনা হয়েছিল বলে অভিযোগ তৃণমূলের। তাতেই ‘স্পষ্ট’, সীমান্তের এই এলাকার চিত্র।

দিনহাটা মহকুমার দুই তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ এবং জগদীশ বর্মা বসুনিয়ার সঙ্গে টক্কর চলে ভেটাগুড়ির বাসিন্দা বিজেপির নিশীথ প্রামাণিকের, যিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, এই টক্করেও উত্তাপ বাড়ে।

সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়ই বলেন, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপি— দু’পক্ষের নেতারা সব সময় গন্ডগোলের ইন্ধন দিচ্ছেন।’’ উদয়নের অবশ্য দাবি, ‘‘দিনহাটায় খুব বেশি গন্ডগোল হয়েছে, তা নয়। যা হয়েছে, প্রত্যেকটি বিজেপির জন্য।’’ নিশীথের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি সুকুমার রায় পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘তৃণমূলের মন্ত্রীর জন্যই সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে দিনহাটা।’’

রাজ্য প্রশাসনের হিসাবে কোচবিহারে রাজ্যের মধ্যে স্পশর্কাতর বুথের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি (১৩.২৯ শতাংশ)। কেন্দ্রীয় বাহিনী এলে, হাল কিছুটা ফিরবে বলে আশায় ছিলেন দিনহাটাবাসী। জওয়ানদের দিয়ে গীতালদহ, ভেটাগুড়ির মতো উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় ‘রুট-মার্চ’ হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি যেখানে, রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সেখানে জওয়ানেরাও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন। তাতেও সমস্যা মিটছে না কেন? বিরোধীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে মহকুমার দুই থানা— দিনহাটা ও সাহেবগঞ্জে অধিকাংশ সময় বসিয়ে রাখা হচ্ছে। নির্দিষ্ট কিছু রাস্তায় ‘রুট-মার্চ’ করিয়ে তাদের ফেরানো হচ্ছে।

অভিযোগ উড়িয়ে জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই এলাকায় যারা ঝামেলা পাকায়, তাদের অধিকাংশ স্থানীয়। এলাকার ঘাঁতঘোঁত জানে। তা বাহিনীর জানা সম্ভব নয়। তা ছাড়া, এলাকায় কিছু বেপরোয়া দুষ্কৃতীও রয়েছে।’’ ওই পুলিশকর্তার আশ্বাস, ‘‘অশান্তি কমবে।’’

‘‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই,’’ মন্তব্য গীতালদহের বাসিন্দা মইনুল হকের। মইনুলের দাবি, ‘‘এখানে সবাই দুষ্কৃতী নন। কিন্তু রাজনীতির জন্য গন্ডগোলে জড়িয়ে পড়েন। আমরা চাই, পুলিশ-কেন্দ্রীয় বাহিনী নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করুক।’’

(তথ্য সহায়তা: সুমন মণ্ডল)

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Dinhata central force West Bengal Panchayat Election 2023

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy