এর আগে শেষ বার তিনি এসেছিলেন যে দিন বালির ঘাট সেতু থেকে ভাণ্ডারদহ বিলে পড়ে গেল বাস। বহরমপুর পর্যন্ত এসেছিলেন হেলিকপ্টারে, সেখান থেকে সেতুর কাছ পর্যন্ত গাড়িতে।
তখনই মুখ্যমন্ত্রীর চোখে পড়েছিল, রাস্তার কী দুর্দশা। সে দিন এ সব কথা তোলার পরিস্থিতি ছিল না। বিলের জল থেকে বাস এবং যাত্রীদের দেহ তুলতেই তখন নাকানি-চোবানি খাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসন।
সোমবার মুর্শিদাবাদের প্রশাসনিক সভা করতে এসে কিন্তু সেই রাস্তা নিয়েই পূর্তকর্তাদের চেপে ধরলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বহরমপুর ডিভিশন ২-এর এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অদ্রীশ চৌধুরীকে তুলে তিনি বলেন, “সে দিন এসে দেখলাম, বহরমপুর থেকে বালির ঘাট যাওয়ার রাস্তা খারাপ। কেন এই অবস্থা?’’ এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘রাস্তাটি সংস্কারের কাজ চলছে।’’ তা শুনে দৃশ্যতই বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “রাস্তা খারাপ আর এখন বলছেন রাস্তার কাজ চলছে! কেন রাস্তা খারাপ থাকবে?”
সামাল দিতে মাঠে নামেন পূর্ত দফতরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ইন্দিবর পান্ডে। তিনি বলেন, “অন্য জেলার তুলনায় নদিয়া-মুর্শিদাবাদের রাস্তা একটু পিছিয়ে আছে। বীরভূমের দিকে থেকে বালি ভর্তি লরি আসছে। সেগুলো থেকে জল পড়ে-পড়ে রাস্তা খারাপ হচ্ছে। তা ছাড়া যানবাহনও এখানে বেশি চলে।” তবে জেলার চারটি রাস্তা চওড়া করা হচ্ছে বলেও তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে জানান।
ইতিমধ্যে প্রতিটি সেতুতে ‘ক্র্যাশ ব্যারিয়ার’ বসানো, ওয়াচ টাওয়ার তৈরির মতো একগুচ্ছ প্রকল্প হাতে নিয়েছে রাজ্য সরকার। নদিয়া থেকে ঝাড়গ্রাম, একের পর এক সভায় পথ নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। যদিও এ দিন তাঁরই প্রশাসনিক সভায় লোক আনার জন্য ট্রেকার পিছু ২১ জন করে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুর্শিদাবাদের আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক অনন্তচন্দ্র সরকার। যদিও এমনিতে ১৪ জনের বেশি ট্রেকারে বসতে পারার কথা নয়। সন্ধ্যায় তিনি অবশ্য দাবি করেন, ‘‘একজোট হয়ে অনেকে আসতে চায়, তাই ওই কথা বলা হয়েছিল। তবে কোনও ট্রেকারেই অত লোক ওঠেনি।’’
শুধু বালির ঘাটের রাস্তাই নয়, বহরমপুর শহরের একটি রাস্তার হাল নিয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। শহরের বাস টার্মিনাসের কাছে ট্রেকার স্ট্যান্ড থেকে উত্তরবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার টার্মিনাসের পাশ দিয়ে যাওয়া ওই রাস্তা খারাপ কেন, পুরপ্রধানের কাছে তার জবাবদিহি চান তিনি। পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য জানান, রাস্তাটি দেখভাল করে জেলা পরিষদ। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বৈদ্যনাথ দাস তড়িঘড়ি বলেন, “ওই রাস্তার কাজের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া চলছে।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওটা বড় কাজ। জেলা পরিষদ করতে পারবে না। রাস্তাটা পুর্ত দফতরকে দিয়ে দাও।’’