E-Paper

পরীক্ষকই পাল্টে বেনিয়ম

চিকিৎসক মহলের অভিযোগ, অস্বচ্ছতা রয়েছে ১৫ নম্বরের ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া নিয়েও। কারণ, ইন্টারভিউ নেওয়া সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা পরীক্ষকের হাতে রয়েছে মাত্র ৫ নম্বর।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:১০
—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

ইন্টারভিউ নিতে গিয়ে এক জন পরীক্ষার্থীকেও প্রশ্ন করার সুযোগ মিলল না। দিতে পারলেন না নম্বরও। বরং, ঘণ্টাখানেক ইন্টারভিউ কক্ষে শুধু বসে থাকতে হল সিনিয়র চিকিৎসক পরীক্ষককে। বদলে পাশে বসে অন্য বিভাগের জুনিয়র এক চিকিৎসক ইন্টারভিউ নিলেন এবং নম্বর বসালেন!

এমনই অভিযোগ উঠে এসেছে হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের (এইচআরবি) ইন্টারভিউকে ঘিরে। রাজ্যে মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে ৬২১ জনকে নিয়োগের প্রক্রিয়াকে ঘিরে প্রথম থেকেই বেনিয়ম-অস্বচ্ছতার অভিযোগ ছিল। তার মধ্যে, সিনিয়র চিকিৎসককে পরীক্ষক হিসেবে নিয়ে গিয়ে স্রেফ বসিয়ে রাখার ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে। চিকিৎসকদের একাংশের প্রশ্ন, “এই ঘটনার পরেও কি বলা যায়, নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ?” বিষয়টি জানতে ওই সিনিয়র চিকিৎসককে ফোন এবং মেসেজ করা হলে তিনি উত্তর দেননি।অন্য সিনিয়র চিকিৎসকেরা বলছেন, “কে আর ঝামেলায় জড়াতে চায়?মুখ খুললেই প্রভাবশালীদের রোষে পড়তে হবে।”

চিকিৎসক মহলের অভিযোগ, অস্বচ্ছতা রয়েছে ১৫ নম্বরের ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া নিয়েও। কারণ, ইন্টারভিউ নেওয়া সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা পরীক্ষকের হাতে রয়েছে মাত্র ৫ নম্বর। বাকি ১০ নম্বর ‘এইচআরবি’-র প্রতিনিধিদের হাতে। সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস’-এর তরফে চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, “স্বচ্ছতার নামে প্রহসন। এইচআরবি-র প্রতিনিধিদের হাতে ১০ নম্বর কেন? তাঁরা কি সবজান্তা? যদি তা-ই হয়, তা হলে ইন্টারভিউ নেওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞদের প্রয়োজন ছিল না।”

ইন্টারভিউয়ে ১৫ নম্বর দিতে হচ্ছে ট্যাবে। নম্বর দেওয়া মাত্রই তা লক হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যক্ষ ভাবে বিষয়টি স্বচ্ছ হলেও, নম্বর বিন্যাসেই অস্বচ্ছতা বা স্বজনপোষণের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে বলে অভিযোগ চিকিৎসকদের। তাঁদের প্রশ্ন, মাত্র পাঁচ নম্বরের মাপকাঠিতে যোগ্যতা বিচার হবে কী ভাবে? আবার, এইচআরবি-তে যে সমস্ত প্রতিনিধি রয়েছেন তাঁরা সকলে চিকিৎসক নন। ১০ নম্বরের মূল্যায়ন তাঁরা কী ভাবে করছেন, উঠছে প্রশ্ন।

গোড়ায় পুরো সই না থাকা, আপলোড করা নথি অস্পষ্ট-সহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে একাধিক আবেদন বাতিল করা হয়েছিল। পরে চিকিৎসকদের চাপে নতুন করে আবেদনের জন্য পোর্টাল খোলা হয়। গত ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ইন্টারভিউ। ইন্টারভিউয়ে ‘ডোমেন এক্সপার্ট’ হিসেবে বিভিন্ন বিভাগের ৯২ জন শিক্ষক-চিকিৎসকের নাম প্রকাশ করা হয়েছিল। অভিযোগ, তাতে দেখা যায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসক না হওয়া সত্ত্বেও অনেককে সেই বিভাগের বিশেষজ্ঞ হিসেবে রাখা হয়েছে। আবার, দুর্নীতির কারণে মেডিক্যাল কলেজের গুরুত্বপূর্ণ পদ খোয়ানো চিকিৎসক, আর জি কর কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের মুখোমুখি হওয়া চিকিৎসক, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দুর্নীতিতে অভিযুক্ত চিকিৎসকের নাম রয়েছে বিশেষজ্ঞের তালিকায়।

চিকিৎসক মহলের আপত্তিতে পরে কয়েক জন সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের নাম তালিকায় যুক্ত করা হলেও তা প্রকাশ্যে আনা হয়নি বলে অভিযোগ। এক চিকিৎসকের কথায়, “নাম যুক্ত করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু ওই অতি সিনিয়র চিকিৎসকের মতো হয়তো বাকিদেরও বসিয়ে রেখে, ইন্টারভিউ নিচ্ছেন অন্য কেউ।” আর জি কর আন্দোলনের সময়ে ‘এইচআরবি’-র বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ এবং অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদে নেমেছিলেন চিকিৎসকদের বড় অংশ। তার পরেও চেনা ছবির বদল হয়নি।

হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের চেয়ারম্যান চিকিৎসক-বিধায়ক সুদীপ্ত রায় অবশ্য বলেন, “অত্যন্ত স্বচ্ছতা বজায় রেখে, পুরো প্রক্রিয়া ক্যামেরার নজরদারিতে হচ্ছে। কারও কোনও অভিযোগ থাকলে লিখিত জানাক।” তাঁর দাবি, “কার হাতে পাঁচ নম্বর আর কার হাতে ১০ নম্বর, এ তো বাইরের কারও জানার কথা নয়। ইন্টারভিউ ১৫ নম্বরের হচ্ছে। তাতে যোগ্যতার নিরিখেই নম্বর দেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরাই পরীক্ষক হিসেবে ইন্টারভিউ নিচ্ছেন।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Recruitment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy