আবাস যোজনার নাম ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য সঙ্ঘাতের আবহ। ফাইল চিত্র
কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নামবদল করে সাধারণ মানুষকে রাজ্যের তৃণমূল সরকার ভুল বোঝাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। এ বার সেই অভিযোগে সাড়া দিয়ে কেন্দ্রের তরফে রাজ্যকে জানানো হয়েছে, আবাস যোজনায় প্রধানমন্ত্রীর নাম যুক্ত না করলে কেন্দ্র এই প্রকল্পে আর টাকা দেবে না। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পক্ষে এই মর্মে নবান্নকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলেও কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে জানা গিয়েছে।
২০১৬-১৭ আর্থিক বছর থেকে রাজ্যে চালু হয় বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্প। মূলত বাড়ি না থাকলে বা মাটির বাড়ি থাকলেই প্রকল্পটির সুবিধা পান উপভোক্তরা। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে জানা গিয়েছে, নামবদল নিয়ে ২০১৭ সালের ৩১ অগস্ট চিঠি দেওয়া হয় রাজ্যকে। এর পরে ২০২২ সালের ১২ মে আরও একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তার পরেও রাজ্যের থেকে সদুত্তর না পেয়েই এ বার টাকা দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। একই সঙ্গে কেন্দ্রের নতুন প্রকল্প ‘আবাস প্লাস’ বাবদও বাংলাকে কোনও টাকা দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই বছরে আবাস যোজনার টার্গেট এখনও কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়নি। কেন্দ্র নবান্নকে যে চিঠি পাঠিয়েছে, তাতে রাজ্য বাংলার বদলে প্রধানমন্ত্রীর নাম ওই যোজনায় যুক্ত না করা পর্যন্ত নতুন টার্গেট দেওয়া হবে না বলেও উল্লেখ রয়েছে বলে সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতিই তৃণমূল সাংসদদের একটি প্রতিনিধি দল দিল্লিতে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের সঙ্গে দেখা করে। সেখানে আবাস যোজনা বাবদ কেন রাজ্যের টাকা আটকে রাখা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এর পরেই গিরিরাজের মন্ত্রক চিঠি পাঠাল নবান্নকে। কেন্দ্রীয় সরকার সূত্রে খবর, চিঠিতে এটাও বলা হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় প্রকল্প রাজ্যে চালানোর যে নিয়মাবলী রয়েছে, নামবদল তারও পরিপন্থী। রাজ্যে আবাস যোজনার নামে ‘প্রধানমন্ত্রী’ বদলে ‘বাংলা’ করায় নিয়মভঙ্গ হয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে।
রাজ্য বিজেপি অনেক দিন ধরেই এই অভিযোগ করে আসছিল। বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নামবদল নিয়ে বার বার সরব হয়েছেন দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক অরবিন্দকুমার মিনার নামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে চিঠি লিখে নালিশও করেন গত ২১ এপ্রিল। অভিযোগ ছিল, তিনটি কেন্দ্রীয় প্রকল্প— প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, স্বচ্ছ ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার নাম যথাক্রমে বাংলা আবাস যোজনা, মিশন নির্মল বাংলা এবং বাংলা গ্রামীণ সড়ক যোজনা বলে উল্লেখ করে বাস্তবায়িত করা হচ্ছে। এটাকে ‘ইচ্ছাকৃত এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলেও দাবি করেন শুভেন্দু।
কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাবদ রাজ্যের প্রাপ্য যে সময় মতো মেটাচ্ছে না, তা নিয়ে সম্প্রতি সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। একশো দিনের কাজের টাকা না পাওয়া নিয়ে আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। গত ৩০ মে মমতা বলেন, ‘‘পাঁচ মাস এই টাকা বন্ধ রেখে নোংরা রাজনৈতিক খেলা খেলছে কেন্দ্রীয় সরকার। এটা আমাদের প্রাপ্য।’’ দলের কর্মীদের নির্দেশ দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘কেন মানুষ একশো দিনের কাজের টাকা পাচ্ছেন না? ‘বিজেপি জবাব দাও, প্রধানমন্ত্রী জবাব দাও’, এই স্লোগানে গ্রাম ও শহরে এই আন্দোলন হবে।’’
কেন্দ্র কেন এই প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে না তার জবাব দিতে গিয়ে আবার অন্য অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। সম্প্রতি কলকাতা সফরে এসে নড্ডা বলেছিলেন, ‘‘তিন বছর ধরে কেন্দ্রকে এই প্রকল্পের হিসাব পাঠায়নি রাজ্য। মমতা দিদি কি হিসাব দিতে ভুলে গিয়েছেন?’’ সঙ্গে নড্ডার সংযোজন ছিল, ‘‘যে কোনও প্রকল্পের টাকা পেতে গেলে সময়ে হিসাব দিতে হয়। কেন্দ্র যদি হিসাব না পেয়ে টাকা পাঠায় তবে সেটা ভুল হবে। সেই ভুল করবে না কেন্দ্রীয় সরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy