Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
WB Police

WB Police: মানবাধিকার ভঙ্গে কাঠগড়ায় পুলিশ

রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে-অভিযোগ ওঠে, ধনেখালির ঘটনা তার অনুকূলে প্রমাণ দিয়েছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়, শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২২ ০৭:০৮
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ কি মানবাধিকার আইন যথাযথ ভাবে মেনে চলে?

ছাত্রনেতা আনিস খানের অপমৃত্যুর পরেই এই প্রশ্ন উঠেছিল। সেই বিতর্কে আরও জলবাতাস দিয়েছে ২০১৩ সালে ধনেখালি থানায় এক বন্দির মৃত্যুর ঘটনা। কলকাতা হাই কোর্টে সেই মামলা চলাকালীন সামনে আসা তথ্য দেখে বহু কৌঁসুলি বলছেন, নানা ঘটনায় রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে-অভিযোগ ওঠে, ধনেখালির ঘটনা তার অনুকূলে প্রমাণ দিয়েছে।

বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ ধনেখালির মামলায় সিবিআইয়ের যে-রিপোর্টের উল্লেখ করেছেন, তাতে লক-আপে মানবাধিকার আইনের তোয়াক্কা না-করেই বন্দিকে পেটানোর প্রমাণ রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। সিবিআইয়ের রিপোর্টে বলা হয়েছে, মারধরের পরে কাজি নাসিরুদ্দিন নামে ওই বন্দির কান এবং চোয়াল বেয়ে রক্ত পড়ার দৃশ্য সিসি ক্যামেরায় ধরা আছে। নাসিরুদ্দিনকে প্রকাশ্যে উপদ্রব করার অভিযোগে গ্রেফতার (যার সর্বোচ্চ সাজা ২০০ টাকা জরিমানা) করা হয়। ‘‘এমন তুচ্ছ মামলায় গ্রেফতার করা অভিযুক্তকে লক-আপে পেটানো কার্যত পুলিশের অমানবিক মুখের প্রমাণ,’’ বলছেন এক মানবাধিকার কর্মী।

পুলিশ রাতে হাওড়ার বাসিন্দা আনিসের বাড়িতে যে-ভাবে গিয়েছিল, তা-ও কার্যত মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করেন আইনজীবীদের অনেকে। আনিসের অপমৃত্যুর প্রতিবাদে ধৃত বাম ছাত্র-যুব কর্মীদেরও পুলিশি হাজতে নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। বিক্ষোভের দিন এক প্রৌঢ়কে তিন পুলিশকর্মীর লাথি মারার দৃশ্যও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

গত বছর দেশের পুলিশের মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সরব হয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনাও। পুলিশের অত্যাচারকে ‘সামাজিক সমস্যা’ বলে অভিহিত করেছিলেন তিনি।

আইনজীবী কল্লোল গুহঠাকুরতার মতে, মানবাধিকার লঙ্ঘনে পুলিশের একাংশের ক্ষমতার আস্ফালন যেমন দায়ী, দায়ী রাজনৈতিক চাপও। রাজনৈতিক প্রভুদের খুশি করতে গিয়ে পুলিশ এই ধরনের কাজ করে। তাঁর কথায়, ‘‘এমন ঘটনা বাড়তে থাকলে পুলিশের উপর থেকে সমাজের আস্থা উঠে যাবে। তার ফল কিন্তু মোটেই ভাল হবে না।’’

প্রাক্তন আইজি পঙ্কজ দত্তের মতে, পরিকাঠামোর খামতি রয়েছে রাজ্য পুলিশের। আছে লোকবলের ঘাটতিও। তা ঢাকতে প্রশিক্ষণহীন সিভিক ভলান্টিয়ারদের ব্যবহার করতে হচ্ছে। তাই অনেক জায়গায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘটনা ঘটছে। তবে তিনি বলছেন, ‘‘পুলিশ মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে কি না, যাদের তা দেখার কথা, সেই রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদ ফাঁকা। তাই প্রশ্ন ওঠে, কমিশন কি ঠিকমতো কাজ করতে পারছে?’’

রাজ্য পুলিশের কর্তারা জানান, সব স্তরের কর্মীদেরই মানবাধিকারের পাঠ দেওয়া হয়। করানো হয় রিফ্রেশার বা ওরিয়েন্টেশন কোর্স। পুলিশের এক প্রাক্তন কর্তার মতে,
বিভিন্ন বিক্ষোভ-মিছিলেই বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। সেখানে প্রতিক্রিয়া হয় তাৎক্ষণিক। তবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলাই ভাল বলে মনে করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

WB Police Human Rights Violation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE