Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আজ পাহাড় সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী

সরকারি পর্যায়ে সম্পর্ক রাখলেও পরস্পরের উপরে চাপ বজায় রাখার পথেই হাঁটছে তৃণমূল ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালিম্পং সফরের প্রাক্কালে রবিবার দু’দলের কর্মকাণ্ডে তাই স্পষ্ট হয়েছে। তৃণমূলের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরের সময়ে রীতি মেনে পাহাড়ের প্রশাসন তথা জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গ যাতে উপস্থিত থাকেন, সেই ব্যাপারে এ বার তাঁকে অনুরোধ করা হয়নি।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৯
Share: Save:

সরকারি পর্যায়ে সম্পর্ক রাখলেও পরস্পরের উপরে চাপ বজায় রাখার পথেই হাঁটছে তৃণমূল ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালিম্পং সফরের প্রাক্কালে রবিবার দু’দলের কর্মকাণ্ডে তাই স্পষ্ট হয়েছে।

তৃণমূলের তরফে মুখ্যমন্ত্রীর পাহাড় সফরের সময়ে রীতি মেনে পাহাড়ের প্রশাসন তথা জিটিএ প্রধান বিমল গুরুঙ্গ যাতে উপস্থিত থাকেন, সেই ব্যাপারে এ বার তাঁকে অনুরোধ করা হয়নি। আগে যে ভাবে মোর্চার অফিসে লোক পাঠিয়ে, এসএমএস মারফৎ গুরুঙ্গকে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে আনতে তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব উদ্যোগী হয়েছেন, এবার তেমন ঘটেনি। মোর্চার সভাপতি গুরুঙ্গও ২৭ অগস্ট দিল্লিতে চলে গিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতেই মঙ্গলবার কালিম্পংয়ে জিটিএ-রাজ্য দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হবে।

তৃণমূলের দার্জিলিং পাহাড় কমিটির নেতারা অনেকেরই দাবি, মমতার টানে এখনও যে পাহাড়ে ভিড় উপচে পড়ে তা এবারও বোঝানো যাবে। পাহাড় কমিটির মুখপাত্র বিন্নি শর্মা বলেন, “প্রশাসনিক সম্পর্ক ভিন্ন বিষয়। রাজনীতির সঙ্গে তা গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের উন্নয়নে বদ্ধপরিকর বলেই বারবার আসছেন। কিন্তু উন্নয়ন নিয়ে রাজনীতি তিনি বরদাস্ত করেন না।” কমিটির আর এক নেতা রাজেন মুখিয়া জানান, রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান পাহাড়ে পৌঁছলে অতীতে পাহাড়ের প্রশাসনের শীর্ষ প্রতিনিধিই অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “এই রাজনৈতিক শিষ্টাচার বজায় না রাখলে আগামী দিনে কৈফিয়ৎ দিতে হতে পারে।”

বিষয়টি নিয়ে মোর্চার মধ্যেও আলোচনা কম হচ্ছে না। কারণ, অতীতে গোর্খা পার্বত্য পরিষদ ক্ষমতায় থাকার সময়ে যত বার মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে গিয়েছেন, সুবাস ঘিসিঙ্গ তাঁকে স্বাগত জানাতেন। মোর্চা জিটিএ গড়ার পরে গুরুঙ্গও পাহাড়ের সব অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী অন্তত ৩০ বার পাহাড়ে গিয়েছেন। মোর্চা-তৃণমূলের দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার পরেও দু’বার বাদে ফি সফরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন গুরুঙ্গ। গত জুনে মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ে যাওয়ার পরে গুরুঙ্গ গোড়ায় দেখা করতে যাননি। পরে মমতা গুরুঙ্গের জন্মদিনে ফুল-মিষ্টি পাঠান। পর দিনই গুরুঙ্গ তাঁর সঙ্গে দেখা করেন।

চলতি সফরে গুরুঙ্গ একেবারে পাহাড় ছেড়ে বাইরে চলে গেলেন কেন? মোর্চার অন্দরের খবর, এবারের সফরের প্রেক্ষাপট ও এনডিএ-র শরিক হওয়ার বাধ্যবাধকতার জায়গা থেকেই গুরুঙ্গ ‘পূর্ব নির্ধারিত গুরুত্বপূর্ণ কাজ’-এর কথা জানিয়ে পাহাড়ের বাইরে গিয়েছেন। প্রথমে সফরের প্রেক্ষাপটের বিষয়টি দেখা যাক। গত বছর জুলাইয়ের শেষে তেলঙ্গানা গঠনের ব্যাপারে কেন্দ্রের নীতিগত সম্মতি মেলার পরে গুরুঙ্গ পাহাড়ে লাগাতার বন্ধ ডাকেন। তাতে কলকাতা হাইকোর্ট আপত্তি করলে ‘ঘর ভিতরো জনতা’ নামে পাহাড়বাসীকে ঘরবন্দি করার ফতোয়া দেন। তখন লেপচাদের কাছে টানেন মুখ্যমন্ত্রী। গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর মোর্চার ফতোয়া উপেক্ষা করে কালিম্পঙে লেপচা উন্নয়ন পর্ষদ আয়োজিত মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ভিড় উপচে পড়ে। সে দিনই বন্ধ না তুললে চার দফা কড়া পদক্ষেপের দাওয়াই দেন মুখ্যমন্ত্রী। রাতারাতি মোর্চা সুর নরম করে। বন্ধ ওঠে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পাহাড়ে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ তুলেছিল মোর্চা। এক নেতা জানান, এক বছরের মাথায় লেপচা পর্ষদের বর্ষ পূর্তির অনুষ্ঠানের সময়ে মমতাকে যদি দলের সভাপতি নিজে স্বাগত জানান, তবে দলে প্রশ্ন উঠতে পারে। দ্বিতীয়ত, তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাড়তি দাবি আদায়ের সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করছেন গুরুঙ্গ। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা ও কালিম্পঙের বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, “জিটিএ-রাজ্য সরকারের সম্পর্ক ঠিকই রয়েছে। সে জন্য বৈঠকে যোগ দেওয়া হচ্ছে। রাজনীতির বাধ্যবাধকতা আলাদা। সেটা সব দলের নেতানেত্রীরা বোঝেন।”

আজ, সোমবার সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর কালিম্পঙের ডেলোয় পৌঁছনোর কথা। সরকারি সূত্রে খবর, আগামীকাল, মঙ্গলবার জিটিএ-রাজ্য দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন না বলেই আপাতত ঠিক। বুধবার কালিম্পঙে লেপচা উন্নয়ন পর্ষদের বর্ষপূর্তির সভায় যোগ দেবেন তিনি। লেপচা পর্ষদ দাবি করেছে, জিটিএ-র সকলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সভায় মোর্চা কিংবা জিটিএ-র তরফে কেউ হাজির থাকেন কি না, সেটাই দেখার বিষয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE