Advertisement
E-Paper

জামাইষষ্ঠীতে শুরু মহিষমর্দিনীর বন্দনা

জ্যৈষ্ঠের দাবদাহেই ঢাকে পড়ল কাঠি। জামাইষষ্ঠীর দিন হুগলির চুঁচুড়ার ধরমপুরে শুরু হল মহিষমর্দিনীর পুজো আর সেই উপলক্ষে একটি মেলারও। প্রচণ্ড গরমকে উপেক্ষা করে দুর্গোৎসবের প্রায় মাস তিনেক আগেই ধরমপুরের ছেলে-বুড়ো সকলে মেতে উঠলেন পুজোর আনন্দে।

বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০১৫ ১৯:৪৬
দেবী মহিষমর্দিনী।

দেবী মহিষমর্দিনী।

জ্যৈষ্ঠের দাবদাহেই ঢাকে পড়ল কাঠি। জামাইষষ্ঠীর দিন হুগলির চুঁচুড়ার ধরমপুরে শুরু হল মহিষমর্দিনীর পুজো আর সেই উপলক্ষে একটি মেলারও। প্রচণ্ড গরমকে উপেক্ষা করে দুর্গোৎসবের প্রায় মাস তিনেক আগেই ধরমপুরের ছেলে-বুড়ো সকলে মেতে উঠলেন পুজোর আনন্দে।

বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব কমে আসার সময় পুনরায় হিন্দু দেবদেবীর পুজোর প্রচলন হয়। সেই সময় হুগলির ধরমপুরে ধর্মঠাকুরের পুজো শুরু হয়। পরে সেই প্রভাব কমে এলে প্রায় তিনশো বছর আগে এই এলাকার মানুষ মহিষমর্দিনীর পুজোর প্রচলন করেন। ‘হুগলী জেলার ইতিহাস ও বঙ্গসমাজ গ্রন্থ’-এ এমনটাই উল্লেখ করেছিলেন সুধীরকুমার মিত্র। তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘ধরমপুর দক্ষিণপাড়ায় ধর্মরাজ ঠাকুরের ভগ্ন মন্দিরের প্রায় পার্শ্বে অবস্থিত চণ্ডী-মণ্ডপে এই মহিষমর্দ্দিনী দুর্গামাতার পূজা তদবধি একাধিকক্রমে চলিয়া আসিতেছে। দেবীর নামানুসারেই পল্লীটির নাম মহিষমর্দ্দিনীতলা। মণ্ডোপপরি দেবীর স্থায়ী দেউল বিদ্যমান। প্রতি বৎসর জ্যৈষ্ঠ মাসের অরণ্যষষ্ঠী (জামাইষষ্ঠী) তিথিতে দেবীর মৃণ্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করিয়া সপ্তমী থেকে দশমী (দশহারা) পর্যন্ত যথাবিধি পূজা অনুষ্ঠিত হয়।’
এখানে প্রতিমার কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা যায়— সপরিবারে দুর্গা মূর্তি নয়, মহিষমর্দিনীর মূর্তি। তাঁর ডান দিকে মহাদেব, বাঁ দিকে গণেশ। লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কার্তিক অনুপস্থিত। শোনা যায়, এই পুজো উপলক্ষে আগে মহিষ ও পাঁঠা বলি দেওয়া হত। বর্তমানে পশুবলি বন্ধ। আগে স্নানযাত্রা পর্যন্ত মণ্ডপে দেবীর মূর্তি রাখা হত। আর সেই উপলক্ষে হত যাত্রা, পুতুলনাচ, থিয়েটার ইত্যাদি। আগে স্নানযাত্রার দিন স্থানীয় ‘ময়রা পুকুরে’ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হত। এই নিয়ে একটি কিংবদন্তি প্রচলিত আছে— আগে পুকুরটি শুকনো থাকলেও প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় নাকি আপনা থেকেই তা জলে ভরে যেত। এখন অবশ্য দশমীতে গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

জামাইষষ্ঠীর দিনেই কেন পুজো শুরু হয়?

পুজো কমিটির সম্পাদক হিমাদ্রীশেখর ঘোষ জানালেন, জনশ্রুতি অনুযায়ী পুজোটি প্রায় ছ’শো বছর ধরে হয়ে আসছে। পুজোটি কে শুরু করেছিলেন তা সঠিক ভাবে জানা না গেলেও শোনা যায়, জামাইষষ্ঠীর দিনে মেয়ে যেমন স্বামী এবং বড় ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি আসেন, সেই রীতি মেনেই এই পুজোর শুরু হয়। সময়ের সঙ্গে মেলাটি বড় হয়েছে। এ বছর দোকানের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭৫টি। পুজোয় অন্নভোগ দেওয়ার রীতি নেই, তার পরিবর্তে দেওয়া হয় মালপোয়া ভোগ। তেমনই এই পুজোয় নেই সন্ধিপুজো। পুজো উপলক্ষে দুঃস্থ মানুষের মধ্যে প্রায় ৩০০ কাপড় বিতরণ করা হয়।

পুজোর পাশাপাশি এখানকার আর এক আকর্ষণ হল মেলা। যদিও সময়ের প্রভাবে মেলার সাবেক ছবিটা হারিয়ে গিয়েছে। অন্যান্য মেলার মতোই প্লাস্টিকের খেলনা, ইমিটেশন গয়না, স্টিল ও কাচের বাসনপত্রই ভরসা। উধাও হয়েছে মাটিরপুতুল, কাঠের বাসন, পাথরের বাসন, ধামা-ঝুড়ি আর সাজি।

এলাকার বাসিন্দা অরূপ চক্রবর্তীর কথায়, আজও প্রাচীন এই পুজোর অকর্ষণে অসংখ্য মানুষ এখানে ছুটে আসেন। আজও বহু মানুষ সোনা-রুপোর গয়না এবং দামি শাড়ি দিয়ে দেবীর উদ্দেশে পুজো দেন।

এই পাঁচ দিন সন্ধে নামতেই গ্রীষ্মের দাপট কিছুটা কমলে ভিড় করেন হাজারো মানুষ। কেউ আসেন বিশ্বাসে, কেউ বা নিছক মেলায় ঘুরতে। কেউ আবার পুজোর আগেই পুজোর সেই আমেজটা উপভোগ করতে।

bibhuti sundar bhattacharya chuchura dharampur jamaisasthi jamaisasthi durgapuja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy