Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সবার জন্য শৌচাগার নদিয়ায়, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

ধর্মঘটে গোটা রাজ্য যখন অচল, নদিয়ার নানা প্রান্ত থেকে বাসে লোক নিয়ে এসেছিল জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুরে কৃষ্ণনগর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের মাঠে সেই সমাবেশে দাঁড়িয়ে নদিয়াকে ‘প্রথম উন্মুক্ত শৌচবিহীন জেলা’ হিসেবে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতি বছর ৩০ এপ্রিল দিনটিকে ‘নির্মল বাংলা দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে বলেও জানিয়ে দিলেন তিনি।

নদিয়ার অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ইউনিসেফ দিল্লি শাখার প্রধান ডেভিড ম্যাক লকলিন। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

নদিয়ার অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ইউনিসেফ দিল্লি শাখার প্রধান ডেভিড ম্যাক লকলিন। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০৩:২১
Share: Save:

ধর্মঘটে গোটা রাজ্য যখন অচল, নদিয়ার নানা প্রান্ত থেকে বাসে লোক নিয়ে এসেছিল জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুরে কৃষ্ণনগর সরকারি মহাবিদ্যালয়ের মাঠে সেই সমাবেশে দাঁড়িয়ে নদিয়াকে ‘প্রথম উন্মুক্ত শৌচবিহীন জেলা’ হিসেবে ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতি বছর ৩০ এপ্রিল দিনটিকে ‘নির্মল বাংলা দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে বলেও জানিয়ে দিলেন তিনি।

প্রস্তুতিটা শুরু হয়েছিল বছর দুই আগেই। ২০১৩-তে নদিয়া জেলা প্রশাসনের বাড়ি-বাড়ি সমীক্ষা করে দেখা যায়, গ্রামাঞ্চলে প্রায় ১০ লক্ষ পরিবারের মধ্যে লাখ তিনেকের শৌচাগার নেই। ওই বছর ২ অক্টোবর থেকে জেলা প্রশাসন নিজস্ব ‘সবার শৌচাগার’ প্রকল্প চালু করে। নির্মল ভারত অভিযান, ১০০ দিন কাজের প্রকল্প ও জাতীয় গ্রামীণ জীবিকা মিশন প্রকল্প জুড়ে তাতে গতি আনা হয়।

চার মাসের মধ্যেই ১ লক্ষ ৩২ হাজার শৌচাগার তৈরি হয়। এরই মধ্যে জানা যায়, শহরাঞ্চলে আরও সাড়ে ১২ হাজার ও গ্রামাঞ্চলে আরও ১৭ হাজার পরিবার সমীক্ষার বাইরে থেকে গিয়েছিল। সব মিলিয়ে প্রায় ৩ লক্ষ ৩৯ হাজার পরিবারের শৌচাগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসনের দাবি, ইতিমধ্যে প্রায় ৩ লক্ষ ২৫ হাজার শৌচাগার তৈরি হয়ে গিয়েছে। জেলার সব মানুষ যাতে শৌচাগার ব্যবহার করেন, তার জন্য ব্যাপক প্রচারও চালানো হয়েছে। সম্প্রতি ৩৪ নন্বর জাতীয় সড়কে ১২২ কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। প্রায়‌ ছ’হাজার পাড়া নজরদারি কমিটি গড়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, ১ এপ্রিলের পরে কেউ খোলা জায়গায় শৌচক্রিয়া করলে শাস্তি হিসাবে তাঁর পরিবারকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য সব সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হবে। আবার, কোনও পরিবারে শৌচাগার না থাকার খবর কেউ দিলে তাঁকে পুরস্কার দেওয়া হবে।


বৃহস্পতিবার নিমর্ল বাংলা দিবস উপলক্ষে বারাসত স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠান।—নিজস্ব চিত্র।

এ দিন ইউনিসেফ ও বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা সভায় উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চে ছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ও।‌ তবে নদিয়ার সব পরিবার শৌচাগার পেয়েছে কি না, তা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন। এ প্রসঙ্গে জেলাশাসক পি বি সালিম বলেন, ‘‘আমরা চেষ্টা করেছি, প্রতিটি উঠোন পিছু একটা করে শৌচাগার বানিয়ে দিতে। প্রতিটি পরিবারের জন্য শৌচাগার তৈরি করা সম্ভব নয়।’’

নদিয়ার ঢঙেই জেলায়-জেলায় মানববন্ধন হয়। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত স্টেডিয়ামে শৌচাগার ব্যবহারের শপথ নেন হাজার তিনেক মানুষ। জেলার ২২টি ব্লকে ১ লক্ষ ২২ হাজার শৌচাগার গড়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। তবে বাঁকুড়া শহরে কড়া রোদে ঘণ্টাখানেক মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে থাকতে গিয়ে চার ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হুগলির গোঘাট ২ ব্লকে পদযাত্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ে জনা আশি পড়ুয়া। এর মধ্যে কামারপুকুর নয়নতারা বালিকা বিদ্যালয়ের ৩২ জনকে কামারপুকুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিত্‌সা করানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE