Advertisement
E-Paper

‘আবার ভাষা-আন্দোলন হবে’! মহানায়ক সম্মানের মঞ্চেও বাংলা ভাষার উপর ‘আক্রমণ’ নিয়ে সরব মুখ্যমন্ত্রী মমতা

উত্তমকুমারের প্রয়াণ দিবসে প্রতি বছর রাজ্য সরকারের তরফে মহানায়কের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। প্রতি বারের মতো এ বছরও ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৫ ১৯:০৫
CM Mamata Banerjee talks about systematic attack on Bengali language at Mahanayak Samman 2025

বৃহস্পতিবার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে ‘মহানায়ক সম্মান’ প্রদানের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

২৪ জুলাই। বাংলা ছায়াছবির ‘ম্যাটিনি আইডল’ উত্তমকুমারের মৃত্যুবার্ষিকী। ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে ছিল ২০২৫ সালের ‘মহানায়ক সম্মান’ প্রদানের অনুষ্ঠান। সংক্ষিপ্ত বক্তৃতার পর সেই মঞ্চ থেকেও বাংলা ভাষার উপর নেমে আসা ‘ভাষা-সন্ত্রাস’ নিয়ে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, ‘‘প্রয়োজনে আবার ভাষা আন্দোলন হবে, কিন্তু মাতৃভাষাকে রক্ষা করতেই হবে।’’ কিংবদন্তি বাঙালি শিল্পীর প্রয়াণ দিবসে বাংলা ভাষাকে তুলে ধরার জন্য এর চেয়ে ভাল মঞ্চ সম্ভবত মমতা আর পেতেন না।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মহানায়ক উত্তমকুমার আমাদের সকলের প্রাণের মানুষ— আমাদের দেশের গর্ব, জাতির গর্ব, সংস্কৃতির গর্ব। প্রতি বছর এই দিনে আমরা তাঁকে স্মরণ করি।’’ উত্তমকুমার-স্মরণে ২০১২ সাল থেকে শিল্পী ও কলাকুশলীদের মহানায়কের স্বীকৃতি দিয়ে আসছে রাজ্য সরকার। সেই সংক্রাম্ত সংক্ষিপ্ত হিসাব দেওয়ার পর বাংলা ভাষার অধিকার নিয়ে ফের সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘ভাষা, সভ্যতা ও সংস্কৃতি জাতির মেরুদণ্ড। শিশুরা যেমন প্রথম ‘মা’ বলতে শেখে, সে রকম আমরা মাতৃভাষায় কথা বলা শিখি। সেই বাংলা ভাষার উপর আজ ভাষা-সন্ত্রাস চলছে। বাংলা ভাষায় যাঁরা কথা বলেন, তাঁদের উপর অত্যাচার হচ্ছে। আর একটা ভাষা আন্দোলন চাই, সমাজকে জাগ্রত করতে হবে।’’

মমতা জানান, সংখ্যার নিরিখে বাংলা ভাষা সারা পৃথিবীতে পঞ্চম স্থানে রয়েছে, এশিয়ায় দ্বিতীয় স্থানে। বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি লোক এই ভাষায় কথা বলেন। অথচ এই ভাষায় কথা বলার জন্য জেলে যেতে হচ্ছে। বাংলা ভাষায় কথা বললেই তাঁকে দেশান্তরী হতে হচ্ছে! বাংলা চলচ্চিত্র ও গানের পাশে দাঁড়ানোর বার্তাও দেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বাংলা ভাষাকে অপমান করবেন না। অন্য ভাষাকে অসম্মান করতে বলছি না, কিন্তু বাংলায় যাঁরা গান গাইছেন, কাজ করছেন, তাঁদের একটু বেশি গুরুত্ব দিন। সব ভাষার সমন্বয়ে ঐক্য ও সম্প্রীতি গড়ে উঠুক।’’

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বাংলায় কথা বলার জন্য একের পর এক পরিযায়ী শ্রমিককে আটক হতে হয়েছে পুলিশের হাতে। কাউকে হেনস্থা করা হয়েছে, কাউকে আবার ‘বাংলাদেশি’ তকমা দিয়ে পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশে। সেই খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন মমতা। ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেও বাংলা ভাষার অধিকার নিয়ে সরব হয়েছিলেন তিনি। তাঁর দাবি, বাংলায় একের পর এক উন্নয়নে ভয় পেয়ে বঞ্চনার রাজনীতি করছে বিজেপি। শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকেও মমতা বলেন, ‘‘বাংলা রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, নজরুলের জন্ম দিয়েছে। বাংলা থেকেই লেখা হয়েছে জাতীয় সঙ্গীত। বাংলা স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে। নবজাগরণ হয়েছে বাংলা থেকেই। সেই ভাষার উপর সন্ত্রাস চলছে কেন? বাংলার মাটি দুর্বৃত্তদের হবে না। বাংলার মানুষকে যদি বাংলা বলার জন্য বাইরে গ্রেফতার করা হয়, তা হলে এই লড়াই দিল্লিতে হবে। দরকারে আবার ভাষা আন্দোলন শুরু হবে।’’ ২৭ জুলাই নানুর দিবস থেকে প্রতি শনি ও রবিবার বাংলা ভাষার উপর আক্রমণের প্রতিবাদে পথে নামার আহ্বানও জানিয়েছিলেন মমতা। তার প্রাক্কালে মহানায়ক সম্মানের মঞ্চ থেকেও আরও এক বার সেই বার্তাই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

উত্তমকুমারের প্রয়াণ দিবসে প্রতি বছর রাজ্য সরকারের তরফে মহানায়কের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। প্রতি বারের মতো এ বছরও ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার বিকেলে সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুখ্যমন্ত্রী। ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং মায়ানমার, বাংলাদেশ ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতেরা। উপস্থিত ছিলেন মহানায়কের নাতি গৌরব চট্টোপাধ্যায়-সহ তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। এ ছাড়াও চলচ্চিত্র ও সঙ্গীতজগতের একঝাঁক তারকা— প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, গার্গী রায়চৌধুরী, মনোময় ভট্টাচার্য, অম্বরীশ ভট্টাচার্য, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত প্রমুখ।

২০১২ সাল থেকে চালু হওয়া এই মহানায়ক পুরষ্কার এখনও পর্যন্ত ২৫ জন পেয়েছেন। এ ছাড়া, ৪১ জন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বকে বর্ষসেরার সম্মান জানানো হয়েছে। ১৪৭ জনকে বিশেষ চলচ্চিত্র পুরষ্কার, ২২ জনকে চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সংবর্ধিত করা হয়েছে। শিল্পজগতে কর্মরত শিল্পী ও কলাকুশলীদের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অভিনেতা-অভিনেত্রী-সহ ৪,৮০০ জন এই বিমার আওতায় পড়েন। এঁদের পরিবারের সদস্যদের ধরলে প্রায় ২০ হাজার মানুষ এই সুবিধা পান। এ ছাড়াও, ফিল্ম ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার ফান্ড থেকে রাজ্য সরকার দুঃস্থ শিল্পী ও কলাকুশলীদের মেয়ের বিয়ের জন্য কিংবা মৃত্যুকালীন সাহায্য প্রদান করে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, সঙ্গীত অ্যাকাডেমি তৈরির কাজও শেষ হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই সেটির উদ্বোধন করা হবে।

২০২৫ সালে মহানায়ক সম্মান পেয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী রূপঙ্কর বাগচী, সঙ্গীতশিল্পী ইমন চক্রবর্তী, অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরী। পুরষ্কার দেওয়া হয়েছে জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত মেকআপশিল্পী সোমনাথ কুন্ডু এবং শিল্প নির্দেশক আনন্দ আঢ্যকে। এ ছাড়াও শ্রেষ্ঠ মহানায়কের খেতাব পেয়েছেন কয়েক দশক ধরে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব গৌতম ঘোষ।

Mahanayak Samman CM Mamata Banerjee Uttam Kumar’s Death Anniversary Dhanadhanyo Auditorium
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy