আবাস যোজনায় বরাদ্দ বন্ধ রেখেছে কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা মতো রাজ্যই অর্থ বরাদ্দ করছে ‘বাংলার বাড়ি’-তে। ইতিমধ্যে ১৬ লক্ষ উপভোক্তা প্রথম কিস্তির টাকা পেয়েছেন। তালিকায় থাকা বাকি ১২ লক্ষ উপভোক্তাও চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে যাবেন বলে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মেদিনীপুরের প্রশাসনিক সভায় মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘৫৭ লক্ষ বাংলার বাড়ি আগেই আমরা করেছি, গত ১৪ বছরে। কেন্দ্রীয় সরকার তিন বছর ধরে বন্ধ করে দিয়েছে (বরাদ্দ)। তাই আমাদের টাকা থেকে ১৬ লক্ষ বাংলার বাড়ি করতে ইতিমধ্যে অর্ধেক টাকা দিয়েছি। বাকি অর্ধেক টাকাও পেয়ে যাবেন ওই ১৬ লক্ষ। মে মাসে পাবেন।’’ তার পরেই তাঁর ঘোষণা, ‘‘বাকি ১২ লক্ষকে ডিসেম্বরে দেব প্রথম পর্যায়ের টাকা। আর মে-তে (২০২৬ সালের) দেব দ্বিতীয় পর্যায়ের টাকা।’’
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের ঘোষণা হয়েছিল। আর ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে মমতা জানিয়েছিলেন রাজ্যই আবাস প্রকল্পে টাকা দেবে। ২০২৬ সালে ফের রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। অনুমান, ডিসেম্বর পেরোলেই ভোটের দামামা বাজবে। ২০২১-এও জানুয়ারিতেই নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল। তাই বিরোধীদের অনুমান, ভোট-অঙ্কেই মমতার এই আবাস-আশ্বাস।
রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পালের খোঁচা, “আট-ন’মাস বাকি নির্বাচনের। তার আগে আবার সেই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। এখানেও উনি শুধু কেন্দ্রের বঞ্চনা বলছেন। নিজে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। কারণ, জানেন এখানেও ওঁর দলের লোকেরাই টাকা নিয়েছে।” সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মতে, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবের তফাত এখন সবাই জেনে গিয়েছে!’’
এই প্রকল্পে গত ডিসেম্বরে উপভোক্তাদের প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। দু’কিস্তিতে মোট এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা।মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘বন্যায় যাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদেরও আমরা বাংলার বাড়ি প্রকল্পে ঢুকিয়ে দিয়েছি। ঘাটালে বন্যা হয়েছিল। জলপাইগুড়িতে টর্নেডো হয়েছিল। তাঁদেরও (ক্ষতিগ্রস্তদের) ঢুকিয়ে দিয়েছি। মুর্শিদাবাদেও যাঁদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদেরও বাংলার বাড়ি প্রকল্পের মধ্যে নিয়ে নেওয়া হবে।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘২৮ লক্ষ সম্পূর্ণ করে দিচ্ছি। তার পরেও যদি কারও বাকি থাকে, পরে আবার করে দেব। কেউ বাড়িছাড়া, আশ্রয়ছাড়া হবেন না।’’
আবাসেও দুর্নীতির নানা অভিযোগ উঠেছে। নাম জড়িয়েছে একাংশ তৃণমূল নেতা-কর্মীর। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মনে রাখবেন, এর জন্য (বাংলার বাড়ির) কাউকে এক পয়সাও দিতে হবে না। এটা সম্পূর্ণ সরকারি খরচায় হয়। কেউ যদি এক পয়সাও চায়, থানায় গিয়ে এফআইআর করবেন।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)