মহিলাদের লেগিন্স জাতীয় আঁটো পোশাক পরা নিয়ে আপত্তি এবং তা দেখে তাঁর উত্তেজনার কথা ফেসবুকে জানানো শুধু নয়। জলঙ্গির ২৩ নম্বর উদয়নগর প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৌশিক সরকার তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন বলে পুলিশের কাছেও অভিযোগ দায়ের করেছেন এক শিক্ষিকা।
গত ২১ ডিসেম্বর ওই অভিযোগ নেয় জলঙ্গি থানার পুলিশ। কিন্তু তার পরেও কার্যত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ইতিমধ্যে কৌশিকের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে দু’টি সংগঠনের লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে বহরমপুর থানায়। তারা সেগুলি জলঙ্গি থানায় পাঠিয়ে দিয়েছিল। তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা রুজু করার জন্য জলঙ্গি থানা তা ডোমকল থানায় পাঠিয়েছে।
ইতিমধ্যে অসুস্থতার কথা জানিয়ে শুক্রবার রাতে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হন কৌশিক। হাসপাতাল সূত্রের খবর, হৃদ্যন্ত্রে গোলমাল মেলায় শনিবার বিকেলে তাঁকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। কেন অশালীন আচরণের মামলা রুজু হওয়া সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি জলঙ্গি থানার ওসি দেবাশিস সরকার। এই মামলার তদন্তকারী অফিসার, ডোমকল থানার আইসি নীহাররঞ্জন রায় আবার দাবি করেন, ‘‘গোপনীয়তার স্বার্থে এ নিয়ে কিছু বলা যাবে না।’’
২৩ নম্বর উদয়নগর প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা পুলিশ ও মুর্শিদাবাদ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করাতেই কৌশিক তাঁর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেন। প্রসঙ্গত, ওই শিক্ষিকার লেগিন্স পরে আসা নিয়েই আপত্তি তুলেছিলেন কৌশিক। পরে এ নিয়ে ফেসবুকেও একাধিক মন্তব্য করেন তিনি, যা শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। এ নিয়ে দু’টি মহিলা সংগঠনের দুই সহযোগী সম্পাদক সংহিতা দেব ও আলপনা রায়চৌধুরী বহরমপুর থানা ছাড়াও জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের সভাপতি তথা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক নীহারকান্তি ভট্টাচার্যের কাছে অভিযোগ করেছেন শুক্রবারই। নীহারকান্তি বলেন, ‘‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।’’
ঘটনাচক্রে, কৌশিক তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের সদস্য। জেলা পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, কৌশিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলেও ঢিমেতালে তদন্ত করার জন্য উপরমহল থেকে চাপ আছে। যদিও প্রায় সকলেই মুখে কুলুপ আঁটায় এই দাবির সত্যাসত্য নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। কৌশিকের সঙ্গে শুক্রবার যা-ও বা কথা বলা গিয়েছিল, এ দিন আর তা সম্ভব হয়নি। তাঁর মোবাইল পোন সারা দিন বন্ধই ছিল।
তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি শুভজিৎ সিংহ বলেন, ‘‘সংগঠনের প্রাথমিক তদন্তে ওঁর দোষ প্রমাণিত হয়েছে। মহকুমা স্তরের নেতৃত্বকে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে বলেছি। যদি তাতেও অপরাধ প্রমাণ হয়, বিভাগীয় তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারি স্তরে আবেদন করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy