Advertisement
১০ মে ২০২৪
খিদে মেটাতে ফাইফরমায়েশ

কাদা ছোড়ায় তুলে আছাড়

সকালে ঘুম থেকে উঠেই চনচনে খিদে নিয়ে বছর দশেকের ছেলেটা চলে গিয়েছিল পাড়ার মোড়ে মিষ্টির দোকানে। ফাইফরমায়েশ খেটে যদি বাসি মিষ্টি, ঠান্ডা শিঙাড়া জুটে যায়। বদলে জুটল আছাড়!

জখম: মায়ের সঙ্গে সিনারুল। নিজস্ব চিত্র

জখম: মায়ের সঙ্গে সিনারুল। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ইসলামপুর শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০১৭ ০২:৩৮
Share: Save:

টানাটানির সংসারে চার ছেলে, তিন মেয়ে। কারওরই পেট ভরে খাওয়া জোটে না।

না দিনে, না রাতে।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই চনচনে খিদে নিয়ে বছর দশেকের ছেলেটা চলে গিয়েছিল পাড়ার মোড়ে মিষ্টির দোকানে। ফাইফরমায়েশ খেটে যদি বাসি মিষ্টি, ঠান্ডা শিঙাড়া জুটে যায়। বদলে জুটল আছাড়!

শনিবার বেলা ১০টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে ইসলামপুরের বালুমাটি গ্রামের গাংরুলতলা মোড়ে। আছাড়ে জখম সিনারুল শেখকে ইসলামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে, সেখান থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হয়েছে। সিটি স্ক্যানও হয়েছে। রাতে হাসপাতাল সূত্রে খবর, তার অবস্থা স্থিতিশীল। মিষ্টির দোকানি আবু বাক্কার সিদ্দিকি ওরফে রিঙ্কুর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তবে তাদের গোটা পরিবার পালিয়েছে।

সিনারুলের বাবা রেজাবুল শেখ একটা লজঝড়ে রিকশাভ্যান চালান। পাটকাঠির বেড়ার ঘরকে দু’ভাগ করে তাঁদের সংসার। মাটি ছুঁইছুঁই দাওয়া ভিজে স্যাঁতসেঁতে। বাড়িতে খাবার না পেয়ে প্রায়ই মোড়ে এসে কারও জল এনে, কারও চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বা ঘরে-বারান্দায় ঝাড়ু দেয় সিনারুল। তাতেই জোটে বাসি শিঙাড়া, টক হয়ে যাওয়া রসগোল্লা বা ভাঙা বিস্কুটের সঙ্গে এক কাপ চা।

এ দিন খিদে পেটে রিঙ্কুর দোকানে গিয়ে সবে বসেছিল সিনারুল। রিঙ্কু তাকে এক বালতি জল নিয়ে আসতে বলে। রেজাবুলের অভিযোগ, ‘‘ছেলে বলে, ‘একটু পরে যাব।’ রিঙ্কু ওর হাত মুচড়ে দেয়। ব্যথা পেয়ে বাইরে এসে ও একটু কাদা তুলে ছোড়ে। সেটা নাকি গিয়ে পড়েছিল শিঙাড়া ভাজার তেলে। তাতে খেপে উঠে রিঙ্কু ওইটুকু ছেলেকে তুলে রাস্তায় আছাড় মারে।’’ সিনারুলের থুতনি কেটে রক্ত ঝরতে থাকে। গাঁয়ের লোকজন জড়ো হয়ে যায়। কিছু লোক দোকানে চড়াও হয়। তবে তাদের সামলে নেন বাকিরা। এর পরেই ঝাঁপ ফেলে রিঙ্কু সপরিবার উধাও হয়ে যায়।

গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, আগেও রিঙ্কু দু’এক বার ছোটদের মারধর করেছে। সেগুলো সালিশি করে মিটিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এটা চলতে দেওয়া উচিত নয়। টেঁকা গ্রাম পঞ্চায়েতের স্থানীয় সদস্য হাফিজুল ইসলাম অবশ্য বলেন, ‘‘রিঙ্কুরা ভাল ছেলে, হয়তো ভুল করে এমনটা হয়ে গিয়েছে।’’

বাড়িতে তালা দিয়ে পড়শির বাড়ি গিয়ে বসেছিলেন রিঙ্কুর মা চেনবানু। তাঁর দাবি, ‘‘আমার ছেলেরা সিনাকে খুব ভালবাসে। মাঝে-মাঝে আমাদের বাড়িতে এসে ভাতও খায় ও। ছেলে আমায় বলেছে, গোড়ায় ও ঠাট্টা করছিল। তেলে কাদা পড়তেই রাগ উঠে যায়। তাতেই করে ফেলেছে।’’

সিনারুলের মা নুরজাহান বলেন, ‘‘গরিব বলেই এ ভাবে মেরেছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE