Advertisement
E-Paper

১১.৯... শীতলতম কলকাতা, শেষ পৌষে মার, কাঁপাল সংক্রান্তি

শনি-সন্ধ্যার ঘড়ি বলছে সাড়ে ছ’টা। যশোর রোডের রেস্তোরাঁয় বসে সদ্য-আসা কাবাবে ছোট্ট কামড় দিয়ে বছর ত্রিশের ইঞ্জিনিয়ার বলছিলেন, ‘‘আজ সত্যিই কাবাবের দিন ভাই! এর পর বাইরে গিয়ে দাদুর ঠেলাগাড়ি থেকে চা। তার পর ধীরেসুস্থে বাড়ি।’’

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৪
মায়ের কোলে গুটিসুটি। শনিবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

মায়ের কোলে গুটিসুটি। শনিবার সুমন বল্লভের তোলা ছবি।

শনি-সন্ধ্যার ঘড়ি বলছে সাড়ে ছ’টা। যশোর রোডের রেস্তোরাঁয় বসে সদ্য-আসা কাবাবে ছোট্ট কামড় দিয়ে বছর ত্রিশের ইঞ্জিনিয়ার বলছিলেন, ‘‘আজ সত্যিই কাবাবের দিন ভাই! এর পর বাইরে গিয়ে দাদুর ঠেলাগাড়ি থেকে চা। তার পর ধীরেসুস্থে বাড়ি।’’

— আজ এত ঠান্ডা বলে?

‘‘নয়তো কী? ওয়েদার রিপোর্ট দেখুন, কলকাতা আজ কোল্ডেস্ট। ইলেভেন পয়েন্ট নাইন! সকালে পৌষ সংক্রান্তির পাটিসাপ্টা, এখন কাবাব!’’

সকালের কথাই ধরা যাক। রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে পাটিসাপ্টায় পুর ভরতে ভরতে দমদমের মাঝবয়সি গিন্নি বলছিলেন, ‘‘গ্যাসের পাশে থাকলে একটু আরাম লাগছে। বড্ড ঠান্ডা। কিন্তু উপায় নেই। বাড়িশুদ্ধু সবার বায়নাক্কা— পিঠে খাবো।’’

কিন্তু বেছে বেছে পৌষ সংক্রান্তিটাই শহরের শীতলতম দিন! ইডেনে বাঙালির টেস্ট সেঞ্চুরির মতো এমন আদর্শ সমাপতন খুব বেশি মনে করা যাচ্ছে না। মরসুমের গোড়া থেকেই এ বার শীতের দেখা ছিল না। একেবারে পৌষের শেষ সপ্তাহে গা-ঝাড়া দিয়ে এগোতে শুরু করেছিল শীতের ট্রেন! তার পরে অবশ্য শীতের মেজাজটা ছিল মোটামুটি ‘পাওয়ার প্লে’-র। ফল— দ্রুত পারদ পতন। এবং তার জেরে মহানগর তথা রাজ্যে এ দিন শীত যে শুধু জাঁকিয়ে বসেছে তা-ই নয়, গত পাঁচ বছরের শীতলতম মকর সংক্রান্তির রেকর্ডটাও হয়ে গিয়েছে। কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এ দিন থিতু হয়েছে ১১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এমনকী সর্বোচ্চ তাপমাত্রাটাও (২২.১) স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ ডিগ্রি কম।

সংক্রান্তির আধ দশক

কবে কত*

২০১৩ ১২.০

২০১৪ ১৩.৫

২০১৫ ১৩.৬

২০১৬ ১৫.৪

২০১৭ ১১.৯

আবহবিদেরাও বলে দিয়েছেন, আপাতত শনিবারই হল রাজ্যে এ বছরের শীতলতম দিন। সেই সঙ্গে তাঁদের আশ্বাস, আজ, রবিবার মাঘের পয়লায় পারদ আরও নামতে পারে। সংক্রান্তির মজা বাড়িয়েছে শনি-রবির ছুটি। কেউ বাড়িতে বসিয়েছেন পানাহারের আসর। কেউ ভোরেই পাড়ি দিয়েছেন দিঘা বা শান্তিনিকেতন।

জেলাও তো কম খেল্ দেখাচ্ছে না। বীরভূম, পুরুলিয়ায় এ দিন শৈত্যপ্রবাহ (সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে ৫ ডিগ্রি কম) বয়েছে। অন্য জেলাগুলোতেও কনকনে ঠান্ডা। কোচবিহারে রাতের তাপমাত্রা নেমেছে ৪.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ডায়মন্ড হারবার, দিঘায় রাতে ১০ ডিগ্রির কাছাকাছি। সারা রাজ্যেই দিনভর ছিল নরম রোদ আর কনকনে উত্তুরে হাওয়া। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস বলেছেন, ‘‘রবিবার তাপমাত্রা আরও কিছুটা নামবে। বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমানে শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।’’ হাওয়া অফিসের খবর, উত্তরবঙ্গেও সেই সম্ভাবনা রয়েছে পুরোমাত্রায়।

প্রশ্ন এখানেই। এমন যে হবে, কে ভেবেছিল ২০১৬-র রোদ-জ্বলা ডিসেম্বরে? উল্টে বিখ্যাত কবিতা ধার করে দু’-এক জন বলেছিলেন, ‘শীতকাল কবে আসবে, কলকাতা?’ আশঙ্কা ছিল পুরোমাত্রায়, গত বছরের মতো এ বারের পৌষ সংক্রান্তিতেও বিনবিন করে ঘামতে হবে না তো! আশঙ্কা অকারণ নয়। ২০১৬-য় পৌষ-শেষের দিনটায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.৪ ডিগ্রি! ২০১৫— ১৩.৬ ডিগ্রি। সেখানে এ দিন হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় গঙ্গাসাগরে ডুব দিয়ে আমোদিত পুণ্যার্থীরা।

এমন ভেল্কি যদি দেখানোরই ছিল, তা হলে প্রথমে কেন মুখ থুবড়ে পড়েছিল শীত?

শনিবারের পারদ

কোথায় কত*

• কোচবিহার ৪.৭ (-৪)

• জলপাইগুড়ি ৬.৪ (-৪)

• শ্রীনিকেতন ৬.৪ (-৬)

• আসানসোল ৮.৪ (-৩)

• বাঁকুড়া ৮.৫ (-৩)

• ডায়মন্ড হারবার ১০.৪ (-৪)

• কলকাতা ১১.৯ (-২)

* সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বন্ধনীতে স্বাভাবিকের থেকে কত কম।

বিজ্ঞানীদের মতে কারণটা হল, কঠিন বল ও কঠিন পিচ। ডিসেম্বরের গোড়াতেই এসেছিল পরপর দু’টো ঘূর্ণিঝড়। মাসের মাঝামাঝি সে বাধা কাটলেও পশ্চিমী ঝঞ্ঝার আকাল চলছিল। শীত পড়তে গেলে ঝঞ্ঝার একান্ত প্রয়োজন। ভূমধ্যসাগরীয় এলাকা থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা, ভারী হাওয়া (পশ্চিমী ঝঞ্ঝা) কাশ্মীর দিয়ে এ দেশে ঢুকে উত্তর ভারতের পাহাড়ে তুষার আর বৃষ্টি নামায়। তার জেরে উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রবল ঠান্ডা পড়ে। সেখান থেকে উত্তুরে হাওয়া শীত নিয়ে আসে এ রাজ্যে।

পৌষের শেষে পরপর জোরালো ঝঞ্ঝা ঢুকেছে এ দেশে। পাহাড়ে তুষারপাতের পরে উত্তর-পশ্চিম ভারতেও শীত পড়েছে জাঁকিয়ে।

ঝঞ্ঝা কেটে যেতেই উত্তুরে হাওয়া কনকনে ঠান্ডা নিয়ে ঢুকছে এ রাজ্যে। গত কয়েক বছরে পৌষের শেষে ছিল না শীতের এমন অনুকূল পরিস্থিতি।

আম বাঙালির এখন কৌতূহল— এই শিহরণ আর ক’দিন? আবহবিদদেরা আশ্বস্ত করছেন, তাপমাত্রার সামান্য হেরফের হয়তো হবে। কিন্তু আগামী দিন তিনেক বাংলার প্যাভিলিয়ন ছাড়ছে না শীত।

Coldest day Makar sankranti
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy