জঙ্গি কার্যকলাপ হোক কিংবা মামুলি সাইবার অপরাধ, বহু ক্ষেত্রেই অপরাধের তদন্তে বিদেশ থেকে তথ্য পাওয়া জরুরি। কিন্তু দ্রুত তা পেতে অনেক সময়েই সমস্যা হচ্ছে গোয়েন্দাদের। তাতে তদন্তে হোঁচট খেতে হচ্ছে, সমস্যা হচ্ছে মামলা দাঁড় করাতে। সব সমস্যা কাটিয়ে কী ভাবে দ্রুত প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়— এ বার সেই পাঠ নিলেন রাজ্যের গোয়েন্দারা। কলকাতা তথা এই রাজ্যে এমন কর্মশালা এই প্রথম।
আন্তর্জাতিক সীমান্তরেখা হামেশাই মুছে ফেলে অপরাধের জাল। এক দিকে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মতো ঘটনার তদন্তে পড়শি দেশের বহু নাগরিক অভিযুক্ত। অন্য দিকে বহু মানুষেরই এখন সাইবার দুনিয়ায় অবাধ গতিবিধি। সেই জগতে চলাফেরার সূত্রেই ধীরে ধীরে এক এক জন হয়ে উঠছে অপরাধী, ছক তৈরি হচ্ছে বড়সড় অপরাধের। অথচ বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন সংস্থার সদর দফতর, তাদের সার্ভার বিদেশে। কাজেই তথ্যপ্রমাণ পেতে ওই সব বিদেশি সংস্থার দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় নেই।
কী ভাবে তা পাওয়া যাবে, তার সুলুকসন্ধান দিতে গত বুধবার, ১২ এপ্রিল লালবাজারে কলকাতা পুলিশ ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হল। কর্মশালার আয়োজক ছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।
পশ্চিমবঙ্গে রুজু হওয়া ইসলামিক স্টেট বা আইএস সংক্রান্ত একটি মামলায় চার্জশিট দিতে এনআইএ-কে সাহায্য করতে গত ডিসেম্বরে মার্কিন মুলুকের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)-এর একটি দল কলকাতায় এসেছিল। তার পরেই ওই মামলার চার্জশিট দিতে পারে এনআইএ। সেটি হল, সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গি হিসেবে ধৃত, বীরভূমের যুবক মহম্মদ মুসার বিরুদ্ধে রুজু হওয়া মামলা। মুসার গতিবিধি ছিল একটি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে, যার সদর দফতর আমেরিকায়। কিন্তু রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলির এমন সুযোগ নেই বললেই চলে। তাঁদের ভরসা মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স ট্রিটি (এমল্যাট)। ভারতের সঙ্গে ৩৯টি দেশের ওই চুক্তি আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুলিশ এমল্যাট-এর মাধ্যমে তথ্য পেতে চেষ্টা করে। এ ছাড়া, বিদেশ থেকে তথ্য পাওয়ার আর একটি মাধ্যম ‘লেটার অব রেগোরেটরি’। যেখানে ভারতের কোনও আদালত অন্য দেশের আদালতের কাছে লিখিত ভাবে তথ্য চায়।
রাজ্যের গোয়েন্দাদের অভিজ্ঞতা, বহু ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, বিদেশ মন্ত্রক তাঁদের কাছে নানা ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠায়। সেই চিঠির উত্তর দেওয়া, তাতে সন্তুষ্ট হওয়া— সব মিলিয়ে গোটা প্রক্রিয়াটি সময় সাপেক্ষ। যেটা সম্পূর্ণ করতে গিয়ে অভিযুক্ত সম্পর্কে তথ্য পেতেই দেরি হয়ে যায়। ফলে মামলা দাঁড় করাতে সমস্যা হয়। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের নিদান— এ সব ক্ষেত্রে নথিপত্র নিয়ে দিল্লি চলে যাওয়া ভাল, যাতে কোনও প্রশ্ন উঠলে সঙ্গে সঙ্গে তার উত্তর দিতে পারেন তদন্তকারী অফিসার। তাতে চিঠি চালাচালির দরকার হবে না।
সময়ও বাঁচবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy