ছবি: সংগৃহীত।
কেউ সাকুল্যে ক্লাস এইট পাশ। কারও বিদ্যে দশম বা দ্বাদশ শ্রেণি অবধি। অথচ তাঁরাই এ রাজ্যে নানা প্রান্তে সরকারি হাসপাতালে জাঁকিয়ে বসে ডাক্তারি করছিলেন।
রাজ্য জুড়ে ভুয়ো ডাক্তার তদন্ত মামলায় এই ৩ জন সরকারি ডাক্তারের উপরেই প্রথমে চার্জশিটের খাঁড়া নামতে চলেছে। রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রের খবর, চলতি মাসেই বিধাননগর আদালতে তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়ার কথা। গত মে মাসে ভুয়ো চিকিৎসকদের ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর এই প্রথম চার্জশিট দেওয়া হতে চলেছে।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ৩ মে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থেকে কাইজার আলমকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিনি চোপড়া ব্লকের লক্ষ্মীপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন। মাধ্যমিক পাশ কাইজার ২০১০-১১ সালে বছর দেড়েক কলকাতায় ইস্টার্ন বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেসিডেন্সিয়াল মেডিক্যাল অফিসারের দায়িত্বও সামলেছেন। কাইজারের বিরুদ্ধে গোপন সূত্রে কিছু খবর পেয়েই নড়েচড়ে বসে সিআইডি। তাঁকে গ্রেফতারের পরেই ধরা হয়, কুশিনাথ হালদার ও স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে। ক্লাস এইট পাশ কুশিনাথ আলিপুরদুয়ারের মধ্য রাঙালিবাজনার শিশুবাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ছিলেন। আর এক জন, স্নেহাশিস চক্রবর্তীর শিক্ষাগত যোগ্যতা দ্বাদশ শ্রেণি অবধি। তিনি ছিলেন জলপাইগুড়ির বানারহাট এলাকায় ধুমপাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক।
পুলিশের দাবি, এখন সিআইডি-র হাতেই সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৭-৮ জন ভুয়ো ডাক্তার ধরা পড়েছে। রাজ্যে অন্তত জনা ৫০ ভুয়ো ডাক্তার চিহ্নিত হয়েছেন। এদের শংসাপত্র বা রেজিস্ট্রেশন নম্বর যাচাই করলেই কারচুপি ধরা পড়ত বলে মনে করছে সিআইডি। কিন্তু তা-ও ঠিকঠাক ভাবে হয়নি। এটা নেহাতই গাফিলতি, না এর পিছনে কোনও চক্রান্ত রয়েছে— তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
প্রশ্ন উঠেছে, সিআইডি-র হাতে ধৃত ৩ জন সরকারি ডাক্তারের নিয়োগ-পদ্ধতি নিয়েও। তদন্তকারীরা জানান, স্নেহাশিস চক্রবর্তী, কুশিনাথ হালদারের ক্ষেত্রে তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতার নথি যাচাই করা হয়নি। ন্যাশনাল রুরাল হেলথ মিশনের চিকিৎসক নিয়োগের পদ্ধতি অনুযায়ী একটি বোর্ড তৈরি করে ইন্টারভিউয়ের মাধ্যমে চিকিৎসক নিয়োগ করার কথা। কিন্তু এই পদ্ধতি মানা হয়নি। তাই খুব সহজেই তাঁরা সরকারি চিকিৎসক হয়ে গিয়েছিলেন। এর জন্যই নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে আরও তদন্ত করা প্রযোজন বলে সিআইডির তরফে চার্জশিটে অনুমতি চাওয়া হবে। আবার কাইজারকে নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মানা হলেও তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বর খতিয়ে দেখা হয়নি। ধৃত ৩ জন সরকারি ডাক্তার ছাড়া, ভুয়ো ডাক্তার নিয়োগের একটি সংস্থা অল্টারনেটিভ মেডিক্যাল কাউন্সিলের কর্তা রমেশ বৈদ্যর বিরুদ্ধেও চার্জশিট পেশ করা হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy