স্বামীকে খুনের ঘটনায় সাত জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেন বাঁকুড়ার রাইপুরের নিহত তৃণমূল নেতা অনিল মাহাতোর স্ত্রী সুলেখা। শুক্রবার রাতে থানায় অভিযোগ জানান তিনি। তৃণমূলে অনিল-ঘনিষ্ঠদের দাবি, অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজন দলে অনিলবাবুর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর বলে পরিচিত। তবে ওই ঘটনায় একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গড়লেও পুলিশ শনিবার রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার রাতে রাইপুরের মটগোদায় দলীয় অফিসের বাইরে চার আততায়ী গুলি চালিয়ে খুন করে অনিলবাবুকে। খুনের পিছনে দলে স্বামীরই বিরুদ্ধ গোষ্ঠী রয়েছে বলে শুক্রবারই অভিযোগ তুলেছিলেন সুলেখা মাহাতো। কিন্তু এ দিন তিনি অভিযুক্তদের নাম জানাতে চাননি। পুলিশেরও মুখে কুলুপ। যদিও তৃণমূলের জেলা নেতা তথা বাঁকুড়ার সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তীর দাবি, “অভিযুক্তদের কেউই তৃণমূল করে না। তারা অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত।” তিনি জানিয়েছেন, আজ রবিবার দুপুরে মটগোদায় দলের তরফে আয়োজিত শোকসভায় হাজির থাকতে পারেন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
অরূপবাবুর দাবি মানছেন না রাইপুরে অনিল-অনুগামী তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তাঁদের অনেকে দাবি করছেন, অভিযুক্তদের নাম যাতে সামনে না আসে, সে ব্যাপারে দলের উপরতলা থেকে নির্দেশ রয়েছে। তবে তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অনিলবাবুর সঙ্গে দলের রাইপুর ব্লক সভাপতি জগবন্ধু মাহাতোর বিরোধ লুকনো ছিল না। গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতিতে সভাপতি ঠিক করা নিয়ে বিবাদ, বিভিন্ন কমিটিতে কারা জায়গা পাবেন তা নিয়ে মতান্তর, পঞ্চায়েত ভোটে টিকিট দেওয়া নিয়ে মন কষাকষি লেগেইছিল। মারপিটও হয়েছে দু’পক্ষে। সেই সূত্রেই খুনে অভিযুক্তদের তালিকায় জগবন্ধু-শিবিরের লোকেরা রয়েছে বলে দাবি তৃণমূলে অনিল-অনুগামীদের।
যদিও ঘটনার সঙ্গে দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের কোনও সম্পর্ক নেই বলে এ দিনও দাবি করেছেন জগবন্ধুবাবু। তিনি বলেন, “আমিও চাই, দোষীরা ধরা পড়ুক। প্রয়োজনে সিআইডি-কে দিয়ে তদন্ত করানোর জন্য রাজ্য নেতৃত্বকে লিখিত ভাবে জানানোর কথা ভাবছি।” দলে জগবন্ধুর ‘কাছের’ লোকেদের একাংশের দাবি, ‘‘অনিলদার সঙ্গে জগবন্ধুদার বিরোধের সুযোগ নিয়ে অন্য কেউ ফায়দা তুলতে চাইছে কি না, সেটা দেখা দরকার। তদন্ত এগোলেই তা স্পষ্ট হবে।’’
তদন্ত এগোতে এসডিপিও-র (খাতড়া) নেতৃত্বে একটি বিশেষ দল গড়েছে বাঁকুড়া পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেছেন, ‘‘তদন্ত চলছে। তবে খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।’’ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাতে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়ি থেকে সন্দেহজনক তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। যদিও পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে অনিলবাবুর সরকারি দেহরক্ষীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। পুলিশ সুপার জানান, হামলার সময় গরহাজির থাকাতেই ওই ‘সাসপেনশন’। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, স্ত্রীর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ওই দেহরক্ষী দিন কয়েকের জন্য বাড়ি গিয়েছিলেন। সেই ফাঁকেই হামলা হয়। এ দিন অনিলবাবুর ঘনিষ্ঠ রাইপুরের ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি রাজকুমার সিংহকে দেহরক্ষী দেয় পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy