Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সময়ে সক্রিয় হয়নি রাজ্য, দাবি কেন্দ্রের

প্রাক্তন মার্কিন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টন যে দিন কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, সে দিনই তিনি পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের পূর্বাঞ্চলে কী ভাবে জঙ্গি কার্যকলাপের আঁতুড়ঘর বানানোর চেষ্টা চলছে, তা জানিয়েছিলেন। আর এই প্রচেষ্টায় জঙ্গি সংগঠনগুলি বাংলাদেশকে ভারতে ঢোকার প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে বলেও জানানো হয়।

খাগড়াগড়ের সেই বাড়িতে সিআইডির দল। মঙ্গলবার উদিত সিংহের তোলা ছবি।

খাগড়াগড়ের সেই বাড়িতে সিআইডির দল। মঙ্গলবার উদিত সিংহের তোলা ছবি।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:০৭
Share: Save:

প্রাক্তন মার্কিন বিদেশ সচিব হিলারি ক্লিন্টন যে দিন কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন, সে দিনই তিনি পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের পূর্বাঞ্চলে কী ভাবে জঙ্গি কার্যকলাপের আঁতুড়ঘর বানানোর চেষ্টা চলছে, তা জানিয়েছিলেন। আর এই প্রচেষ্টায় জঙ্গি সংগঠনগুলি বাংলাদেশকে ভারতে ঢোকার প্রবেশদ্বার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে বলেও জানানো হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে মার্কিন গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে প্রচুর, সুনির্দিষ্ট তথ্য পেশ করেছিলেন। সেই বৈঠকের পরে কেটেছে বছর দুয়েক। তবে নরেন্দ্র মোদীর সরকার মনে করছে, জঙ্গি দমনের তৎপরতায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার যথেষ্ট সক্রিয় ভূমিকা নেয়নি। এই পরিস্থিতিতে খুব শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, ১৯৯৩ সালে মুম্বই বিস্ফোরণের পর যখন পশ্চিম উপকূলবর্তী এলাকায় ভারতীয় গোয়েন্দা ও নিরাপত্তাবাহিনীর তৎপরতা বেড়ে যায়, তখনই জঙ্গিরা তাদের কৌশল বদলায়। পশ্চিমের বদলে পূর্ব উপকূলবর্তী এলাকাকে নিশানা করা হয়। আর এই কাজে বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে ব্যবহার করতে সচেষ্ট হয় জঙ্গিরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথায়, “ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত সবচেয়ে দীর্ঘ পশ্চিমবঙ্গে। এবং অধিকাংশ জায়গাতেই কাঁটাতারের বেড়া নেই। এ ব্যাপারে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ রেখে চলছি।”

নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা সরকারকে ইতিমধ্যেই কোণঠাসা করার চেষ্টা শুরু করেছে বিজেপি। রাজনৈতিক সেই অবস্থান নিয়ে দলের অন্দরে কোনও মতপার্থক্যও নেই। কিন্তু রাজনাথের বক্তব্য, “জঙ্গি দমন নিয়ে আমরা কোনও রাজনীতি চাই না। এ ব্যাপারে কেন্দ্র সব রকমের সাহায্য করতে প্রস্তুত।”

পশ্চিমবঙ্গে এই নাশকতামূলক কাজকর্ম যে হঠাৎ বর্ধমান দিয়েই শুরু হল, এমনটা নয়। অতীতে যখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তখন মার্কিন তথ্য কেন্দ্রে জঙ্গি হানা হয়েছিল। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষমোহন দেবের গাড়িতেও বিস্ফোরণ ঘটানোর চেষ্টা হয়েছিল। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন সন্তোষবাবু। সেই সময়ে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা প্রধান শ্যামল দত্ত বেশ কয়েকবার কলকাতা গিয়ে জঙ্গি গতিবিধি নিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের সংগৃহীত তথ্য সরবরাহ করেন। পরে ইউপিএ জমানায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অনিল গোস্বামী জঙ্গি তৎপরতা নিয়ে দু’বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রথম বৈঠকটি হয় দিল্লির সাউথ অ্যাভিনিউয়ে তৃণমূল সাংসদ মুকুল রায়ের বাড়িতে। দ্বিতীয়টি মহাকরণে। রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবকেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব বিষয়টি নিয়ে বার বার সতর্ক করেছেন।

জঙ্গি দমনের প্রশ্নে এক সময় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে ঐকমত্য গড়ে তুলেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আডবাণী বলেন, “জঙ্গি দমনের বিষয়টি নিয়ে ভোট-ব্যাঙ্ক রাজনীতি করা অনুচিত। এমনকী, এটি কেন্দ্র-রাজ্যের কোনও বিতর্কের বিষয়ও নয়। সন্ত্রাসবাদ সন্ত্রাসবাদই। দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে প্রশাসনিকতার প্রশ্নে ঐকমত্য গড়ে তোলা প্রয়োজন।”

সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। আডবাণীর পরে শিবরাজ সিংহ থেকে সুশীল শিন্দের সময়েও গোয়েন্দা বিভাগ আয়োজিত ডিজি সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গের জঙ্গি কার্যকলাপ সম্পর্কে রাজ্যকে অবহিত করা হয়। জানানো হয় মালদহ, মুর্শিদাবাদের মতো সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো বেআইনি মাদ্রাসা ক্রমবর্ধমান।

গোয়েন্দা রিপোর্ট অনুসারে, জামাতের সাহায্য নিয়ে তালিবানি জঙ্গিরা খালেদা জমানায় বাংলাদেশের ঢাকায় বেশ কয়েকটি বৈঠক করে। কিছু প্রাক্তন পাক সেনা অফিসার সে সব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। জামাত ও তালিবানি জঙ্গি সংগঠনগুলি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব ক’টি জঙ্গি সংগঠনকে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার কৌশলও নিয়েছিল। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ঢাকায় জঙ্গি-দমন তৎপরতা বাড়ে। বর্তমান বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সম্প্রতি ঢাকা সফরে গিয়ে হাসিনা সরকারের ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। এবং হিলারি ক্লিন্টনও জঙ্গি তৎপরতার প্রেক্ষিতে হাসিনা সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের সুসম্পর্ক বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তায় জোর দিয়েছিলেন।

অথচ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে গত তিন বছরে এই জেহাদি জঙ্গি তৎপরতা কমেনি বলেই মনে করছে কেন্দ্র। উল্টে কলকাতা শহরের বুকে জামাতদের সভা বা রাজ্যসভার সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানের ভূমিকা নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠেছে, যেগুলি এখন কেন্দ্র অনুসন্ধান করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE