Advertisement
E-Paper

পুলিশ যদি আগেই গুলি চালাত, একশো লোকের প্রাণ যেত: মমতা

রবিবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট থেকে যে ভাবে পর পর দু’দিন তাণ্ডব ছড়িয়েছে বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে, তার পিছনে পুলিশ-প্রশাসনের দক্ষতার অভাব প্রকট হয়েছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩৭
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

কোমর বাঁধল পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু বড় দেরিতে।

তত ক্ষণে উত্তর ২৪ পরগনার এসপি, অতিরিক্ত এসপি জখম হয়েছেন হামলাকারীদের মারে। ভাঙচুর করে পোড়ানো হয়েছে পুলিশের গোটা বিশেক গাড়ি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা অসংখ্য গাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে উন্মত্ত জনতা। ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে অজস্র দোকানে। গুরুতর জখম অন্তত ৮ জন। ৪ জনকে পাঠানো হয়েছে কলকাতায়। মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলনে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও স্বীকার করতে হয়েছে, ‘‘পুলিশেরও কোথাও ভুল আছে। পুলিশকে কাল (সোমবার) থেকে বলছি, প্রথমেই ফেসবুক ব্লক করে দেওয়া উচিত ছিল।’’

রবিবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট থেকে যে ভাবে পর পর দু’দিন তাণ্ডব ছড়িয়েছে বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে, তার পিছনে পুলিশ-প্রশাসনের দক্ষতার অভাব প্রকট হয়েছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের। তাঁদের বক্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভর করে যে গুজব আগুনের থেকে দ্রুত ছড়াচ্ছে, তা বুঝে উঠতে পারেনি পুলিশ। পাশাপাশি, মাঠে নেমে পরিস্থিতি সামাল দিতেও ব্যর্থ তারা।

নিচু তলার পুলিশ কর্মীরা অবশ্য এ জন্য বড় কর্তাদেরই দুষছেন। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘কোথাও গণ্ডগোলের খবর এলে ছুটে যাচ্ছি আমরা। আর মার খাচ্ছি। হাজার হাজার জনতার সামনে কয়েকজন লাঠি হাতে পুলিশ কর্মী। গুলি চালানোর অনুমতিটুকু নেই। দুষ্কৃতীরা তো বুঝেই গিয়েছে, এরা গুলি চালাবে না। কাঁদানে গ্যাসের সেল হাতে নিলে রে রে করে তেড়ে আসছে। এদের রুখব কী করে!’’

আরও পড়ুন:ফেসবুক পোস্ট থেকেই শুরু তাণ্ডব

মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিন জানান, পুলিশ যদি আগেই গুলি চালাত, একশো লোকের প্রাণ যেত। কিন্তু এক পুলিশ কর্তার আক্ষেপ, ‘‘গুলি চালাই না চালাই, বন্দুক উঁচিয়ে তেড়ে যাওয়ার নির্দেশটুকু তো দেওয়া যেত!’’

আধা সামরিক বাহিনীকে কাজে লাগাতেও পুলিশ কর্তারা ব্যর্থ বলে অভিযোগ। এক পুলিশ কর্মী এ দিন বলেন, ‘‘সোমবার থেকে থানায় এসে বসে আছে র‌্যাফ, কমব্যাট ফোর্স। তাদের এলাকাতে রুটমার্চটুকু করতে পাঠাচ্ছে না কেউ। বড়কর্তারা কোনও নির্দেশ দিচ্ছেন না। শুধু একটাই রেকর্ড বাজাচ্ছেন, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।’’

অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করার খবরটাও ঠিকমতো প্রচার করতে পারেনি পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘বাদুড়িয়ার যে যুবক ফেসবুকে পোস্ট করেছিল, তাকে রবিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু সে কথাটা আমরা ঠিক মতো বোঝাতেই পারলাম না জনতাকে।’’ ওই পুলিশ কর্তার মতে, যদি কথাটা বিশদে প্রচার করা যেত, কিংবা প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা, জনপ্রতিনিধিদের ডেকে আলোচনায় বসা যেত, তা হলে হয় তো এ ভাবে গুজব ছড়াত না।

গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে শান্তি বৈঠক বা সর্বদল বৈঠকও ডাকা হয়নি সোম-মঙ্গলবার। বাদুড়িয়া গোলমালের উৎসস্থল। সেখানকার প্রবীণ কংগ্রেস নেতা কাজি আবদুর গফ্‌ফরকেও ডাকা যেত পারত বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তারা। গফ্‌ফর সাহেব অশক্ত, বৃদ্ধ হলেও এলাকার মানুষের উপরে তাঁর প্রভাব এখনও যথেষ্টই। তাঁর ছেলে কাজি আবদুর রহিম দিলু স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। কংগ্রেস নেতা। প্রশাসনের তরফে ডাকা হয়নি তাঁকেও। কয়েক জন ছোটখাট তৃণমূল নেতাকে বৈঠকে ডেকে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু ঘটনা কী ভয়াবহ দিকে গড়াতে পারে, তা আঁচই
করতে পারেনি।

এই ভাবেই কেটে গিয়েছে সোম ও মঙ্গলবার। মঙ্গলবার রাত থেকে অবশ্য আধা সামরিক বাহিনী ঢুকতে শুরু করেছে বসিরহাটের নানা প্রান্তে। সন্ধ্যার পরে জেলা পরিষদের সভাধিপতি রেহেনা বিবি, জেলাশাসক অন্তরা আচার্য, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল
সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-সহ প্রশাসনের কর্তারা বৈঠকে বসেন। বসিরহাট মহকুমায় ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

vandalism Combat force Darjeeling
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy