এসএসকেএম হাসপাতালে উডবার্ন ২-এর উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ১০তলা এই ভবনের নামও রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রীই। নতুন উডবার্ন ওয়ার্ডের নাম রাখা হয়েছে ‘অনন্য’।
এই বহুতলে থাকছে ১৩১টি কেবিন। কোন ধরনের কেবিনের কত ভাড়া তা-ও সোমবার ঘোষণা করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সিঙ্গল কেবিনের ভাড়া ৫ হাজার টাকা, সিঙ্গল স্যুট ৮ হাজার টাকা, এইচডিইউ পরিকাঠামো যুক্ত শয্যার ভাড়া ১২ হাজার টাকা, আইটিইউ শয্যা ১৫ হাজার টাকা (প্রতি ক্ষেত্রেই ভাড়া ধার্য হবে দৈনিক হারে)। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ প্রতি ক্ষেত্রেই ভাড়া ধার্য করেছিলেন ২ হাজার টাকা বেশি। তিনি তা কমিয়ে দিয়েছেন।
মমতার দাবি, নতুন উডবার্ন ওয়ার্ডে যে পরিকাঠামো রয়েছে, তা ভাল ভাল বেসরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামোকেও টেক্কা দেবে। সোমবারের কর্মসূচি থেকে মোট ১৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং তিনটি প্রকল্পের শিলান্যাস করেন মমতা। যার বেশিরভাগই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত। যার মধ্যে রয়েছে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তৈরি হওয়া হাড়ের ব্যাঙ্কও। এ ছাড়াও খিলাফত কমিটির উদ্যোগে নির্মিত ভবন দূর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
ঘটনাচক্রে, এক বছর আগের সেপ্টেম্বর মাসে স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়েই চাপে পড়েছিল মমতার প্রশাসন। আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে অভূতপূর্ব নাগরিক আন্দোলন দেখেছিল রাজ্য। অগস্ট থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি পর্যন্ত যে আন্দোলন ছিল তীব্র মাত্রায়। সেই পর্বে জুনিয়র ডাক্তারদের সামলাতে মুখ্যমন্ত্রী, মুখ্যসচিবকে রাস্তায় নামতে হয়েছিল। সোমবার এসএসকেএমে মুখ্যমন্ত্রীর মঞ্চেই ছিলেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম। এক বছর আগে তাঁর উপরেও নজিরবিহীন চাপ তৈরি হয়েছিল। তাঁর অপসারণের দাবিতে সরব হয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। আরজি কর আন্দোলন থেমে গিয়েছে। বর্ষপূর্তিতেও সেই ছবি ধরা পড়েনি। এক বছরে ছবিটা যে পুরোপুরি বদলে গিয়েছে তা স্পষ্ট করে দিল মঙ্গলবারের মঞ্চ। এ-ও এক ঘটনাচক্র যে, স্বাস্থ্য দফতরের কর্মসূচিতেই হাজির ছিলেন মমতা।
এসএসকেএমের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের স্বাস্থ্যখাতের আর্থিক উন্নতির কথাও তুলে ধরেন। তিনি জানান, “২০১১ সালে যেখানে স্বাস্থ্যখাতে বাজেট ছিল মাত্র ৩,৬৮৪ কোটি টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১,৩৫৫ কোটি টাকায়। বিনামূল্যে বাচ্চাদের হার্ট অপারেশন হচ্ছে, স্বাস্থ্যসাথী চালু হয়েছে — এগুলো সাধারণ মানুষের জন্য বিশাল উপকার।” মুখ্যমন্ত্রী পরিসংখ্যান দিতে গিয়ে বলেন, রাজ্যের আট কোটির বেশি মানুষ স্বাস্থ্যসাথীতে পরিষেবা নিয়েছেন। দৈনিক সাত হাজার রোগী পরিষেবা গ্রহণ করেন স্বাস্থ্যসাথীতে।
সোমবারের অনুষ্ঠানে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারেন, ‘ব্রিকস নেটওয়ার্কে’ স্থান পেয়েছে এসএসকেএম। শুনেই মঞ্চ থেকে তা উদ্যাপনের জন্য ১০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মমতা।