Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
State news

চিনা মাদক কারবারীদের নিয়ে মুর্শিদাবাদে সিআইডি, আড়ালে চলছিল এ সব!

বুধবার পাঁচ চিনা মাদক কারবারীকে নিয়ে সেই কারখানায় তল্লাশি চালান সিআইডির গোয়েন্দারা।

ধৃত চিনাদের নিয়ে নওদার কারখানায় তল্লাশি সিআইডির।

ধৃত চিনাদের নিয়ে নওদার কারখানায় তল্লাশি সিআইডির।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ১৮:২২
Share: Save:

পাটকাঠি পুড়িয়ে কাঠকয়লার কারখানা। আর সেই কারখানার আড়ালেই চলছিল চিনা ড্রাগের কারবার!

রবিবার রাতে কলকাতা স্টেশনে ৩৯ কোটি টাকার পার্টি ড্রাগ-সহ ধৃত ৫ চিনা নাগরিকের কাছ থেকে মিলেছিল মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা যাতায়াতের ট্রেনের টিকিট। সেখান থেকেই উঠে এসেছিল মুর্শিদাবাদ যোগ। তদন্তকারীদের ধারণা হয়েছিল, মুর্শিদাবাদকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল চিনা ড্রাগের চক্র। সিআইডি সূত্রে খবর, টানা জেরা করে ওই চিনা নাগরিকদের কাছ থেকে মুর্শিদাবাদের নওদার মধুপুরের একটি কারখানার হদিশ পান গোয়েন্দারা। বুধবার পাঁচ চিনা মাদক কারবারীকে নিয়ে সেই কারখানায় তল্লাশি চালান সিআইডির গোয়েন্দারা।

সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কারখানা থেকে ধৃত চিনা নাগরিকদের ব্যাবহৃত জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছে। উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু নথিপত্র। সেই নথি থেকে স্পষ্ট ওই অভিযুক্তরা নিয়মিত ওই কারখানাতে যাতায়াত করত। সেখানে তারা থাকতও।

আরও পড়ুন: মাদক চক্রেও চিন যোগ? কলকাতা স্টেশনে ২ কুইন্টাল ড্রাগ-সহ ধৃত ৫ চিনা নাগরিক

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, প্রায় চার বছর আগে এই কারখানাগুলি তৈরি হয়। যে কারখানাতে বুধবার তল্লাশি চলে, সেই কারখানাটি প্রায় ১৫ বিঘে জমির উপর তৈরি। স্থানীয় চাষীদের কাছ থেকে জমি ইজারা নিয়ে এই কারখানাগুলো বানানো হয়। বেলডাঙা-নওদাতে এ রকম পাঁচটি কারখানা আছে। তারই মধ্যে একটি কাজিসাহা গ্রামের কারখানা। শেখ সাবিরের জমিতে চিনা ব্যাবসায়ীরা এই কারখানা তৈরি করে।

দেখুন ভিডিয়ো:

সিআইডি সূত্রে খবর, স্থানীয়েরা জানতেন এই কারখানাতে পাটকাঠি পুড়িয়ে কাঠকয়লা বানিয়ে সেই ছাই পাঠানো হয় চিনে। সেখানে নাকি ওই ছাইয়ের ব্যাপক কদর। ৩০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা কুইন্টাল দরে পাটকাঠি স্থানীয় চাষিদের কাছ থেকে কিনে পোড়ানো হয়। ৫ কুইন্টাল পাটকাঠি থেকে তৈরি হয় এক কুইন্টাল কাঠকয়লা যা পেষাই করে মিহিগুঁড়ো করে তবেই পাঠানো হয় চিনে।

কারখানায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ।

চিনা উদ্যোগে তৈরি এই রহস্যময় কারখানা নিয়ে এলাকার মানুষের কৌতূহল অনেক দিনের। উঁচু পাঁচিল ঘেরা এই কারখানাগুলিতে কার্যত দুর্গের মতো নিরাপত্তা। কাউকে ঢুকতে দেওয়া হত না। এক সিআইডি কর্তা বলেন, “এমনকি স্থানীয় যাঁরা এই কারখানাতে শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন তাঁদেরও ওই কারখানার নির্দিষ্ট কাজের জায়গার বাইরে কোথাও যেতে দেওয়া হয় না।”

ছাই কারখানায় চলছে তল্লাশি

গোয়েন্দাদের সন্দেহ, ছাইয়ের ব্যবসার আড়ালে এই কারখানাগুলিকেই মাদক তৈরি এবং মজুতের জন্য ব্যবহার করত এই চিনা মাদক কারবারীরা। কারখানা থেকে ছাই সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা। সেই ছাই ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে। কারখানার উদ্ধার যন্ত্রপাতি দিয়ে মাদক বানানো যায় কি না সেটাও খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।

কারণ, এর আগে ২০০৩ সালে মার্কিন গোয়েন্দাদের দেওয়া সূত্র ধরে কলকাতা, হংকং, নিউইয়র্ক এবং চিনে এক সঙ্গে কুখ্যাত চিনা গুয়াংঝৌ মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। কলকাতায় প্রাক্তন সিবিআই কর্তা উপেন বিশ্বাসের বাড়ির একতলায় ঘাঁটি গেড়েছিল ওই চক্রের পাণ্ডারা। সেই সময় তদন্তে জানা গিয়েছিল, সিবিআই কর্তার বাড়িতেই মাদক তৈরির বন্দোবস্ত করছিল এই চক্র। সেই সূত্র ধরেই এক গোয়েন্দা কর্তার দাবি, “এই কারখানাগুলি কী কাজে এরা ব্যবহার করত সেটা জানা এখন জরুরি।” আর এই ধৃত পাঁচ জনও গুয়াংঝৌ প্রদেশেরই বাসিন্দা। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, ধৃতরাও ওই গুয়াংঝৌ সিন্ডিকেটেরই সদস্য। সেই সঙ্গে কেন চিনা মাদক কারবারীরা ঘাঁটি তৈরির জন্য মুর্শিদাবাদকেই বেছেছিল, সেটাও ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE