Advertisement
E-Paper

বড়দের শেখাচ্ছে শিশুরাই

দুই, অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ফুটবলের সময়ে বাতাস যাতে দূষিত না হয়, সে জন্য যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে বহু স্কুলে প্রচার চালিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৩০
বার্তা: শব্দবাজি না ফাটানোর আবেদন। মঙ্গলবার, শহরে। —নিজস্ব চিত্র।

বার্তা: শব্দবাজি না ফাটানোর আবেদন। মঙ্গলবার, শহরে। —নিজস্ব চিত্র।

পথ দেখাচ্ছে স্কুলপড়ুয়ারা।

মূলত কচিকাঁচাদের জন্যই এ বছর বাজি বাজার অন্য বারের মতো ততটা চাঙ্গা নয়। অন্তত কালীপুজোর দু’দিন আগে অবস্থা এমনই। আগে কখনও এটা দেখা যায়নি। অন্য সব বার কালীপুজোর দু’দিন আগে যত বাজি বিক্রি হয় বাজি বাজার থেকে, এ বার তার অর্ধেকও হয়নি! টালা, বেহালা, কালিকাপুর— শহরের সব বাজি বাজারের চিত্রটাই কম-বেশি এক।

ব্যবসায়ীরাই জানাচ্ছেন, বাজি কেনার জন্য ছোটদের আবদার এ বছর অনেক কম হওয়ার জন্য বাজার মন্দা। কিন্তু ছোটদের আবদার কম কেন?

বাজি ব্যবসায়ীরা মূলত দু’টি কারণ খুঁজে পাচ্ছেন। এক, স্কুলে স্কুলে শব্দবাজির বিরুদ্ধে জোরদার প্রচার হয়েছে। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্যে শব্দবাজি নিষিদ্ধ। বোঝানো হয়েছে তার ক্ষতিকর দিক। যদিও চকলেট বোমা, দোদোমা ছাপিয়ে শেল, শট্‌স-এর মতো আলোর বাজির ছদ্মবেশে বহু শব্দবাজির দাপট সম্প্রতি বেড়েছে। আলোর মালা সৃষ্টি করার ঠিক আগের মুহূর্তে বিকট শব্দ করে ফাটে বহু বাজি। তাই কোনটা শব্দবাজি, কোনটা নয়, তা নিয়ে বিভ্রান্ত পড়ুয়াদের একাংশ বড়দের কাছে কোনও বাজিই চাইছে না।

দুই, অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ ফুটবলের সময়ে বাতাস যাতে দূষিত না হয়, সে জন্য যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে বহু স্কুলে প্রচার চালিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। বাতাসের গুণমান ঠিক রাখতে কী করব, কী করব না, সে ব্যাপারে পাঁচ মিনিটের শপথ নিতে পর্ষদ শিখিয়েছে ছাত্রছাত্রীদের। ওই ‘করব না’-র তালিকায় সব রকম বাজি না পোড়ানোর কথা আছে।

সেই সঙ্গে গত ৯ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের রায়ে দিল্লিতে সব বাজি নিষিদ্ধ হওয়ার পরে এখানেও বাজির ক্রেতাদের একাংশের ভাবনায় বদল এসেছে বলে ব্যবসায়ীদের মত। তবে তাঁদের কেউ কেউ ভাবছেন, ক্রেতাদের একাংশ চম্পাহাটি, নুঙ্গির বাজি প্রস্তুতকারকদের থেকে সরাসরি বাজি কিনে আনছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের আর বাজি বাজারে যেতে হচ্ছে না। এটিও বাজারের মন্দার কারণ হতে পারে।

আবার গড়িয়ার বাসিন্দা, পেশায় ইঞ্জিনিয়ার এক ব্যক্তির অভিজ্ঞতা অন্য। গত বৃহস্পতিবার তিনি চম্পাহাটি থেকে এক ব্যাগ আলোর বাজি কিনে ট্রেনে ফিরছিলেন। সোনারপুর থানার পুলিশ তাঁকে আটক করে বলে, দাহ্য বস্তু ওই ভাবে নিয়ে যাওয়া বেআইনি। সব বাজি বাজেয়াপ্ত করে তাঁকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও বাজি ব্যবসায়ীরা স্বীকার করছেন, পুলিশি নজরদারি এ বার অন্য বারের চেয়ে বেশি কঠোর। শ্যামবাজারের আশপাশ থেকে মঙ্গলবার পুলিশ ২০০ কেজিরও বেশি বাজি আটক করেছে। অধিকাংশই কিন্তু আলোর বাজি। তা হলে পুলিশ সেগুলি আটক করল কেন?

পুলিশ জানায়, বিনা লাইসেন্সে ফুটপাথে বসে ওই বাজি বিক্রি করা হচ্ছিল, যা বেআইনি। শব্দবাজি ছাড়া অন্য বাজি বেআইনি ভাবে বিক্রি হলেও তা আটক করার পুলিশি তৎপরতা অতীতে তেমন দেখা যেত না। সব মিলিয়ে তাই বাজির অবাধ সেই দাপট এ বছর কিছুটা যেন টাল খেয়েছে। বাজি ব্যবসার সঙ্গে গত ২০ বছর ধরে যুক্ত শুভঙ্কর মান্না বলছেন, ‘‘বাজির প্রতি ছোটদের একাংশের অনীহা ও কঠোর পুলিশি পদক্ষেপে বাজির বাজারে সামগ্রিক মন্দা।’’

এ এক অদ্ভুত সমাপতন। শুধু শব্দবাজির বিপদ নয়, বাজির ধোঁয়া থেকে বায়ুদূষণের কথা মাথায় রেখে যখন সব রকম বাজি নিষিদ্ধ করা নিয়ে চর্চা চলছে, তখনই উঠে আসছে বাজি বাজারের মন্দার তথ্য। পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমার আনন্দ যেন অন্যের নিরানন্দের কারণ না হয়। বাজি পোড়ানোর সময়ে সুনাগরিকের সেটা মাথায় রাখা কর্তব্য।’’ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘যিনি বাজি পোড়াচ্ছেন, তিনি শুধু নিজের ঘর না, বিষিয়ে দিচ্ছেন আশপাশের বাতাসও। এই প্রচারটা স্কুল স্তর থেকে শুরু করতে পারলে কাজ হবে।’’

Sound Crackers Fire Crackers Diwali কালীপুজো
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy