Advertisement
E-Paper

নতুন নাম বাছতে দীর্ঘ বৈঠক হোটেলের ঘরে

সোমবার চার শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীর চার ঘণ্টা অবরোধের জেরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের ভোটগণনার ঘোষণা স্বস্তি দিয়েছিল তৃণমূলকে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা কাটতে না-কাটতেই শাসক দলকে তীব্র বিড়ম্বনার মুখে ফেলে দিলেন সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়।

দেবাশিস ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩৯

সোমবার চার শীর্ষ নেতা-মন্ত্রীর চার ঘণ্টা অবরোধের জেরে রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের ভোটগণনার ঘোষণা স্বস্তি দিয়েছিল তৃণমূলকে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা কাটতে না-কাটতেই শাসক দলকে তীব্র বিড়ম্বনার মুখে ফেলে দিলেন সুশান্তরঞ্জন উপাধ্যায়। দিনের শেষে অবশ্য পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে কমিশনারের অতিরিক্ত দায়িত্ব দিতে পেরে থিম্পুতে কিঞ্চিৎ স্বস্তির হাওয়া!

নির্বাচন কমিশনার ইস্তফা দিতে পারেন বলে সোমবার সন্ধের পর থেকেই কলকাতায় কানাঘুষো চলছিল। সেই জল্পনা ভেসে আসে থিম্পুতেও। মঙ্গলবার কমিশনার অফিসে না-যাওয়ায় ইস্তফার জল্পনা বাড়ে। এর পর দুপুরে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে সুশান্তবাবু তাঁর হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সেই খবর এসে পৌঁছয় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তিনি তখন ভারতীয় দূতাবাসে চা-চক্র সেরে বেরোচ্ছেন।

নির্বাচন কমিশনারের ইস্তফার খবর রাজ্য সরকারকে জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ ব্যাপারে নবান্নের মতামত চেয়েছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। ফলে তৎপর হয়ে ওঠে প্রশাসন। দূতাবাসের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই ছিলেন মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র। পথ চলতে চলতেই পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর হোটেলে ফিরে ঘরে ডেকে নেন মুখ্যসচিব এবং নিজের সচিব গৌতম সান্যালকে। সুশান্তবাবু আচমকা ইস্তফা দেওয়ায় যে সাংবিধানিক জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে বেরোনোর পথ নিয়ে তাঁদের মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেখানেই আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি ঠিক হয়। তখন হোটেলেই ছিলেন পরিবহণসচিব। তাঁকে নিজের ঘরে ডাকেন মুখ্যমন্ত্রী। বিনা বাক্যব্যয়ে রাজি হন আলাপনবাবু।

আলাপনবাবুর নাম চূড়ান্ত হতেই রাজ্যপালের কাছে দু’টি ফাইল পাঠানো হয়। একটি সুশান্তবাবুর ইস্তফা গ্রহণ করে, অন্যটি আলাপনবাবুর নাম সুপারিশ করে। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে খবর আসে, নতুন কমিশনার হিসাবে আলাপনের নাম গ্রহণ করেছেন রাজ্যপাল। সেই মর্মে রাতেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে নবান্ন। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, তিনি পরিবহণসচিবের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলাবেন। সরকারের এক শীর্ষ কর্তা জানান, আলাপনের আরও ছ’বছর চাকরি রয়েছে। সরকার তাঁকে আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহার করতে চায়। ফলে তিনি নিজেও কমিশনার পদে কত দিন থাকতে আগ্রহী হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

রাজ্যের অফিসারদের মতে, আলাপনবাবুকে যে স্থায়ী নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ভাবা হচ্ছে না, তাঁকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সেই ইঙ্গিতই দিতে চেয়েছেন। নবান্নের এক কর্তা জানান, নির্বাচন কমিশনার হিসেব যে ‘উপযুক্ত’ কাউকে দরকার, তা এখন বুঝতে পারছে সরকার।

সরকারের ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, সুশান্ত যে এমন কাণ্ড ঘটাবে তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি নবান্নের কর্তারা। তাঁদের কথায়, আগের কমিশনার মীরা পাণ্ডের সঙ্গে রাজ্য সরকারের দীর্ঘ লড়াই হয়েছে। সেই লড়াই আদালত পর্যন্তও গড়িয়েছে। কিন্তু সুশান্তবাবুর মতো সরকারকে অপদস্থ মীরা পাণ্ডেও করেননি। একটা সঙ্কট তৈরি করে তিনি চলে গেলেন! ‘‘এটা শুধু গর্হিত কাজই নয়, ওই পদের পক্ষে বেমানানও’’— মত এক শীর্ষ কর্তার। নবান্নের একাংশের দাবি, সুশান্তবাবুর ‘হঠকারী’ কাজের পিছনে অন্য প্ররোচনা ছিল। তবে দিনের শেষে নির্ঝঞ্ঝাটে আলাপনকে ওই পদে বসাতে পেরে স্বস্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে প্রশাসনের শীর্ষ মহলে।

ইস্তফা দেওয়ার আগে ৯ অক্টোবর আড়াইখানা পুরসভার ভোটগণনা এবং তার আগে কিছু বুথে পুনর্নির্বাচন করার কথা ঘোষণা করেছিলেন সুশান্তবাবু। কিন্তু কোন কোন বুথে ফের ভোট হবে, তা যেমন তিনি জানাননি, তেমনই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিজ্ঞপ্তিও জারি করেননি। এই অবস্থায় নতুন কমিশনার যোগ দেওয়ার পরেও কি সেই ঘোষণা বলবৎ থাকবে? মুখ্যসচিব এই প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘কোনও খালি পদে যখন নতুন লোক আসেন তখন সব বিষয়টি নতুন করে বিবেচনা করার অধিকার তাঁর থাকে। এখানেও নতুন কমিশনার কাজে যোগ দিয়ে নিজের মতো করে সব বুঝবেন, সিদ্ধান্ত নেবেন।’’

নতুন দায়িত্ব পেয়ে আলাপনবাবু অবশ্য কিছু বলতে চাননি। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, ‘‘আগে কাজ শুরু করি। দেখি কোথায় কী আছে। আমি তো কিছুই জানি না। সব দেখেশুনে পরে কিছু বলার থাকলে বলব।’’ নতুন পদে যোগ দিতে আজ, বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ কলকাতায় পৌঁছনোর কথা আলাপনবাবুর। তাঁকে অবশ্য কমিশনার পদে শপথ নিতে হবে না। কলকাতায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরের সামনে মঞ্চ বেঁধে অবস্থান বিক্ষোভ চালাচ্ছিল তৃণমূল। এ দিন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সেই মঞ্চ আপাতত থাকুক। কিন্তু বুধবার আলাপনবাবু কার্যভার নিতে যাওয়ার সময়ে যেন কোনও স্লোগান বা বিক্ষোভ না হয়।

debashis bhattacharya chief minister thimpu hotel election commission sushanta ranjan upadhyay sr upadhyay alapan bandyopadhyay mamata meeting mamata lengthy meeting gautam sanyal abpnewsletters
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy