Advertisement
E-Paper

যোগসূত্রের খোঁজে চিনের বুদ্ধ শরণ

সম্ভবত, প্রথমবারের জন্য বুদ্ধ এব‌ং বৌদ্ধ ধর্মের প্রাচীন যোগসূত্রকে ভিত্তি করে কলকাতার চিনা দূতাবাস ১৪-১৫ মার্চ, দু’দিনের সম্মেলন করছে। ৫০ বছরের পুরনো কলকাতার চৈনিক বৌদ্ধ (তিব্বতি নয়) হিউয়েন সাং গুম্ফা সংস্কারও করে দেবে তারা।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪৬

ডোকলাম অতীত। ভারতের সঙ্গে মধুর সম্পর্ক তৈরিতে চিন এখন বুদ্ধের শরণে।

সম্ভবত, প্রথমবারের জন্য বুদ্ধ এব‌ং বৌদ্ধ ধর্মের প্রাচীন যোগসূত্রকে ভিত্তি করে কলকাতার চিনা দূতাবাস ১৪-১৫ মার্চ, দু’দিনের সম্মেলন করছে। ৫০ বছরের পুরনো কলকাতার চৈনিক বৌদ্ধ (তিব্বতি নয়) হিউয়েন সাং গুম্ফা সংস্কারও করে দেবে তারা। হিউয়েন সাংয়ের ভারত আগমন এবং তৎকালীন বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও যোগসূত্র নিয়ে আলোচনা করতে চিন থেকে বিশেষজ্ঞরাও আসছেন। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রক এখনও এই অনুষ্ঠানের ছাড়পত্র দেয়নি। চিনা দূতাবাস রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠিকে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। কিন্তু বিদেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র না থাকায় তিনি সেই অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না। বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য আলোচনাসভায় যোগ দেবেন বলে চিনা দূতাবাস সূত্রে দাবি করা হয়েছে। তিনি বলেন,‘‘আমি কিছু বলছি না।’’

দূতাবাসের এক মুখপাত্রের কথায়,‘‘হিউয়েন সাং গুম্ফা এবং চিনের চেজিয়াং প্রদেশের লিনজিন বৌদ্ধ মন্দিরের যৌথ অনুষ্ঠানটি ধর্মীয়। রাজনৈতিক ছাড়পত্রের প্রয়োজন নেই।’’ যদিও কলকাতার চিনা কনসাল জেনারেল মা ঝানউ নবান্নে চিঠি লিখে ১৫ মার্চের অনুষ্ঠানের ছাড়পত্র চেয়েছেন। নবান্ন তা বিদেশ মন্ত্রকে পাঠিয়ে মতামত চাওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও ফিরতি চিঠি আসেনি। বিদেশ মন্ত্রকের এক মুখপাত্র বলেন,‘‘ মন্ত্রক বিষয়টি বিবেচনা করছে। সম্মেলনের বিষয়বস্তু দেখা হচ্ছে।’’

কেন চিনের বুদ্ধ শরণ নিয়ে এত স্পর্শকাতর অবস্থান নিচ্ছে নয়াদিল্লি?

সূত্রের খবর, মার্চ-এপ্রিল মাস জুড়ে তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামা তাঁর ‘নির্বাসিত সরকারের’ ৬০ বছর পূর্ণ হওয়া উপলক্ষ্যে নানা অনুষ্ঠান করছেন। ‘ধন্যবাদ ভারত’ শীর্ষক মূল অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল নয়াদিল্লিতে। কিন্তু সম্প্রতি বিদেশ মন্ত্রক সরকারের শীর্ষমহলে নোট পাঠিয়ে দলাই লামার অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছে। তার পরেই তিব্বতি বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের মূল অনুষ্ঠান নয়াদিল্লি থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে হিমাচল প্রদেশের ধরমশালায়।

এমনই এক সময়ে কলকাতার চিন দূতাবাস ‘চৈনিক’ বৌদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার আয়োজন করছে। চিন থেকে বেশ কয়েকজন বৌদ্ধ ধর্ম বিশেষজ্ঞ তাতে যোগ দেবেন। আলোচনা হবে দ্বিপাক্ষিক যোগসূত্রে হিউয়েন সাংয়ের অবদান নিয়েও। ঘটনা হল, চিন-ভারত সম্পর্কে ভারত যতখানি বুদ্ধ নির্ভরতা চায়, চিনের অবস্থান ঠিক তার উল্টো। চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ব্যবসা-বাণিজ্য, সীমান্ত, আঞ্চলিক নিরাপত্তার বিষয়গুলিকেই অগ্রাধিকার দেয়। এখন হঠাৎ বুদ্ধ এবং হিউয়েন সাং নিয়ে তারা উৎসাহী কেন, উঠছে সেই প্রশ্নও।

এক বিশেষজ্ঞের মতে, চিনের রাষ্ট্রপতি শি চিংফিংয়ের স্বপ্নের প্রকল্প হল ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশেয়েটিভ’ (বিআরআই)। তাতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের কারাকোরাম হাইওয়েও পড়ছে। ঘটনাচক্রে চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাংও কিরঘিস্তান, আফগানিস্তান, কাশ্মীর হয়েই ভারতে এসেছিলেন। তাঁর সময়কার যোগাযোগ নিয়ে আলোচনা মানেই এখনকার ‘বিআরআই প্রকল্প’ নিয়ে ঘুরিয়ে চর্চা করা। ভারত যে প্রকল্পের বিরোধিতা করছে। চিনের ‘বুদ্ধ-নীতি’র নেপথ্যে সেই কৌশলও থাকতে পারে বলে মনে করছেন কূটনীতিকদের কেউ কেউ। যদিও চিনা দূতাবাসের দাবি, অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণরূপে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক।

Chinese Consulate of Kolkata Chinese Consulate India China Buddhism চিনা দূতাবাস
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy