Advertisement
E-Paper

কালো ব্যাগ নিয়ে ব্যাখ্যা তলব, ধন্দ কাটল না জবাবে

জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) জানতে চাওয়ায় খাগড়াগড়ের বাড়ি থেকে শুক্রবার দু’দফায় মালপত্র নেওয়ার ব্যাখ্যা দিল সিআইডি। এনআইএ শনিবার এ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এডিজি (সিআইডি) রামফল পওয়ার রিপোর্ট চান স্পেশ্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট সব্যসাচীরমণ মিশ্রের কাছে। সিআইডি-র দাবি, কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির কর্তাদের অনুরোধেই শুক্রবার খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণস্থল থেকে কিছু রাসায়নিক ও বিস্ফোরকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২১

জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) জানতে চাওয়ায় খাগড়াগড়ের বাড়ি থেকে শুক্রবার দু’দফায় মালপত্র নেওয়ার ব্যাখ্যা দিল সিআইডি। এনআইএ শনিবার এ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় এডিজি (সিআইডি) রামফল পওয়ার রিপোর্ট চান স্পেশ্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট সব্যসাচীরমণ মিশ্রের কাছে। সিআইডি-র দাবি, কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির কর্তাদের অনুরোধেই শুক্রবার খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণস্থল থেকে কিছু রাসায়নিক ও বিস্ফোরকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে সিআইডি-র এই ব্যাখ্যার পরেও একাধিক প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি।

শুক্রবার দুপুরে বর্ধমান থানার এক সাব ইনস্পেক্টরকে খাগড়াগড়ের ওই বাড়িতে গিয়ে একটি কালো ল্যাপটপ ব্যাগে কিছু জিনিস নিয়ে চলে যেতে দেখা যায়। তখনই রহস্যের শুরু। কী নিয়ে যাওয়া হল ব্যাগে, তথ্যপ্রমাণ লোপাট করা হচ্ছে কি নাএ সব প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এনআইএ সরকারি ভাবে তদন্তভার নেওয়ার পরে, সিআইডি আর এক দফায় বিস্ফোরণস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করায় বিভ্রান্তি আরও বাড়ে। বিরোধী দলগুলি তো বটেই, এমনকী, প্রাক্তন পুলিশ বা গোয়েন্দা-কর্তাদের অনেকেও বলতে শুরু করেন “এ ভাবে নমুনা সংগ্রহ করা হলে কেউ ভাবতেই পারেন, এনআইএ আসার আগে ঘটনাস্থল প্রায় লেপাপোছা করে দেওয়া হচ্ছে।”

বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিনও বর্ধমানে অভিযোগ করেন, “ঠিকমতো তদন্ত হলে বিস্ফোরণ-কাণ্ডের সঙ্গে তৃণমূলের যোগ মিলবে। এর মধ্যেই খাগড়াগড় থেকে অনেক নমুনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার যদি ঠিকঠাক তদন্ত চাইত, তা হলে এনআইএ-কে অনেক আগেই পাঠানো উচিত ছিল।”

জেলা পুলিশ ও সিআইডি-র তরফে শুক্রবার করা হয়েছিল, বিস্ফোরণস্থলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রক্তমাখা জামাকাপড়, কার্তুজ, কাগজ, কাচ ও কিছু রাসায়নিক ব্যাগে করে নিয়ে আসা হয়েছে ‘সিজার লিস্ট’ তৈরি করার জন্য। কিন্তু এই বিবৃতিতে ধন্দ কাটেনি। প্রশ্ন উঠেছিল, জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা (এনআইএ) বিস্ফোরণের তদন্তভার হাতে নেওয়ার পরে, এমনকী, ভবানী ভবনে পৌঁছে যাওয়ার পরে কেন জেলা পুলিশ বা সিআইডি ঘটনাস্থলে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করল? সিআইডি ৩ অক্টোবর থেকে খাগড়াগড়ের বাড়ির জিম্মা নিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছিল, তা হলে শুক্রবার পর্যন্ত কেন ‘সিজার লিস্ট’ তৈরি হয়নি? এর পরেই এ দিন এনআইএ বিষয়টি সিআইডি-র কাছে জানতে চায়।

সিআইডি সূত্রের খবর, সব্যসাচীবাবু এ দিন তাঁর রিপোর্টে জানিয়েছেন, বিস্ফোরণস্থলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রাসায়নিক ও বিস্ফোরক সংগ্রহ করে আলাদা-আলাদা ভাবে নমুনার উপরে ‘লেবেলিং’ চলছিল। সে জন্য আরও কিছু নমুনা সংগ্রহ করার প্রয়োজন ছিল। সে জন্যই সিআইডি-র অফিসারেরা শুক্রবার খাগড়াগড়ে যন। ‘লেড অ্যাজাইড’-এর মতো কিছু রাসায়নিক সেখানে পড়ে রয়েছে, যা বেশ বিপজ্জনক। সিআইডি অফিসারদের সঙ্গে ছিলেন বর্ধমান থানার দু’জন অফিসার। তাঁরাই নমুনা সংগ্রহ করে কালো ল্যাপটপ ব্যাগে ভরে নিয়ে আসেন। সব্যসাচীবাবু আরও দাবি করেন, কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি ঘটনাস্থল থেকে সব নমুনা সংগ্রহ করতে পারেনি। তাই তাদের জন্য নমুনা সংগ্রহ করেছে সিআইডি। শনিবারই সব নমুনা ল্যাবরেটরিতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আজ, রবিবার কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির একটি দল খাগড়াগড়ে পৌঁছচ্ছে।

প্রশ্ন উঠেছে, ফরেন্সিক ল্যাবরেটরির জন্য সিআইডি বা জেলা পুলিশ কেন নমুনা সংগ্রহ করবে? সে কাজ তো ল্যাবরেটরির নিজস্ব কর্মীরাই তা করতে পারেন! এ ব্যাপারে সিআইডি বা ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি কর্তাকেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে সূত্র বলছে, এত দিন পর্যন্ত সিআইডি-র তদন্ত যথেষ্ট ঢিমেতালে চলছিল। কোনও নমুনা তারা সংগ্রহ করেনি। এনআইএ দায়িত্ব নেওয়ার পরে তাদের অফিসারেরা এসে সংগৃহীত নমুনা দেখতে চাইতে পারেন, অনুমান করেই তড়িঘড়ি ব্যাগে করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

শনিবার সকালেও সিআইডি-র অফিসারেরা আরও এক বার খাগড়াগড়ের বাড়িতে যেতে চেয়েছিলেন। এ জন্য জেলা পুলিশের কয়েকজন অফিসারকেও তাঁরা সঙ্গে চান। কিন্তু বর্ধমানের পুলিশ সুপার এসএমএইচ মির্জা তাঁদের জানিয়ে দেন, এনআইএ তদন্তভার নিয়ে নেওয়ার পরে জেলা পুলিশের কর্মীদের পক্ষে আর সিআইডি-র সঙ্গে যাওয়া সম্ভব নয়। তাঁরা তদন্তে গেলে এ বার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দাদের সঙ্গেই যাবেন।

এ দিন বিকেল ৫টা নাগাদ এনআইএ-র অফিসারেরা ঘটনাস্থলে গেলে খোদ পুলিশ সুপার-সহ জেলা পুলিশের অন্য কর্তারা তাঁদের সঙ্গে যান। বর্ধমান জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, সিআইডি অফিসারদের সঙ্গে শুক্রবার খাগড়াগড়ে যাওয়ার আগে তাঁরা থানায় ডায়েরি-র আকারে তার উল্লেখ করে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে কী কী নমুনা নিয়ে আসা হয়েছে, তার তালিকা ডায়েরিতে লিখে রাখা হয়েছে। তাঁদের দাবি, কোনও তথ্য-প্রমাণ লোপাট করা হয়নি।

khagragarh blast bardwan cid nia bomb blast state news online state news black bag
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy