Advertisement
E-Paper

মা মৃত, জখম বাবা, চিকিৎসা পাচ্ছে না শিশু 

সে-রাতে পদপিষ্ট হয়ে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, দীপের মা অপর্ণা সরকার তাঁদের অন্যতম। দুর্ঘটনায় পাঁজর ভেঙে কাতরাচ্ছেন দীপের বাবা তারক সরকারও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৯ ০৩:৩৫
জখম: দীপ সরকার

জখম: দীপ সরকার

ডান চোখ টকটকে লাল হয়ে ফুলতে শুরু করেছে। আঘাত রয়েছে মাথাতেও। জিভ-সহ মুখের ভিতরে কয়েকটি জায়গায় কেটে যাওয়ায় রক্ত পড়ছে। কিন্তু অভিযোগ, বৃহস্পতিবার রাতে কচুয়াধামের দুর্ঘটনায় এ ভাবে আহত একটি শিশুকে রবিবার পর্যন্ত কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়নি। রোগীর অবস্থা বুঝতে না-পেরে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ওষুধ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় গ্রামীণ হাসপাতাল। যথাযথ চিকিৎসা না-হওয়ায় এবং হাসপাতালের গাফিলতিতে বছর আটেকের দীপ সরকারের চোখের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হতে শুরু করেছে।

সে-রাতে পদপিষ্ট হয়ে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, দীপের মা অপর্ণা সরকার তাঁদের অন্যতম। দুর্ঘটনায় পাঁজর ভেঙে কাতরাচ্ছেন দীপের বাবা তারক সরকারও। উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা না-করে গুরুতর আহত এমন একটি শিশুকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হল কেন? ধান্যকুড়িয়া গ্রামীণ হাসপাতাল জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পরে একের পর এক রোগী আসছিল। খবর পেয়ে অসংখ্য মানুষ তাঁদের নিখোঁজ আত্মীয়স্বজনকে খুঁজতে আসেন। ওই পরিস্থিতিতে যাঁদের শারীরিক অবস্থা বাইরে থেকে বেশি গুরুতর মনে হয়েছিল, তাঁদের কলকাতায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাকিদের খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখার মতো পরিস্থিতি ছিল না।

শুক্রবার ভোরে দীপ এবং তার বাবাকে ধান্যকুড়িয়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও শিশুটির সিটি স্ক্যান করানো হয়নি। কারণ, সেখানে সিটি স্ক্যানের ব্যবস্থা নেই বলে জানিয়ে দেন হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ। কলকাতার কোনও হাসপাতালে পাঠিয়ে তার ওই পরীক্ষার প্রয়োজনও অনুভর করেনি গ্রামীণ হাসপাতাল। ফলে বাড়িতেই যন্ত্রণায় ছটফট করছে শিশুটি। শনিবার রাতে দীপের চোখের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ায় রবিবার পরিবারের লোকজন তাকে বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালেও নিয়ে যান। কিন্তু ছুটির দিনে কোনও চিকিৎসক না-থাকায় সেখান থেকেও তাকে ফেরত পাঠানো হয় বলে অভিযোগ।

রবিবার যোগাযোগ করা হলে দীপের বাবা তারকবাবু জানান, সে-রাতে দুর্ঘটনার পরে তাঁকে আর ছেলেকে ধান্যকুড়িয়া হাসপাতালে এবং তাঁর স্ত্রী অপর্ণাদেবীকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে প্রথমে বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে এবং পরে সেখান থেকে ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় স্ত্রীর। বুকের ভাঙা হাড় নিয়ে তিনি যে গুরুতর আহত একমাত্র সন্তানকে নিয়ে কলকাতায় দৌড়োদৌড়ি করবেন, সেই অবস্থা নেই তারকবাবুর। ছেলের চোখ নিয়ে উদ্বিগ্ন বাবা আপাতত আত্মীয়দের উপরেই ভরসা করে আছেন। আত্মীয়েরাই বা দীপকে সরাসরি কলকাতায় নিয়ে গেলেন না কেন? তারকবাবু মোবাইলে কোনও রকমে জানালেন, বুকের হাড় ভেঙে যাওয়ায় তিনি যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। বাড়ির লোকজন আপাতত ব্যস্ত স্ত্রী অপর্ণাদেবীর শ্রাদ্ধের কাজে। ফলে ছেলেকে নিয়ে কলকাতায় দৌড়োদৌড়ি করার কেউ নেই।

দীপের কাকা কৃষ্ণকুমার সরকার বলেন, ‘‘ভাইপোর অবস্থা খুবই খারাপ। চোখে প্রচণ্ড যন্ত্রণা। অনবরত জল পড়ে চলেছে। জিভের বিভিন্ন জায়গা কেটে গিয়েছে। খেতে পারছে না। সোমবার (আজ) ওকে বসিরহাটে নিয়ে যাব। ওখানে না-হলে কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যেতেই হবে।’’

Accident Injury Death Stampede Loknath Temple Kachua
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy