বিজেপি-শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে বাংলা-বাঙালির হেনস্থার অভিযোগকে সামনে রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ‘ভাষা আন্দোলন’ করছে তৃণমূল কংগ্রেস। এরই মধ্যে ‘হিন্দি দিবস’ উপলক্ষে হিন্দিভাষীদের জন্য রাজ্য সরকার কী কী করেছে, তার বিস্তৃত বর্ণনা দিয়ে শুভেচ্ছা-বার্তা জানালেন মমতা। তাঁর এই বার্তার নেপথ্যে আগামী বিধানসভা ভোটের অঙ্ক আছে বলেই রাজনৈতিক শিবিরের ব্যাখ্যা। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে তৃণমূল নেত্রীর এই বক্তব্য এক দিকে যেমন শাসক শিবিরের অন্দরে কিছুটা বিভ্রান্তি তৈরি করেছে, তেমনই সরব হয়েছে বিজেপিও।
সাম্প্রতিক কালে কোনও ‘হিন্দি দিবসে’ এমন দীর্ঘ বার্তা দিতে দেখা যায়নি বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে। বাংলা ও হিন্দি, দুই ভাষাতেই সমাজমাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী রবিবার বলেছেন, ‘আমরা সব ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ২০১১-র পরে রাজ্যের হিন্দিভাষী মানুষদের উন্নয়নে আমরা একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।’ এই সূত্রেই হিন্দি অ্যাকাডেমি, হিন্দি বিশ্ববিদ্যালয়, হিন্দি-মাধ্যম কলেজ তৈরি, অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত হিন্দিভাষী মানুষের বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা চালু, গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে উন্নত পরিকাঠামো তৈরির মতো নানা কাজের কথা উল্লেখ করেছেন মমতা। দিনটিতে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
বাংলা ভাষার ‘অস্মিতা’র প্রশ্নকে হাতিয়ার করে রাজনীতির ময়দানে এখন সক্রিয় তৃণমূল। তারই মধ্যে ‘হিন্দি দিবসে’র বার্তার প্রেক্ষিতে শাসক দলেরই এক নেতার বক্তব্য, ‘‘বাংলা ভাষার জন্য ধর্মতলায় ধর্না চলছে। একই সঙ্গে আবার হিন্দিভাষীদের মন রাখার জন্য বাড়তি সক্রিয় হলে প্রশ্ন উঠবেই। শুভেচ্ছা জানানো এক জিনিস। কিন্তু এ বার ‘হিন্দি দিবসে’ তার চেয়ে বেশিই করা হয়েছে!’’ তৃণমূলেরই একাংশের আবার ব্যাখ্যা, তৃণমূল নেত্রীর বার্তার পিছনে বড় কারণ নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ভবানীপুর। ওই কেন্দ্রে হিন্দিভাষীর সংখ্যা যথেষ্ট এবং সেখানে এ বার বাড়তি নজর দিচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারীরা।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুও এ দিন কথ্যভাষা হিসেবে হিন্দির বিস্তৃতির তুলে ধরে হিন্দিভাষীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাঁর সংযোজন, ‘ভারতের নানা ভাষার বৈচিত্রকে ঐক্যের সুতোয় গেঁথে দেওয়ার নামই হল ‘হিন্দি’, যা দেশের ঐক্য ও গৌরবের প্রতীক।’ বিজেপি নেতাদের হিন্দি নিয়ে বার্তা অবশ্য স্বাভাবিক। তবে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অগ্নিমিত্রা পালের মন্তব্য, “উনি বছরভর বাংলা-বাঙালির অস্মিতা নিয়ে বলতে গিয়ে হিন্দিভাষীদের আক্রমণ করেন। আর এখন ভোটের দিকে তাকিয়ে হিন্দি দিবসে বড় বড় কথা বলছেন!” আর বিজেপি ও তৃণমূলকে এক পঙ্ক্তিতে রেখে সিপিএম প্রভাবিত ‘পশ্চিমবঙ্গ হিন্দি সমাজে’র রাজ্য সভাপতি হেমন্ত প্রভাকরের বক্তব্য, “ভোটের দিকে তাকিয়ে তৃণমূল-বিজেপি, দু’টো দলই বাংলাভাষী-হিন্দিভাষী বিভাজন করে। আদতে মানুষের জন্য কেউই কিছু করে না।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)