Advertisement
E-Paper

কবে আসবেন পার্থ, অপেক্ষায় পিছোল ক্লাস

উৎকর্ষ নয়, এ যেন আনুগত্যের প্রতিযোগিতা চলছে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে। রাজ্য সরকারের কাছে কার নম্বর কত বাড়বে, সেই পরীক্ষায় এ ওকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন উপাচার্যরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:২২
শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনিল ভুঁইমালি (একেবারে ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনিল ভুঁইমালি (একেবারে ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

উৎকর্ষ নয়, এ যেন আনুগত্যের প্রতিযোগিতা চলছে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে। রাজ্য সরকারের কাছে কার নম্বর কত বাড়বে, সেই পরীক্ষায় এ ওকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন উপাচার্যরা। বুধবার তার নয়া নজির তৈরি করে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঘোষণা করলেন, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় না এলে শুরু হবে না স্নাতকোত্তর শ্রেণির পঠন-পাঠন।

রায়গঞ্জে এক সাংবাদিক বৈঠকে উপাচার্য অনিল ভুঁইমালি জানান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে কলাবিভাগে স্নাতকোত্তর পাঠ্যক্রম চালুর অনুমোদন মিলেছে। ছাত্রভর্তি প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ। ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল সেপ্টেম্বরের গোড়ায়। কিন্তু এখনই ক্লাস শুরু হচ্ছে না। কেন? উপাচার্যের কথায়, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী আমার হাত ধরে অনুরোধ করে বলেছেন, আমি চাই রায়গঞ্জে গিয়ে ছাত্রদের উদ্দেশে কিছু কথা বলতে।’’ তা হলে কবে শুরু হবে ক্লাস? উপাচার্য জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রী কবে আসতে পারবেন, তা দিন দুয়েকের মধ্যে জানাবেন। তাই ক্লাস কবে শুরু হবে, তা নিশ্চিত নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানান, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্নাতকোত্তর পঠনপাঠনের উদ্বোধন করার জন্য তাঁকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন। পার্থবাবু এ দিন রাতে বলেন, ‘‘আমি কাল ওঁকে ফোন করে বলব, আমার জন্য অপেক্ষা না করে উদ্বোধন করে দিন। কারণ এখন আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়।’’

পার্থবাবুর কাছে প্রশ্ন ছিল, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে পাঠ্যক্রমের উদ্বোধন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কি স্বাধিকার ভঙ্গ হত না? শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের সরকারের আমলে যে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে তার মধ্যে প্রথম স্নাতকোত্তর পাঠনপাঠন শুরু হবে রায়গঞ্জেই। তাই উপাচার্য আমায় অনুরোধ করেছিলেন। এতে অসুবিধা কী আছে?’’

উপাচার্যও এ দিন রাজ্য সরকারকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, ‘‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও পরিষদীয় সচিব অমল আচার্যের তৎপরতায় মাত্র দু’মাসের মধ্যে ইউজিসির অনুমোদন পেয়েছে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়।’’

নজিরবিহীন ভাবে, জেলা শাসকের ডাকা সর্বদলীয় বৈঠকেও তিনি উপস্থিত থাকবেন বলে উপাচার্য জানিয়েছেন। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানান, রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তার বিষয়ে সব দলের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন জেলা শাসক রণধীর কুমার। সেখানে উপাচার্যও উপস্থিত থেকে কিছু প্রস্তাব রাখবেন।

কিছুদিন আগে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ করে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া। তার আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনার রিপোর্ট শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জমা দেওয়ায়, এবং তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ায় স্বাধিকার ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছিল প্রাক্তন উপাচার্য সুরঞ্জন দাশের বিরুদ্ধে। কিন্তু এ ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের ‘উদ্বোধন’ করতে শিক্ষামন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করার নজির এ রাজ্যে তো বটেই, আর কোনও রাজ্যেও আছে কিনা সন্দেহ।

প্রসঙ্গত, উপাচার্য অনিল ভুঁইমালি শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পিএইচডি গাইড ছিলেন। সেই সূত্রে তাঁদের ঘনিষ্ঠতা অনেক দিনের। গত ৩ সেপ্টেম্বর রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গুলি-বোমা বর্ষণের ঘটনার পর অভিযোগ ওঠে, অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের আড়াল করতে ঘটনার গুরুত্বকে লঘু করে দেখাচ্ছেন উপাচার্য।

সাংবাদিক সম্মেলনেও তিনি বলেন, রাজ্যপালের কাছে ৩ সেপ্টেম্বরের ঘটনার বিষয়ে পাঠানো রিপোর্টে বহিরাগতদের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে হাতাহাতি, এবং সে সময়ে তীব্র শব্দের উল্লেখ করা হয়েছে।

কেন বোমা এবং গুলির কথা রিপোর্টে উল্লেখ করা হল না? উপাচার্যের দাবি, রেজিস্ট্রার এবং অন্যান্য শিক্ষকের কাছ থেকে তিনি ঘটনার লিখিত বিবরণ চেয়েছিলেন। উপাচার্যের যুক্তি, ‘‘সেই বিবরণে কেউই গুলি ও বোমার কথা উল্লেখ না করে, তীব্র শব্দ শোনার কথা বলেছেন।’’

শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে অবশ্য অন্য ছবি মিলছে। শিক্ষক দেবাশিস বিশ্বাস বলেন, ‘‘গত সোমবার বৈঠকে আমরা গুলি চালানো, বোমাবাজির বিষয়টি লিপিবদ্ধ করতে বলেছিলাম। কিন্তু বৈঠকে গোলমাল শুরু হলে উপাচার্য বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যায়। আমাদের অভিযোগ লিপিবদ্ধ হয়নি।’’

সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির আহ্বায়ক তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী তপন নাগের কথায়, ‘‘গত মঙ্গলবার উপাচার্যকে লিখিত ভাবে বোমা এবং গুলি চলার শব্দ শোনার কথা জানিয়েছিলাম। তার প্রতিলিপি মুখ্যমন্ত্রী, জেলাশাসককেও দিয়েছি।’’

তা সত্ত্বেও কেন বোমা-গুলি চলার বিষয়টি উল্লেখ করা হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে। ছাত্র পরিষদের উত্তর দিনাজপুরের জেলা সভাপতি নব্যেন্দু ঘোষের অভিযোগ, ‘‘শাসক দলকে সন্তুষ্ট রাখতেই উপাচার্য এমন রিপোর্ট দিয়েছেন।’’

Raiganj University Partha Chatterjee student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy