Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

আরও বাহিনীর প্রস্তাব কেন্দ্রের

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র অবশ্য এ-ও বলছে যে, পাহাড়ের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই মমতা যে ভাবে উত্তাপ আরও বাড়িয়েছেন, তাতে খুশি নন মন্ত্রকের শীর্ষকর্তারা। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারে বলে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৭ ০৪:০৮
Share: Save:

পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের পাশেই দাঁড়াল নরেন্দ্র মোদীর সরকার।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব মেহর্ষি শনিবার পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। অশান্ত পাহাড়কে শান্ত করার জন্য রাজ্যের যা প্রয়োজন, তার সবই দেওয়া হবে বলে নবান্নকে জানিয়েছে নর্থ ব্লক। সেখানে আরও আধাসেনা দরকার কিনা, তা জানতে চেয়েছে কেন্দ্র।

এই মুহূর্তে পাহাড়ে ৫-৬ কোম্পানি আধাসেনা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী পাহাড় ছাড়ার পরেই বিমল গুরুঙ্গ যে ভাবে অনির্দিষ্টকাল বন্‌ধ ডেকেছেন, তাতে ক্ষুব্ধ রাজ্য আরও ১০ কোম্পানি আধা সেনা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নবান্ন সূত্রে বলা হচ্ছে, মোর্চার আন্দোলন যাতে কার্শিয়াং বা কালিম্পঙে ছড়িয়ে না পড়ে, সেই জন্যই বাড়তি বাহিনী মোতায়েন করার কথা ভাবা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্র অবশ্য এ-ও বলছে যে, পাহাড়ের উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই মমতা যে ভাবে উত্তাপ আরও বাড়িয়েছেন, তাতে খুশি নন মন্ত্রকের শীর্ষকর্তারা। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারে বলে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় দার্জিলিং পাহাড় এমনিতেই খুবই স্পর্শকাতর। কোনও রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে সেখানকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত হোক, চায় না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

মন্ত্রকের এক কর্তার মতে, সাম্প্রতিক ভোটে পাহাড়ে অশান্তি হয়নি। কিন্তু তাতে মোর্চার পায়ের তলার মাটি যে অনেকটাই সরেছে, সেটা বিলক্ষণ বুঝেছেন গুরুঙ্গ। এই পরিস্থিতিতে বাংলা ভাষা পড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকে আঁকড়ে ধরেন তিনি। তৃণমূলও ভোটের ফলে উৎসাহিত হয়ে আরও আক্রমণাত্মক ভাবে পাহাড়ে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টায় নামে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতির অবনতি হয়। যার জন্য মোর্চা এবং তৃণমূল দু’পক্ষই দায়ী বলে মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এক কর্তার কথায়, ‘‘সুবাস ঘিসিঙ্গের আন্দোলনেও কখনও সেনা নামাতে হয়নি। অথচ এখন কী এমন ঘটল যে ছয় কলাম সেনা নামাতে হলো?’’

পাহাড়ে মোর্চার জোটসঙ্গী বিজেপি। ফলে তারা গুরুঙ্গের পাশে দাঁড়ানোরই পক্ষপাতী। সেটা স্পষ্ট করে দিয়ে দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া আজ বলেন, ‘‘শান্তি ফেরাতে মুখ্যমন্ত্রীর উচিত বিমল গুরুঙ্গের সঙ্গে কথা বলা।’’ যদিও এই প্রস্তাবও কিঞ্চিৎ নরমপন্থী অবস্থান বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারাও বলছেন, এখন পাহাড় নিয়ে রাজনীতি করা অনুচিত।

আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, জাতীয় নিরাপত্তার কারণে রাজ্যকে সমর্থন করা ছাড়া কেন্দ্রের অন্য পথ নেই। কারণ, দার্জিলিঙে ক্রমাগত হিংসাত্মক আন্দোলন চলতে থাকলে তা আর একটি কাশ্মীর হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। তাই পৃথক গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবি জানিয়ে গুরুঙ্গ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে চিঠি দিলেও এক্ষুনি তা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে না কেন্দ্র। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন খোদ মোদী।

এ দিনও পাহাড়ে সেনা ছিল। তবে তারা ফ্ল্যাগমার্চ করেনি। শুধু কয়েকটি উত্তেজনাপ্রবণ এলাকায় গাড়ি করে টহল দিয়েছে। আরও দিন দু’য়েক সেনা থাকবে বলে জানা গিয়েছে। মোদী সরকার সূত্রের খবর, পাহাড়ে শান্তি ফিরলে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের কথা ভাবছে কেন্দ্র। রাজনাথ তিন সদস্যের একটি বিশেষ কমিটি গড়ার ভাবনাচিন্তাও শুরু করেছেন। যদিও নবান্ন এখন ত্রিপাক্ষিকের প্রস্তাব খারিজ করেছে। রাজ্যের মতে, ত্রিপাক্ষিক চুক্তির প্রথম শর্ত ছিল পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখা। তা লঙ্ঘিত হলে বৈঠক হবে কী করে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE