Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

দোল দেখিয়ে হঠাৎই স্থগিত লগ্নি সংস্থা বিতর্ক

গোড়া থেকে নারাজ। তার পরে হঠাৎ রাজি! তার পরে হঠাৎ স্থগিত! বিধানসভার চলতি বাজেট অধিবেশনে শেষ পর্যন্ত আসছে না বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা (চলতি কথায় চিট ফান্ড) নিয়ে বেসরকারি প্রস্তাব।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৫
Share: Save:

গোড়া থেকে নারাজ। তার পরে হঠাৎ রাজি! তার পরে হঠাৎ স্থগিত!

বিধানসভার চলতি বাজেট অধিবেশনে শেষ পর্যন্ত আসছে না বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থা (চলতি কথায় চিট ফান্ড) নিয়ে বেসরকারি প্রস্তাব। হঠাৎই সুর নরম করে এ বার ১৯৮০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত এ রাজ্যে ওই ধরনের সংস্থার কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনার প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল সরকার। কিন্তু আজ, বুধবার বিধানসভার চলতি অধিবেশনের শেষ দিনের কাজ ফুরিয়ে যাবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। কারণ, দোলের আগের দিন জেলার বিধায়কদের নিজের নিজের এলাকায় ফিরে যাওয়ার বাড়তি সময় দিতে চান মুখ্যমন্ত্রী! তাই আপাতত লগ্নি সংস্থা সংক্রান্ত আলোচনা স্থগিত!

তৃণমূল আমলে লগ্নিসংস্থার দৌরাত্ম্য নিয়ে দু’বছরেরও বেশি আগে বিধানসভায় আলোচনা চেয়েছিল বিরোধী বামেরা। তাদের মুলতবি প্রস্তাব গৃহীত না হওয়ায় বাম বিধায়কদের বিক্ষোভে সে বার প্রবল বাধা দিয়েছিল তৃণমূল। আহত হয়েছিলেন সিপিএম বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় ও দেবলীনা হেমব্রম। তার পর থেকে তৃণমূলের সরকার এই বিষয়ে বিধানসভায় আলোচনায় উৎসাহ দেখায়নি। এখন সারদা-কাণ্ডে কোণঠাসা হয়েই মমতার সরকার এমন বিষয়ে আলোচনায় রাজি হয়েছিল কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছিল সব শিবিরে। তার মধ্যেই আচমকা আলোচনা স্থগিত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত! যা নিয়ে ফের শুরু হয়েছে নানা জল্পনা!

বেসরকারি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনায় শাসক পক্ষ রাজি হয়ে গেলেও সরকারের অন্দরেই এই নিয়ে দ্বিমত ছিল। তৃণমূল সূত্রের খবর, এত দিন পরে হঠাৎ এই বিষয়ে আলোচনায় সম্মত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘মস্ত ভুল’ হয়েছে বলে মত দিয়েছিলেন এক বর্ষীয়ান মন্ত্রী। তাঁর মতে, এর ফলে এত দিনকার যাবতীয় অভিযোগ বিধানসভায় তুলে দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যেত বিরোধীরা! দলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণের প্রেক্ষিতে এখন ওই মন্ত্রীর মতামত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিশেষ গুরুত্বের। এর পরেই দোলের প্রসঙ্গ টেনে আলোচনার দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়ার কৌশল রচনা করা হয়। শাসক দলেরই এক বিধায়কের কথায়, “অধিবেশন যে দোলের আগের দিন শেষ হচ্ছে, সেটা তো আগে থেকেই জানা ছিল। দোলযাত্রা এখানে ঢাল হয়েছে!” তবে আপাতত স্থগিত হলেও প্রস্তাবটি কিন্তু খারিজ বা বাতিল হয়নি। ফলে, পরের অধিবেশনে তা নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।

বস্তুত, বিষয়টি সামাল দিতে মঙ্গলবার আসরে নেমেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অধিবেশনের শেষ দিনের সূচি নিয়ে আলোচনার জন্য কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকের আগেই তিনি বিধানসভায় পৌঁছে তিনি এ দিন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরে ছিলেন। বৈঠকে তিনিই স্পিকারকে প্রস্তাব দেন, দোলের আগের দিন বিধায়কদের নিজের এলাকায় ফিরে যাওয়া জরুরি। তাই দুপুর ১টার মধ্যে অধিবেশন শেষ করে দিতে হবে। সেই সময়ের মধ্যে বাজেট সংক্রান্ত জরুরি কাজ মিটিয়ে লগ্নি সংস্থা নিয়ে আলোচনার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাচ্ছিল না। তার উপরে বাম, বিজেপি এবং কংগ্রেসের দাবি ছিল, এমন বিষয়ে আলোচনার জন্য অন্তত দু’ঘণ্টা দেওয়া হোক। উচ্চ শিক্ষা সংসদ বিষয়ক বিলটিও আজ পাশ করানোর চাপ আসছিল সরকার পক্ষ থেকে। মুখ্যমন্ত্রী তখন বলেন, সে ক্ষেত্রে ৯ মার্চ অধিবেশন চালিয়ে বিল পাশ বা আলোচনা হতে পারে। তখন আবার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র জানান, ৮ মার্চ ব্রিগেড সমাবেশ দিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন শুরু হচ্ছে। এ কথা তাঁরা আগেই জানিয়ে রেখেছিলেন। তেমন দরকার হলে ৭ তারিখ বিধানসভা খুলে রেখে আলোচনা হোক। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি এ বারের মতো স্থগিতই হয়ে যায়।

পরে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী প্রস্তাব দিয়েছেন, দোলের আগের দিন বেলা ১টার মধ্যে অধিবেশন শেষ করে দিতে হবে। বিধায়কেরা যাতে নিজের নিজের এলাকায় যেতে পারেন। সেইমতোই আলোচ্যসূচি রাখা হয়েছে।” একই সঙ্গে আবার পার্থবাবুর মন্তব্য, “২০০৯-এর পরে চিট ফান্ড আর কোথায় হল? বিরোধীরা এক ঘণ্টা তো মনের কথা বলতেই পারতেন!” বিরোধীদের তরফে বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য আবার পাল্টা বলেছেন, “অধিবেশনের শেষ দিনে এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে এত স্বল্প সময়ে আলোচনা সম্ভব ছিল না। বলেছিলাম, একটা দিন এর জন্য দেওয়া হোক। যে ভাবে বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছিল, তাতে ওঁদের সদিচ্ছা ছিল না!”

গোটা বিষয়ে আবার একটি অন্য মাত্রা সংযোজনের চেষ্টা চালিয়েছেন বিজেপি সভাপতি রাহুল সিংহ! তাঁর অভিযোগ, “সিপিএম চিট ফান্ডের জন্মদাতা। তৃণমূল তার পালনকর্ত্রী। বিধানসভায় আলোচনা হলে দু’পক্ষের গায়েই কাদা লাগত। তাই মুখ্যমন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রের কানে কানে কথা বলেছেন। আসামীরা সরাসরি সমঝোতা করে নিয়েছেন!” অভিযোগ নস্যাৎ করে সূর্যবাবু পাল্টা বলেছেন, “ওঁদের দলের প্রতিনিধি তো কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে ছিলেন। জানি না, ওঁদের মধ্যে কথা হয় কি না! তাঁর কাছ থেকে খোঁজ নিলেই তো জানতে পারতেন!”

কার্যক্ষেত্রেও বিজেপি বিধায়ক শমীকের বক্তব্যের সঙ্গে রাহুলবাবুর অভিযোগ মেলেনি। শমীক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী-বিরোধী দলনেতার কানাকানির কোনও দৃশ্য দেখেননি বলেই জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE