Advertisement
E-Paper

‘স্থায়ী ঠিকানা’ পেল বঙ্গের উদ্বাস্তু কলোনি, রাজ্যের নয়া নামকরণে দীর্ঘ ‘গ্লানি’ ঢাকার উদ্যোগ!

মন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘স্থায়ী ঠিকানা’র ১০০ শতাংশ বাসিন্দা এ বার পাট্টাও পাবেন। সরকারি হিসাবে, কলোনির ৯৯ শতাংশ বাসিন্দাকেই পাট্টা দেওয়া হয়েছে। বাকি এক শতাংশকেও শীঘ্রই দেওয়া হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৪ ১৯:১৭
image of colony

নতুন নাম পেল উদ্বাস্তু কলোনি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বস্তির পর নতুন নাম পেল উদ্বাস্তু কলোনিও। এখন থেকে নাম ‘স্থায়ী ঠিকানা’। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার রাজ্যের মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, ‘স্থায়ী ঠিকানা’র ১০০ শতাংশ বাসিন্দা এ বার পাট্টাও পাবেন। রাজ্যের জলসম্পদ মন্ত্রী মানস ভুইয়াঁ এই প্রসঙ্গে কটাক্ষও করেছেন বামেদের। তিনি জানান, বামফ্রন্ট কথার কথা বললেও স্থায়ী সমাধান করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাই।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরে ও পার বাংলা থেকে এ পারে উদ্বাস্তু হয়ে চলে এসেছিলেন অসংখ্য মানুষ। বিভিন্ন জেলায় তাঁদের বসবাসের জন্য জমি দিয়েছিল সরকার। সেই জমিতে গড়ে উঠেছে বসতি। এগুলিকে বলা হয় ‘উদ্বাস্তু কলোনি’, যাকে বরাবর জেলা বা শহরের অন্য এলাকা থেকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। একটু দূরেই সরিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। কাঁটাতার পেরিয়ে এসেও অন্য এক ‘কাঁটাতার’-এ আটকে পড়েন উদ্বাস্তুরা। এ বার সেই ‘কাঁটাতার’ই ছিঁড়ে দিতে চাইছে কি মমতার সরকার! এ প্রসঙ্গে অরূপ বলেন, ‘‘আমরা যাঁরা ও পার বাংলা থেকে এসেছি, কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে যাঁরা এসেছেন, দীর্ঘ দিন লড়াই-সংগ্রাম করে এসেছেন, সকলে তাঁদের উদ্বাস্তু বলেন। অধিকাংশ কলোনির নামই উদ্বাস্তু কলোনি।’’ সেই নামই বদলের সিদ্ধান্ত হয়েছে নতুন ইংরেজি বছরের প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকে। পাশাপাশি কলোনির বাসিন্দারা পাবেন স্বীকৃতি। অরূপ বলেন, ‘‘যাঁরা উদ্বাস্তু কলোনির মানুষ, দীর্ঘ দিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে রয়েছেন, আজ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে একে বলা হবে ‘স্থায়ী ঠিকানা’। যাঁরা এই ‘স্থায়ী ঠিকানা’য় রয়েছেন, সকলেই পাট্টা পাবেন।’’

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে ও পার বাংলা থেকে এ পারে চলে এসেছেন লাখ লাখ মানুষ। উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি-সহ সীমান্তবর্তী সব জেলায় ঘরছাড়া মানুষদের বসবাসের জন্য জায়গা দিয়েছিল সরকার। যদিও স্থায়িত্বের স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। স্থায়ী ঠিকানার দাবিতে ১৯৫৩ সালের এপ্রিলে ঐতিহাসিক বিধানসভা অভিযান করেছিলেন উদ্বাস্তুরা। ১৯৫৪ সালের সরকারি সিদ্ধান্তে স্থায়ী অস্তিত্বের আশ্বাস পায় বিভিন্ন উদ্বাস্তু কলোনি অঞ্চল। সেই আশ্বাস পূরণ হতে সময় লেগেছে বহু বছর। কলোনিতে বসবাসকারীদের বড় অংশের অভিযোগ ছিল, তারা পাট্টা পাননি। বৃহস্পতিবার অরূপ জানান, সরকারি হিসাবে ৯৯ শতাংশকেই পাট্টা দেওয়া হয়েছে। বাকি এক শতাংশকেও শীঘ্রই পাট্টা দেওয়া হবে। তাঁরা এত দিন পারিবারিক কারণেই পাট্টা পাননি। তাঁর কথায়, ‘‘এক শতাংশ বাকি রয়েছেন, যাঁদের পারিবারিক সমস্যা রয়েছে। তাঁরাও যাতে মিটিয়ে নিতে পারেন, তাঁদের যাতে আমরা পাট্টা দিতে পারি, সেই চেষ্টাই চলছে।’’

এই নিয়ে পূর্বতন বাম সরকারকে নিশানা করেছেন মানস। তিনি বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট কথার কথা বলেছে। স্থায়ী সমাধান করেছেন আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি প্রমাণ করলেন, তিনি যা বলেন, তিনি তা করেন। বামপন্থী বন্ধুরা, যাঁরা এখনও চিৎকার করছেন, চিন্তা করবেন।’’ এর আগে বস্তির নামও বদল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বস্তির নতুন নাম হয়েছে ‘উত্তরণ’। অরূপ জানিয়েছেন, সেই মতো উদ্বাস্তু কলোনিকেও এখন থেকে বলা হবে ‘স্থায়ী ঠিকানা’।

অভিযোগ, উদ্বাস্তু কলোনিতে বসবাসকারীদের দীর্ঘ দিন দূরেই ঠেলে রেখেছেন বাকিরা। কলোনির বাসিন্দারাও ভুগেছেন ‘হীনম্মন্যতা, গ্লানিতে’। বাকিদের সঙ্গে সেই কাঁটাতারের ফারাকটাই কি এ বার মিটিয়ে দিতে চাইছে রাজ্য সরকার? মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পর সেই প্রশ্ন উঠেছে।

Mamata Banerjee Arup Biswas TMC refugee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy